২৮ জানুয়ারি, নিজস্ব প্রতিনি
ভৈরবের মেঘনা নদীতে ৫ মাসের ব্যবধানে আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে ভৈরব- আশুগঞ্জ খেয়াঘাটের নিকটে প্রায় দেড়শ মিটার এলাকাসহ একটি রাইস মিলের একাংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার এভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রেলসেতুর নিকটে বিএডিসির সার গুদাম ও যমুনা – মেঘনা তেলের ডিপোর সামনে নদী ভাঙ্গনে প্রায় আড়াইশ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এসময় ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়ে সার গুদাম ও তেলের ডিপো। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করেছিল। আগের ভাঙ্গন থেকে ৫০০ মিটার দূরে দক্ষিণদিকে খেয়াঘাটের নিকটে ৪ মাস ২০ দিন পর গতকাল সোমবার রাতে হঠাৎ করে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিলে বাজারের ব্যবসায়ীরাসহ এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ে। ভাঙ্গনের সময় নদীতে তীব্র স্রোত ও ঘূর্নিপাক দেখা যায়। রাত ১২ টা পর্যন্ত নদীর পাড়ের মাটির বড় বড় চাক্কা ও স্থানীয় খাঁজা রাইস মিলের একাংশ একের পর এক নদীগর্ভে বিলিন হতে থাকে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০ টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন ও ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তৎক্ষনাত উপজেলা নির্বাহী অফিসার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করেন।

খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিশোরগন্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও স্থানীয় প্রকৌশলী আতিকুল গনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা এখনও শুরু করা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে ভাঙ্গনের তীব্রতা কিছুটা কমলেও ধীরে ধীরে ভাঙ্গন অব্যাহত আছে।

১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভৈরব বাজার, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, কাঠপট্রিসহ একাধিক এলাকা কমপক্ষে ১০ বার ভাঙ্গন হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে ফেরিঘাটসহ রেলওয়ে কলোনীর বিশাল এলাকা ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। তারপর বাজারের নদীর পাড়ের একাধিক এলাকা একইভাবে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রায় শত শত কোটি টাকার দোকানপাট, ঘরবাড়ী, রেলওয়ের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। কিন্ত সরকার ভাঙ্গনরোধে স্থায়ীভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। প্রতিবার ভাঙ্গনে সাময়িক কাজ করে ভাঙ্গন রোধ করা হলেও বার বার ভাঙ্গছে ভৈরবের নদীর পাড়, ফেরিঘাট।
ভৈরব চেম্বারের সহ- সভাপতি জাহিদুল হক জাভেদ বলেন, ভৈরব একটি বানিজ্য নগরী। বার বার নদী ভাঙ্গনে ভৈরব বাজারের ব্যবসা বানিজ্য ধ্বংস ও ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবার ভাঙ্গনে সাময়িক কাজ করে ভাঙ্গন রোধ করলেও কাজে আসছেনা। ভৈরবকে ভাঙ্গন থেকে বাঁচাতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, সোমবার রাতে খবর পেয়ে আমি ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এসময় তৎক্ষনাত পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করেছি। তারা মঙ্গলবার সকালে ভৈরবে এসে ভাঙ্গন রোধকল্পে কাজ শুরু করেছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন এই প্রতিনিধিকে মঙ্গলবার সকালে জানান, সোমবার রাতে খবর পেয়ে আমি আমার টিমসহ আজ সকালে ভৈরবে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর মেজারম্যান শুরু করেছি। যা দেখলাম তাতে মনে হয় দেড়শ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনের গতি অনেকটা কমেছে। তিনি বলেন, নদীতে ড্রেজারে বালু উত্তোলন, নদীর পাড়ে ভল্টারগেট তৈরি বন্ধ করতে হবে। আমরা রাতের মধ্য জিও ব্যাগ ভৈরবে পাঠাব। কাল বুধবার থেকে জিও ব্যাগ দ্রুত ভাঙ্গন এলাকায় ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করব। এর আগে একই এলাকায় উত্তরদিকে ভাঙ্গন লেগেছিল ৫ মাস আগে। তখনও ভাঙ্গন রোধ করা হয়। তিনি আরও বলেন ভৈরব বাজার নদীর পাড়ের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে হলে বড় প্রকল্প তৈরি করে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য বিশাল বাজেটের প্রয়োজন। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আগেই অবহিত করেছি। এখন আবারও অবহিত করব। আশা করছি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে নতুন একটি বড় প্রকল্প তৈরি করে ভৈরবে স্থায়ীভাবে কাজ করে ভাঙ্গন রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।