ভৈরবে ব্যবসায়ীকে মাদক মামলার  ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা পেয়ে মুক্তি দিল ডিবি।। ঘটনায়  দুই ডিবি পুলিশ ক্লোজড। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪৬ Time View

 ৯ এপ্রিল , বিশেষ প্রতিনিধি:

 ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের  মানিকদী এলাকার এক মুদি  দোকানদার    ব্যবসায়ী আমির হোসেন (৪০) কে মাদক মামলা ও ক্রস ফায়ারের  ভয় দেখিয়ে বুকে  অস্ত্র ঠেকিয়ে  ডিবি পুলিশ তাকে  তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে   মারধোর করে   ৫ ঘন্টা আটকে রেখে ১ লাখ ৯৩ হাজার  টাকার  বিনিময়ে  ছাড়া পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । ঘটনাটি ঘটেছে  গত সোমবার ( ৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে কিশোরগঞ্জের ডিবি পুলিশ এসআই দেলুয়ার হোসেন ও এস আই ইসমাইলসহ ৬ সদস্য। এই ঘটনায় ভূক্তভূগি ব্যবসায়ী আমির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার  পুলিশের আইজিপিসহ কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে আজ বুধবার সকালে পুলিশ সুপার দুইজন ডিবি পুলিশ দেলুয়ার হোসেন ও ইসমাইলকে তাদের দায়িত্ব থেকে ক্লোজড করেন।  ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  এই তথ্য যুগান্তরকে  নির্শ্বিত করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরী। 

ব্যবসায়ী আমির হোসেনের অভিযোগে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তার মানিকদি এলাকার মুদির দোকানে যায় ৬ জন ডিবি পুলিশ। এদের মধ্য ডিবি  এসআই দেলুয়ার হোসেন ও এসআই ইসমাইলকে তিনি চিনতে পারেন বুকের নেমপ্লেট দেখে। এসময় এদুজন আমির হোসেনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বলেন তুই মাদক ব্যবসা করিস। একথা বলেই তাকে একটি সিএনজিতে তোলা হয়। সিএনজিটি  কিছুদূরে নিয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে কুলিয়ারচর এলাকার স্টীল ব্রীজে থামানো হয় গাড়ীটি। এসময় তাকে বলা হয় তুই মাদক ব্যবসায় জড়িত, তোর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে। তবে ৫ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দিব। টাকা না দিলে তোকে ক্রসফায়ারও করতে পারি। ডিবির এসব কথা শুনে সে ভয় পেয়ে যায়। এসময় সে বলে আমি এত টাকা কোথা থেকে দিব। আমি মাদক ব্যবসা করিনা। মুদির দোকান চালিয়ে সংসার চালায়। আমার তিনটি সন্তান। তারপর তাকে গাড়ীতে নিয়ে কুলিয়ারচর এলাকার বিভিন্ন স্থানে যায়। এরপর নিরপায় হয়ে বাঁচতে  ব্যবসায়ী আমীর হোসেন ডিবির গাড়ীতে বসে তার পরিবারকে ঘটনাটি মোবাইলে জানায়। তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনা শুনে ধারদেনা করে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা যোগার করে। এসব দফারফা করতে করতে এদিন রাত ১০ টা বেজে যায়। পরে ডিবির সদস্যরা সর্বশেষ ৩ লাখ টাকা দেয়ার দাবি করলে সে দাবিকৃত টাকা দিতে পারবেনা বলে ডিবিকে জানায়। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা রাত সাড়ে ১০ টায় কুলিয়ারচর স্টীল ব্রীজের কাছে ১ লাখ ৯৩ হাজার  টাকা নিয়ে গেলে ডিবি পুলিশ দেলুয়ারের হাতে উক্ত টাকা তুলে দেয়। টাকা পাওয়ার পর সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় তাকে ভৈরব – কিশোরগঞ্জের সড়কে কুলিয়ারচর এলাকায়  ছেড়ে দেয়া হলে ব্যবসায়ী আমির হোসেন ডিবির হাত থেকে মুক্তি পায়। 

