ভৈরবে ইসকনের প্রার্থনালয়  ব্যাপকভাবে ভাংচুর লুটপাট করেছে দুর্বত্তরা।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৫৩:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৫৩ Time View

২৯ নভেম্বর, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবে ইসকনের একটি প্রার্থনালয় ব্যাপকভাবে ভাংচুর লুটপাট করেছে দুর্বত্তরা। একদল দুর্বত্ত লাঠিসোটা নিয়ে শ্লোগান দিয়ে প্রার্থনালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে।  আজ শুক্রবার বিকেল ৫ টায় শহরের রানীর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইসকন ভক্তদের  পরিচালিত নামহট্র নামের প্রার্থনালয়টির প্রধান দরজা ভেঙ্গে দুর্বত্তরা ভিতরে ঢুকে। এসময়  পূজা করার সকল জিনিসপত্র ভাংচুর করে চুরমার করে দেয়। দুর্বত্তরা প্রার্থনালয়ের ভিতরে থাকা ঢোল, গীতা বই, প্রার্থনার বিধঙ্গ , কাশি – করতাল, দেয়ালে টানানো পূজারিদের একাধিক ছবি ব্যাপক ভাংচুর করে বলে ভক্তগন জানান। ঘটনার সময় প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে থাকা কেউ উপস্থিত ছিলেননা। প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী তান্ডব চালিয়ে ভাংচুর লুটপাট করার পর  দুর্বত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ঘটনার খবর পেয়ে প্রার্থনালয়ের ভক্তরা এসে এসব দেখতে পায়।

 খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন, ভৈরব সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সানজেদুল ইসলাম,  থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার পাল, গোপাল জিওর মন্দিরের সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র সাহা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলামসহ দলের নেতারাও ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে প্রশাসন ও পুলিশকে এবিষয়ে সহযোগীতা করেছেন। ঘটনার পর ভৈরব বাজারের অসংখ্য হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন প্রার্থনালয়টি দেখতে ভীড় জমান। 

প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে থাকা ভক্ত মিলটন সাহা বলেন, বিকেল সাড়ে ৫ টায় খবর পেয়ে আমি প্রার্থনালয়ে উপস্থিত হয়ে ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা দেখলাম। কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা দেখেনি। ভিতরে হিন্দুরা প্রার্থনা করার সবকিছু ভাংচুর করে কিছু জিনিষপত্র লুট  করে নিয়ে গেছে দুর্বত্তরা। আরেক ভক্ত প্রতিপ কর্মকার ও কাজল কর্মকার বলেন, দুর্বত্তরা দেয়ালের ছবি ভাংচুরসহ ঢোল, গীতা বই, কাশি- করতাল সব লুট করেছে, ভাংচুর করেছে। প্রার্থনালয়টি ইসকন পরিচালনা করত। নরসিংদির ইসকনের প্রতিপ প্লাবন দাস এই প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে আছে, তবে আমরা কয়েকজন পরিচালনায় সহযোগীতা করতাম। প্রার্থনালয়টি এমনিতে সবসময় প্রতিদিন  বন্ধ থাকত। প্রতি রবিবার হিন্দু নারী – পুরুষ  ভক্তরা এখানে পূজা পূজারি করত। 

এবিষয়ে ভৈরব পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন কুমান পাল বলেন ঘটনাটি দুঃখজনক। গোপাল জিওর মন্দিরের সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র সাহা বলেন, খবর পেয়ে আমি প্রার্থনালয়ে এসে যা দেখলাম শুনলাম ঘটনাটি ধর্মীয় আঘাত এনেছে। তিনি বলেন ভৈরবে এধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।  তারা অপরাধীদের খোঁজে বের করে শাস্তির দাবি করেন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, খবর পেয়ে আমি পুলিশসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। এখানে প্রার্থনালয় আছে তা পুলিশ জানতনা।  সিসি ক্যামেরা দেখে দুর্বত্তদের গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। সেনাবাহিনীর মেজর সানজেদুল ইসলামসহ পুলিশ আমার সাথে  এসেছে ঘটনা পরিদর্শন করতে। যা দেখলাম, এটা কোন মন্দির নয়, একটি প্রার্থনালয়। ভৈরবে যা মন্দির আছে সবগুলির তালিকা উপজেলা পরিষদে থাকলেও এই প্রার্থনালয়টির নাম তালিকায়  নেই। প্রশাসন, পুলিশ বা স্থানীয়দের মধ্য অনেকেই অবগত নয় রানীর বাজারে প্রার্থনালয় আছে। জানা থাকলে আগেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হত। কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে অপরাধীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতাই আনব। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে ইসকনের প্রার্থনালয়  ব্যাপকভাবে ভাংচুর লুটপাট করেছে দুর্বত্তরা।।

