২০, এপ্রিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:
পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান শিল্পী বেগম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। পরে তাঁর পেট কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আজ রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে কাঁতারাচ্ছেন অসুস্থ শিল্পী বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৭ এপ্রিল ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতালে।
রোগীর স্বজনরা আজ রোববার সকালে যুগান্তরকে জানায়, ভুক্তভোগী নারী রোগী নরসিংদীর পটিয়া গ্রামের দারোগা বাড়ির প্রবাসী মাসুম মিয়ার স্ত্রী। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে গত ১৬ এপ্রিল বুধবার সকালে ভর্তি হন এই হাসপাতালে । পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানায় তাঁর পেটে বড় ধরনের টিউমার রয়েছে। এটি বেশি জটিল হয়ে গেছে, তাই দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে শিল্পী বেগমের পেটে অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার শুরু হয়, কিন্তু অপারেশন শেষ না করেই চিকিৎসক তাঁর পেট সেলাই করে বেডে স্থানান্তর করেন। বিষয়টি প্রথমে রোগীর স্বজনরা বুঝতে পারেনি। পরে জানানো হয় অপারেশন শেষ না করেই তাকে বেডে আনা হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিল্পী বেগম।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রোগী শিল্পী বেগম বলেন, তাঁর পেটে ব্যথা অনুভব হলে নরসিংদীর একটি হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা কমিয়ে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতালে আসেন তিনি। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে জানান রোগ বেশি জটিল, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচার শুরু করে বুঝতে পারেন তারা পারবেন না। পরে পেট সেলাই করে বলে দেন দুই-এক মাস বাসায় থেকে একটু সুস্থ হয়ে ঢাকায় গিয়ে অপারেশন করাতে হবে।
এঘটনা শুনে তাঁর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে চিকিৎসাটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা। এর আগে ভুল স্বীকার করতে চাননি।
রোগীর মেয়ে তানজিনা বলেন, ‘অপারেশন করে রোগী যদি ভালো না হয় তাহলে তা করা হলো কেন? অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর আমাদের বলা হয় বাসায় নিয়ে যেতে এবং দুই-এক মাস বাসায় রেখে কিছুটা সুস্থ করে ঢাকার কোন ভাল হাসপাতালে অপারেশন করাতে। পরে আমাদের চাপে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করবেন বলে একটি লিখিত দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত হাসপাতালটির মালিক ডা. একেএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোগীর অস্ত্রপাচার শুরুতে রোগীর পেট কাটার পর দেখা যায় টিউমারের সঙ্গে পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গ পেঁচিয়ে রয়েছে, যার কারণে অস্ত্রোপচার করেননি তারা। যদি অস্ত্রোপচার শেষ করা হত তাহলে রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাই ঝুঁকি নেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে যেকোনো হাসপাতালে এই রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে আমাদের হাসপাতাল থেকে রোগীকে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর জানান, চিকিৎসকরা রোগীর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যদি বড় ধরনের সমস্যা পান তবে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে পারেন । তবে এই বিষয়টি জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে অপারেশন করতে গিয়ে কোনো গাফিলতি আছে কিনা। বিশেষ করে রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।