এবিষয়ে ভূক্তভূগি ব্যবসায়ী আমির হোসেন যুগান্তরকে জানান, ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে হঠাৎ করে ডিবির সদস্যরা আমার দোকানে এসে আমাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে  গাড়ীতে তুলে নেয়। পরে ডিবির দেলুয়ার ও ইসমাইল মাদকের মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। দাবির টাকা না দিলে আমাকে ১ হাজার পিচ ইয়াবা দিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখায় তারা।   পরে আমার পরিবারের সদস্যদেরকে ঘটনা মোবাইলে  জানালে তারা ধারদেনা করে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ডিবিকে দিলে আমি মুক্তি পায়। আমি ঘটনায় মঙ্গলবার পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমার দেয়া টাকা ফেরত চাই এবং একইসাথে আমি ডিবি পুলিশদের বিচার দাবি করছি।  

এব্যাপারে কিশোরগঞ্জ ডিবির অভিযুক্ত দেলুয়ারের সাথে কথা হলে তিনি তার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমির হোসেন মাদক ব্যবসায় জড়িত এমন অভিযোগ আছে। ঘটনার দিন তার কাছে মাদক না পেলে আমরা তাকে ছেড়ে দেয়। তাকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করে বলেন তার অভিযোগ  মিথ্যা বানোয়াট। বিষয়টি জানতে  ডিবির ইসমাইলকে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য মোঃ  জামাল মিয়া জানান, ঘটনা সত্য। আমি নিজে এসআই  দেলোয়ার  ও  ইসমাইলকে ১ লাখ  ৯৩ হাজার টাকা  দিয়ে  তাকে ছাড়িয়ে  এনেছি।  

 কিশোরগঞ্জ  জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার  ইনচার্জ আজিজ আহমেদ জানান, এ ঘটনায়  পুলিশ সুপার মহোদয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরির সাথে আজ বুধবার সকালে যুগান্তর প্রতিনিধির কথা হলে তিনি জানান, আমি ভূক্তভূগির অভিযোগটি মঙ্গলবার  পাওয়ার পর আজই দুইজন ডিবি পুলিশ সদস্যকে তাদের দায়িত্ব থেকে ক্লোজড করেছি। একইসাথে একটি তদন্ত কমাটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে কাজ করছি। কোন ডিবি সদস্য বা পুলিশ মাদক নিয়ে অপরাধ করলে বা কাউকে অযথা হয়রানী করলে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তে  ভৈরবের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অপরাধী  ডিবি পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে  বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

যুগান্তরের আশুগঞ্জ প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান রঞ্জন  আর নেই। 

ভৈরবে ব্যবসায়ীকে মাদক মামলার  ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা পেয়ে মুক্তি দিল ডিবি।। ঘটনায়  দুই ডিবি পুলিশ ক্লোজড। 

Update Time : ০৩:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

 ৯ এপ্রিল , বিশেষ প্রতিনিধি:

 ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের  মানিকদী এলাকার এক মুদি  দোকানদার    ব্যবসায়ী আমির হোসেন (৪০) কে মাদক মামলা ও ক্রস ফায়ারের  ভয় দেখিয়ে বুকে  অস্ত্র ঠেকিয়ে  ডিবি পুলিশ তাকে  তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে   মারধোর করে   ৫ ঘন্টা আটকে রেখে ১ লাখ ৯৩ হাজার  টাকার  বিনিময়ে  ছাড়া পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । ঘটনাটি ঘটেছে  গত সোমবার ( ৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে কিশোরগঞ্জের ডিবি পুলিশ এসআই দেলুয়ার হোসেন ও এস আই ইসমাইলসহ ৬ সদস্য। এই ঘটনায় ভূক্তভূগি ব্যবসায়ী আমির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার  পুলিশের আইজিপিসহ কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে আজ বুধবার সকালে পুলিশ সুপার দুইজন ডিবি পুলিশ দেলুয়ার হোসেন ও ইসমাইলকে তাদের দায়িত্ব থেকে ক্লোজড করেন।  ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  এই তথ্য যুগান্তরকে  নির্শ্বিত করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরী। 

ব্যবসায়ী আমির হোসেনের অভিযোগে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তার মানিকদি এলাকার মুদির দোকানে যায় ৬ জন ডিবি পুলিশ। এদের মধ্য ডিবি  এসআই দেলুয়ার হোসেন ও এসআই ইসমাইলকে তিনি চিনতে পারেন বুকের নেমপ্লেট দেখে। এসময় এদুজন আমির হোসেনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বলেন তুই মাদক ব্যবসা করিস। একথা বলেই তাকে একটি সিএনজিতে তোলা হয়। সিএনজিটি  কিছুদূরে নিয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে কুলিয়ারচর এলাকার স্টীল ব্রীজে থামানো হয় গাড়ীটি। এসময় তাকে বলা হয় তুই মাদক ব্যবসায় জড়িত, তোর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে। তবে ৫ লাখ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দিব। টাকা না দিলে তোকে ক্রসফায়ারও করতে পারি। ডিবির এসব কথা শুনে সে ভয় পেয়ে যায়। এসময় সে বলে আমি এত টাকা কোথা থেকে দিব। আমি মাদক ব্যবসা করিনা। মুদির দোকান চালিয়ে সংসার চালায়। আমার তিনটি সন্তান। তারপর তাকে গাড়ীতে নিয়ে কুলিয়ারচর এলাকার বিভিন্ন স্থানে যায়। এরপর নিরপায় হয়ে বাঁচতে  ব্যবসায়ী আমীর হোসেন ডিবির গাড়ীতে বসে তার পরিবারকে ঘটনাটি মোবাইলে জানায়। তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনা শুনে ধারদেনা করে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা যোগার করে। এসব দফারফা করতে করতে এদিন রাত ১০ টা বেজে যায়। পরে ডিবির সদস্যরা সর্বশেষ ৩ লাখ টাকা দেয়ার দাবি করলে সে দাবিকৃত টাকা দিতে পারবেনা বলে ডিবিকে জানায়। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা রাত সাড়ে ১০ টায় কুলিয়ারচর স্টীল ব্রীজের কাছে ১ লাখ ৯৩ হাজার  টাকা নিয়ে গেলে ডিবি পুলিশ দেলুয়ারের হাতে উক্ত টাকা তুলে দেয়। টাকা পাওয়ার পর সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় তাকে ভৈরব – কিশোরগঞ্জের সড়কে কুলিয়ারচর এলাকায়  ছেড়ে দেয়া হলে ব্যবসায়ী আমির হোসেন ডিবির হাত থেকে মুক্তি পায়। 

এবিষয়ে ভূক্তভূগি ব্যবসায়ী আমির হোসেন যুগান্তরকে জানান, ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে হঠাৎ করে ডিবির সদস্যরা আমার দোকানে এসে আমাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে  গাড়ীতে তুলে নেয়। পরে ডিবির দেলুয়ার ও ইসমাইল মাদকের মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। দাবির টাকা না দিলে আমাকে ১ হাজার পিচ ইয়াবা দিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখায় তারা।   পরে আমার পরিবারের সদস্যদেরকে ঘটনা মোবাইলে  জানালে তারা ধারদেনা করে ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ডিবিকে দিলে আমি মুক্তি পায়। আমি ঘটনায় মঙ্গলবার পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমার দেয়া টাকা ফেরত চাই এবং একইসাথে আমি ডিবি পুলিশদের বিচার দাবি করছি।  

এব্যাপারে কিশোরগঞ্জ ডিবির অভিযুক্ত দেলুয়ারের সাথে কথা হলে তিনি তার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমির হোসেন মাদক ব্যবসায় জড়িত এমন অভিযোগ আছে। ঘটনার দিন তার কাছে মাদক না পেলে আমরা তাকে ছেড়ে দেয়। তাকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করে বলেন তার অভিযোগ  মিথ্যা বানোয়াট। বিষয়টি জানতে  ডিবির ইসমাইলকে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য মোঃ  জামাল মিয়া জানান, ঘটনা সত্য। আমি নিজে এসআই  দেলোয়ার  ও  ইসমাইলকে ১ লাখ  ৯৩ হাজার টাকা  দিয়ে  তাকে ছাড়িয়ে  এনেছি।  

 কিশোরগঞ্জ  জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার  ইনচার্জ আজিজ আহমেদ জানান, এ ঘটনায়  পুলিশ সুপার মহোদয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরির সাথে আজ বুধবার সকালে যুগান্তর প্রতিনিধির কথা হলে তিনি জানান, আমি ভূক্তভূগির অভিযোগটি মঙ্গলবার  পাওয়ার পর আজই দুইজন ডিবি পুলিশ সদস্যকে তাদের দায়িত্ব থেকে ক্লোজড করেছি। একইসাথে একটি তদন্ত কমাটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে কাজ করছি। কোন ডিবি সদস্য বা পুলিশ মাদক নিয়ে অপরাধ করলে বা কাউকে অযথা হয়রানী করলে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তে  ভৈরবের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অপরাধী  ডিবি পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে  বলে তিনি জানান।