Update Time : ০১:৫৩:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

২৯ নভেম্বর, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবে ইসকনের একটি প্রার্থনালয় ব্যাপকভাবে ভাংচুর লুটপাট করেছে দুর্বত্তরা। একদল দুর্বত্ত লাঠিসোটা নিয়ে শ্লোগান দিয়ে প্রার্থনালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে।  আজ শুক্রবার বিকেল ৫ টায় শহরের রানীর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইসকন ভক্তদের  পরিচালিত নামহট্র নামের প্রার্থনালয়টির প্রধান দরজা ভেঙ্গে দুর্বত্তরা ভিতরে ঢুকে। এসময়  পূজা করার সকল জিনিসপত্র ভাংচুর করে চুরমার করে দেয়। দুর্বত্তরা প্রার্থনালয়ের ভিতরে থাকা ঢোল, গীতা বই, প্রার্থনার বিধঙ্গ , কাশি – করতাল, দেয়ালে টানানো পূজারিদের একাধিক ছবি ব্যাপক ভাংচুর করে বলে ভক্তগন জানান। ঘটনার সময় প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে থাকা কেউ উপস্থিত ছিলেননা। প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী তান্ডব চালিয়ে ভাংচুর লুটপাট করার পর  দুর্বত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ঘটনার খবর পেয়ে প্রার্থনালয়ের ভক্তরা এসে এসব দেখতে পায়।

 খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন, ভৈরব সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সানজেদুল ইসলাম,  থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার পাল, গোপাল জিওর মন্দিরের সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র সাহা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলামসহ দলের নেতারাও ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে প্রশাসন ও পুলিশকে এবিষয়ে সহযোগীতা করেছেন। ঘটনার পর ভৈরব বাজারের অসংখ্য হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন প্রার্থনালয়টি দেখতে ভীড় জমান। 

প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে থাকা ভক্ত মিলটন সাহা বলেন, বিকেল সাড়ে ৫ টায় খবর পেয়ে আমি প্রার্থনালয়ে উপস্থিত হয়ে ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা দেখলাম। কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা দেখেনি। ভিতরে হিন্দুরা প্রার্থনা করার সবকিছু ভাংচুর করে কিছু জিনিষপত্র লুট  করে নিয়ে গেছে দুর্বত্তরা। আরেক ভক্ত প্রতিপ কর্মকার ও কাজল কর্মকার বলেন, দুর্বত্তরা দেয়ালের ছবি ভাংচুরসহ ঢোল, গীতা বই, কাশি- করতাল সব লুট করেছে, ভাংচুর করেছে। প্রার্থনালয়টি ইসকন পরিচালনা করত। নরসিংদির ইসকনের প্রতিপ প্লাবন দাস এই প্রার্থনালয়ের দায়িত্বে আছে, তবে আমরা কয়েকজন পরিচালনায় সহযোগীতা করতাম। প্রার্থনালয়টি এমনিতে সবসময় প্রতিদিন  বন্ধ থাকত। প্রতি রবিবার হিন্দু নারী – পুরুষ  ভক্তরা এখানে পূজা পূজারি করত। 

এবিষয়ে ভৈরব পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন কুমান পাল বলেন ঘটনাটি দুঃখজনক। গোপাল জিওর মন্দিরের সভাপতি বাবু দুলাল চন্দ্র সাহা বলেন, খবর পেয়ে আমি প্রার্থনালয়ে এসে যা দেখলাম শুনলাম ঘটনাটি ধর্মীয় আঘাত এনেছে। তিনি বলেন ভৈরবে এধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।  তারা অপরাধীদের খোঁজে বের করে শাস্তির দাবি করেন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, খবর পেয়ে আমি পুলিশসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। এখানে প্রার্থনালয় আছে তা পুলিশ জানতনা।  সিসি ক্যামেরা দেখে দুর্বত্তদের গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। সেনাবাহিনীর মেজর সানজেদুল ইসলামসহ পুলিশ আমার সাথে  এসেছে ঘটনা পরিদর্শন করতে। যা দেখলাম, এটা কোন মন্দির নয়, একটি প্রার্থনালয়। ভৈরবে যা মন্দির আছে সবগুলির তালিকা উপজেলা পরিষদে থাকলেও এই প্রার্থনালয়টির নাম তালিকায়  নেই। প্রশাসন, পুলিশ বা স্থানীয়দের মধ্য অনেকেই অবগত নয় রানীর বাজারে প্রার্থনালয় আছে। জানা থাকলে আগেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হত। কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা সিসি ক্যামেরা দেখে অপরাধীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতাই আনব। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে বলে তিনি জানান।