২৭ আগস্ট, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি :
ভৈরবে জহির উদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবিতে ইউএনও অফিস ঘেরাও করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে কমলপুর জহির উদ্দিন হাই স্কুলের কয়েক শতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমার শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেছেন।
জানা যায়, কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান সরকারসহ কতিপয় শিক্ষক মিলে
স্কুলে বিশেষ ক্লাসের নামে প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে ৬৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি জনে ৭০০ টাকা করে প্রায় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এসব অর্থ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দুজনে মিলে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন । সরকারি নিয়ম অনুসারে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ২ হাজার ১ শত ১০ টাকা বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ২ শত ১০ টাকা আদায় করার কথা থাকলেও তারা প্রত্যক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করতেন। যারা টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারতো না তাদেরকে
বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেন। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটিয়ে দলীয় লোকদের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। স্কুলের সহকারি শিক্ষক পদে এনায়েতুল্লাহকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক তামান্নার ৬ মাসের বকেয়া বেতন ও আত্মসাতের অভািযোগ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। এতে তাদের কোন কর্নপাত হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মতিউর রহমান জনি, জহির উদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান দীর্ঘ দিন দলীয় ক্ষমতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
আমরা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা তার অনিয়ম ও দুৃর্নীতির বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের যেখানে দুর্নীতি হয়েছে সেখানে আমরা অডিট করেছি। হিসাবের লেজার বই বিভিন্ন বিল ভাউচার চেক করে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে। এখন অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল প্রমাণ নিয়ে ইউএনও নিকট প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানাতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেছেন। আমরা দুনীর্তিবাজ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করছি ।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, আজকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে তা সবগুলি সঠিক। প্রধান শিক্ষক কয়েক জন শিক্ষক নিয়ে বিশেষ ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূ্লক অর্থ আদায় করতেন। আদায়কৃত সকল অর্থ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আত্মসাত করতেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আরেক সদস্য কুহিনুর আহাদ চৌধুরী বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যখন বিদ্যায়ের মিটিং ডাকতেন তখন আমরা যারা অভিভাবক সদস্য ছিলাম আমাদের কখনো স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে কিছুই বলতেন না । আমরা প্রশ্ন করলে তখন তিনি বলতেন স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব শুধু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দেখবেন আর কেউ দেখার প্রয়োজন নেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ অহিদুর রহমান ছাত্রদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন স্কুলে যা ব্যয় হয় তাহা সভাপতির অনুমতিক্রমে হয়। আমি কোন দুর্নীতি অনিয়ম করেনি।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিলা বিনতে মতিন বলেন, হাজী জহির উদ্দিন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে আমাকে অবগত করেছেন। তাদের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিললে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান ।