২০ সেপ্টম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি
ভৈরবে মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আনন্দ (১৭) নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কিশোর গ্যাং লিডার রুজেন গ্রুপ ও ভূবন গ্রুপের মধ্য শহরের বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ে এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এসংঘর্ষ ঘন্টাব্যাপী চলমান ছিল। নিহত কিশোর শহরের গাছতলাঘাট এলাকার পাদুকা শ্রমিক আবুতাহের মিয়ার ছেলে। তবে তার বাড়ী উপজেলার আগানগর গ্রামে। তার পরিবার শহরে ভাড়া বাসায় থাকত। নিহত আনন্দ স্থানীয় জহির উদ্দিন হাইস্কুলে লেখাপড়া করত। শুক্রবার সংঘর্ষের সময় সে ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় গুরুতর আহত হলে রাত ৯ টায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এসময় তার অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করে। পরে রাত আড়াইটায় সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়। সেখানে তার ময়না তদন্ত শেষ করে লাশ আজ শনিবার দুপুরে ভৈরবের বাসায় আনা হয়। ঘটনার সময় আহতরা হলো আপন (৪০), আবু মিয়া (৪৫), আল- আমিন (৩৪) এবং আনন্দ(১৭)। এদের মধ্য আনন্দ ঢাকায় মারা যায়, অপর তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিলেও আহত অন্যরা পুলিশের ভয়ে স্থানীয় ক্লিনিক ও বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার খবর পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার রুজেন গ্রুপ ও ভূবন গ্রুপের মধ্য দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার এবং চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের টাকা বন্টন নিয়ে বিরোধ, ঝগড়া চলছিল। এরই মধ্য গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এসব ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের মধ্য সংঘর্ষ বাঁধে। তারা দেশীয় অস্ত্র রামদা, ছুরি, লাঠি, হকস্টিক ও ইটপাটকেল নিয়ে মাঠে নামে। ঘটনার সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক ভীতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে যানবাহন চলাচল একঘন্টা বন্ধ থাকে। সাধারণ মানুষ পথচারীরা জীবন বাঁচাতে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এসময় আনন্দসহ ১০ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাতেই ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকজনকে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল এলাকায় রাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আজ শনিবার ঘটনাস্থল এলাকায় পরিস্থিতি থমথম অবস্থা বিরাজ করছে।
নিহত আনন্দ’র বাসায় গেলে তার ভগ্নিপতি মাহমুদুল হাসান এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমার শ্যালক অপরাধ বা দুই পক্ষের সংঘর্ষের সাথে জড়িত নয়। সে একটি হাইস্কুলে পড়ে। গতকাল শুক্রবার ঘটনার সময় সে ভৈরব বাজার থেকে বাসায় আসার সময় সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যায়। এসময় সংঘর্ষকারীরা তাকে দেখে ইটপাটকেল ছুঁড়লে সে মাথায় গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে রাত আড়াইটায় মারা যায়।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও এলাকার লোকজন অভিযোগে জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে ভৈরব এলাকায় মাদক ব্যবসা, সেবন, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন রকমের অপরাধ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন শহরে বিভিন্ন রোডে ডাকাতি, ছিনতাই হচ্ছে। এলাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক বিক্রি সেবনসহ যুবক, কিশোর গ্যাং সদস্যরা এসব অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে। মাদক ব্যবসা ও চুরি – ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে একাধিক গ্যাং মেতে উঠেছে ভৈরবে । মাদক সেবনকারীরা টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করছে মহাসড়কসহ বিভিন্ন রোডে। সন্ধ্যার পর হলেই পথচারীরা আতংকে থাকে। এভাবেই চলছে কিশোর গ্যাংদের নানা অপরাধ।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফূয়াদ রুহানী এবিষয়ে জানান, এলাকার দুইপক্ষের মাদক ব্যবসা ও চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় অপরাধীরা পালিয়ে গেলেও কয়েকজনকে আটক করা হয়। ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছুড়া হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। ঢাকায় হাসপাতালে আনন্দ নামের এক কিশোর নিহতের কথা শুনেছি। তার পরিবার এব্যাপারে অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।