দালালের অত্যাচারে লিবিয়ায় ভৈরবের যুবকের মৃত্যু। পরিবারের কান্না। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:১৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ১০৪ Time View

৫ এপ্রিল,  নিজস্ব  প্রতিনিধি:

দালালের অত্যাচারে লিবিয়ায়  ভৈরবের এক যুবকের মৃত্যুর খবর  পাওয়া গেছে। গত  ৩০ মার্চ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় মৃত্যুর খবর পায় নিহতের পরিবার। নিহত যুবক পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার   মৃত নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৮)। লিবিয়ায় নিহত সোহাগের রুমমেট দেলোয়ারের মাধ্যমে খবর পেয়ে তথ্য নিশ্চিত করেন নিহতের বড় ভাই সুজন মিয়া।

আজ শনিবার  নিহতের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তার মা ও স্ত্রী কাঁদছে। ছেলের মরদেহ ফিরে পেতে বারবার র্মূচায় যাচ্ছেন মা রওশনারা বেগম। চিৎকার দিয়ে উঠছেন স্ত্রী লিজা বেগম। তিনিও বারবার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। এদিকে মৃত্যুর খবরে কালিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকা ও নিহতের পরিবারের মধ্যে শোকের মাতম চলছে।  

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পরিবারে তিন ভাইদের মধ্যে সোহাগ দ্বিতীয়। সোহাগের বড় ভাই সুজন ইতালী প্রবাসী। সোহাগ দীর্ঘ ৮ বছর কাতারে অবস্থান করছিলেন। ১ বছর আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। দেশে থেকেই নরসিংদীর বেলাবো’র বারৈচা এলাকার সেন্টু মিয়ার মাধ্যমে ১৬ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ইউরোপের দেশ ইতালী যেতে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সুজন মিয়া। ১ মাসের মধ্য  ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁছার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৭ মাস যাবত তাকে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাবে সোহাগকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করে আসছে দালাল চক্র। এ অত্যাচারের ফলে কয়েকদিন  আগে সে  অসুস্থ হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করেনি দালালরা। গত  ৩০শে মার্চ রাত ২টায় সে গুরুতর অসুস্থ হলে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নিহতের ভাই সুজন মিয়া বলেন, আমি ইতালীতে দীর্ঘদিন যাবত অবস্থান করছি। আমার ভাই কাতারে ভালো অবস্থানে ছিলো।  ৭ মাস আগে দালালের সাথে ১৬ লক্ষ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া যায় আমার ভাই। প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার পর ১ মাস পর ইতালীতে পৌঁছানোর কথা বলে পুরো ১৬ লক্ষ টাকা নেই আমার কাছ থেকে। কিন্তু টাকা দেয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আমার ভাইকে ইতালীতে পাঠায়নি। দালালের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলেও  যোগাযোগ করতে পারিনি। এদিকে আমার ভাইকে না খাইয়ে বিভিন্ন সময় মারধোর করে ও নানানভাবে অত্যাচারে করে দালাল চক্র। আমার ভাই অসুস্থ হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা করায়নি।  চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই সেখানে  মৃত্যুবরণ করেছে।

এ বিষয়ে নিহতের স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, দালালের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেছে। আমি আমার তিন মাসের সন্তান নিয়ে কোথায় যাব। আমার পরিবারের কি হবে।

এ ব্যাপারে দালাল সেন্টু মিয়ার সাথে কথা বলতে তার  মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

দালালের অত্যাচারে লিবিয়ায় ভৈরবের যুবকের মৃত্যু। পরিবারের কান্না। 

Update Time : ০৯:১৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫

৫ এপ্রিল,  নিজস্ব  প্রতিনিধি:

দালালের অত্যাচারে লিবিয়ায়  ভৈরবের এক যুবকের মৃত্যুর খবর  পাওয়া গেছে। গত  ৩০ মার্চ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় মৃত্যুর খবর পায় নিহতের পরিবার। নিহত যুবক পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার   মৃত নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৮)। লিবিয়ায় নিহত সোহাগের রুমমেট দেলোয়ারের মাধ্যমে খবর পেয়ে তথ্য নিশ্চিত করেন নিহতের বড় ভাই সুজন মিয়া।

আজ শনিবার  নিহতের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তার মা ও স্ত্রী কাঁদছে। ছেলের মরদেহ ফিরে পেতে বারবার র্মূচায় যাচ্ছেন মা রওশনারা বেগম। চিৎকার দিয়ে উঠছেন স্ত্রী লিজা বেগম। তিনিও বারবার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। এদিকে মৃত্যুর খবরে কালিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকা ও নিহতের পরিবারের মধ্যে শোকের মাতম চলছে।  

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পরিবারে তিন ভাইদের মধ্যে সোহাগ দ্বিতীয়। সোহাগের বড় ভাই সুজন ইতালী প্রবাসী। সোহাগ দীর্ঘ ৮ বছর কাতারে অবস্থান করছিলেন। ১ বছর আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। দেশে থেকেই নরসিংদীর বেলাবো’র বারৈচা এলাকার সেন্টু মিয়ার মাধ্যমে ১৬ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ইউরোপের দেশ ইতালী যেতে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সুজন মিয়া। ১ মাসের মধ্য  ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁছার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৭ মাস যাবত তাকে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাবে সোহাগকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করে আসছে দালাল চক্র। এ অত্যাচারের ফলে কয়েকদিন  আগে সে  অসুস্থ হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করেনি দালালরা। গত  ৩০শে মার্চ রাত ২টায় সে গুরুতর অসুস্থ হলে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নিহতের ভাই সুজন মিয়া বলেন, আমি ইতালীতে দীর্ঘদিন যাবত অবস্থান করছি। আমার ভাই কাতারে ভালো অবস্থানে ছিলো।  ৭ মাস আগে দালালের সাথে ১৬ লক্ষ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া যায় আমার ভাই। প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার পর ১ মাস পর ইতালীতে পৌঁছানোর কথা বলে পুরো ১৬ লক্ষ টাকা নেই আমার কাছ থেকে। কিন্তু টাকা দেয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আমার ভাইকে ইতালীতে পাঠায়নি। দালালের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলেও  যোগাযোগ করতে পারিনি। এদিকে আমার ভাইকে না খাইয়ে বিভিন্ন সময় মারধোর করে ও নানানভাবে অত্যাচারে করে দালাল চক্র। আমার ভাই অসুস্থ হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা করায়নি।  চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই সেখানে  মৃত্যুবরণ করেছে।

এ বিষয়ে নিহতের স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, দালালের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেছে। আমি আমার তিন মাসের সন্তান নিয়ে কোথায় যাব। আমার পরিবারের কি হবে।

এ ব্যাপারে দালাল সেন্টু মিয়ার সাথে কথা বলতে তার  মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।