১২ জুলাই, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবের কমপক্ষে ২৪ জন যুবক রাসেল নামের এক দালালের খপ্পরে পরে স্বপ্নের দেশ ইতালী যেতে পারছেনা। তারা এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি, আবার কেউ কেউ লিবিয়া কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছে। এদের মধ্য অনেকে বাড়ীঘর – জমিজমা বিক্রি করে নিস্বঃ হয়ে দালাল রাসেলকে ১০/২০ লাখ টাকা দিয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীরা দাবি করছে আবারও ১০/১২ লাখ টাকা দিলে ডাংকি দিয়ে সাগর পথে ইতালী পাঠাবে তাদেরকে। কিন্ত পরিবারগুলি দাবির টাকা না দিতে পারায় তাদের ওপর চালাচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন। আর নির্যাতনের ভিডিও অপহরণকারীরা কৌশলে ভৈরবের পরিবারগুলির কাছে পাঠাচ্ছে। ভিডিও দেখে পরিবারগুলিতে প্রতিদিন চলছে কান্না আজাহারি। পরিবারের সুখ – শান্তির জন্য ইতালী গিয়ে রোজগার করে টাকা পাঠাবে পরিবারগুলির এই ছিল আশা – প্রত্যাশা। সেই আশা এখন গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। পরিবারগুলির অভিযোগ দালাল রাসেল কমপক্ষে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫/৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তারা হলো পৌর শহরের রাসেল মিয়া ৭ লাখ, একই এলাকার ফারুক মিয়া সহ তিনজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ, নরসিংদির শিবপুরের শফিকুলের কাছ থেকে ২৩ লাখ, সবুজ, তোফাজ্জল ও মনিরের কাছ থেকে ৭০ লাখ, হাছেন আলী ও তার দুই বন্ধুর কাছ থেকে ৪৫ লাখ, সুমনের কাছ থেকে ১৪ লাখ, পঞ্চবটি এলাকার রশিদ, মালেক ও হুরুন আলীর কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা দালাল রাসেলকে দেয়া হয়। এদের মধ্য কেউ ৬ মাস আগে, কেউ ৪ মাস আগে আবার কেউ ৩ মাস আগে দালালকে টাকা দিয়েছে। ২৪ জনের মধ্য কেউ কেউ এখন লিবিয়া কারাগারে বন্দি। আবার কেউ কেউ অপহরণকারীদের হাতে বন্দি আছে বলে পরিবারের দাবি। পরিবারগুলির সাথে কারো এখন যোগাযোগ নেই। তবে মাঝে মধ্য অপহরণকারীরা তাদেরকে নির্যাতনের পর পরিবারের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে দিলে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়। ২৪ জনের মধ্য এখনও কেউ ইতালী যেতে পারেনি বলে পরিবারগন অভিযোগ করেছে।
সুমনের বাবা নরিছলাম বলেন, সুখের স্বপ্ন দেখে ছেলেকে রাসেলের মাধ্যমে ইতালী পাঠাতে চেয়েছিলাম কিন্ত আমার ছেলে লিবিয়া কারাগারে বন্দি।
শফিকুলের বাবা এবাদুল্লাহ বলেন, আমার ছেলেকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা আটকিয়ে রেখেছে। এখন ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এত টাকা কোথা থেকে দিব। হাছেন আলীর বাবা রইছ উদ্দিন বলেন তিনমাস যাবত আমার ছেলের কোন খোঁজ নেই। ৪০ লাখ টাকা দিলাম রাসেল দালালকে। কিন্ত এখন আমার ছেলের খোঁজ নেই।
গত ৪ জুলাই দালাল রাসেলকে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন কারাগারের পাঠিয়ে আরও বিপদ হয়েছে পরিবারগুলির দাবি । দালাল রাসেল ছাড়া এসব যুবকদেরকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয় পরিবারগুলির বলছে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, ভূক্তভূগি এবাদুল্লাহ’র অভিযোগের প্রেক্ষিতে দালাল রাসেলকে গত ৪ জুলাই গ্রেফতার করেছি। সে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করে পুলিশের কাছে। রাসেল বলছে তাদের টাকা লিবিয়ার দালালকে পাঠিয়েছে। সাগর পথে ঝামেলার কারনে তাদেরকে পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অপহরণকারীদের হাতে তারা কয়েকজন বন্দি এসব কথা সে অস্বীকার করে। এখন সব ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিব।