২৭ মে, নিজ প্রতিনিধি:
ভৈরব খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের অবহেলার মধ্য দিয়ে গুদামের কাজকর্ম চলছে। গুদামে ধানচাল কেনা নিয়ে ইতিপূর্বে ঘূষ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অফিসটি বন্ধ থাকে প্রায় সময়। আজ সোমবার দুপুর ১২. ৪০ মিনিটে এই প্রতিনিধি খাদ্য গুদামে ধানচাল কেনার তথ্য নিতে গেলে অফিসটি তালাবদ্ধ দেখতে পায়। সদ্য যোগদানকৃত গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৌসুমী সিরাজ অফিসে আসেননি। তাই অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও অফিস খুলেননি। সাংবাদিক দেখে আক্তারুজ্জামান নামের এক কর্মচারী দৌড়ে এসে তালাবদ্ধ অফিসটি তাড়াতাড়ি খুলেন। জিজ্ঞাসা করতেই ওই কর্মচারী যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন, বৃষ্টির কারনে স্যার আসেননি। অথচ তখন বৃষ্টি ছিলনা। এভাবেই ভৈরব খাদ্য গুদামের কাজকর্ম চলে। দেখার কেউ নেই।
কয়েক বছর আগে ভৈরব খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন খোরশেদ আলম। তখন তিনি ঢাকায় থাকতেন মাসের ২৫ দিন। মাসের ৫ দিন তিনি ভৈরবে এসে অফিস করতেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও তাকে কিছু বলার সাহস ছিলনা। কারন তিনি ছিলেন ঢাকার যুবলীগের সম্রাটের লোক। তার বিরুদ্ধে তখন স্থানীয় রাইস মিল ব্যবসায়ী তারিক আহমেদ তৎকালীন খাদ্য মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে ২২ লাখ টাকা ঘূষ নেয়ার অভিযোগ দিয়েছিলেন। ভৈরবের আরেকজন রাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন তৎসময়ে দুদকের চেয়ারম্যানের কাছে ২০ লাখ টাকা ঘূষ দিয়েছেন তাকে এমন লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে ঘটনা তদন্তে প্রমানিত হলে খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালভাবে খাদ্য অধিদপ্তরে বিভাগীয় মামলা হয় এবং পরে অফিসিয়াল শাস্তি হয়েছিল।
তারপর গত ২০২১ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান দায়িত্বে থাকার সময় গুদামের মজুতকৃত ৮০ টন চাল ও ১ লাখ ৭১ হাজার খালি বস্তা মজুত কম পাওয়া গেলে তিনিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুদক মামলাটি এখনও তদন্ত করে চার্জশীট দেয়নি। ঘটনার পর কামরুল ইসলামকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে। ভৈরব খাদ্য গুদামের ঘূষ দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। কর্মকর্তারা অফিসে যোগদান করেই টাকার খনি পেয়ে যায়। কৃষকের কাছ থেকে ধান ও রাইস মিল থেকে চাল কেনার সময় আগেই পারসেন্টেসের টনপ্রতি ৪০০/৫০০ টাকা আদায় করেন এমন অভিযোগ একাধিক আছে।
তারপর চলতি মে মাসে ভৈরব খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজে যোগদান করেন মৌসুমী সিরাজ। যোগদান করেই তিনি নিয়মিত অফিস করেননা এমন অভিযোগ পাওয়ার পর যুগান্তর প্রতিনিধি আজ সোমবার দুপুরে তার অফিসে গিয়ে প্রমান পেয়েছে।
এবিষয়ে মৌসুমী সিরাজকে মোবাইলে ফোন করলে তিনি বলেন, আজ আবহাওয়া খারাপের কারনে অফিসে আসতে পারেনি। আবহাওয়া খারাপের কারনে রাইস মিল মালিকরা চাল ডেলিবারী দিতে পারবেনা জানিয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হয় অফিস তালাবদ্ধ কেন। তিনি জবাবে বলেন অফিসের কর্মচারীরাতো থাকার কথা, তারা আছে। কেন অফিস বন্ধ আমি খোঁজ নিতেছি।
বিষয়টি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামকে মোবাইলে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। ভৈরব খাদ্য গুদাম অফিস আজ সোমবার তালা বন্ধ কেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি বাজিতপুরে নির্বাচনী ট্রেনিং এ আছি। বিষয়টি দেখছি বলে তার ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিনকে এবিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন, অফিস বন্ধ থাকবে কেন। যুগান্তর প্রতিনিধি বললেন, অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন বিষয়টির খোঁজ নিতেছি।
এব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আসাদুজ্জামানের মোবাইলে বারবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাকে মোবাইল ম্যাসেজে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কলবেগ করেননি।
কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল কালাম আজাদকে এবিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমি অবগত হলাম। আমি জানিনা সরকারী খাদ্য গুদাম কেন তালাবদ্ধ থাকবে। ঘটনাটি দেখছি বলে তিনি জানান।