কুলিয়ারচরে   বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন  দম্পতি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • ৫৫ Time View

১১ জুলাই,  নিজস্ব  প্রতিনিধি

‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা’- এই বাক্যটির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের  মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও  মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪) দম্পতির মাধ্যমে। দু’জনেই চলতি ২০২৫ সালের দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমান নম্বর জিপিএ- ৪ দশমিক ১১ পেয়ে সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয় দিয়েছেন। গত ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে যেন আনন্দের বন্যা বইছে এই দম্পতির মাঝে। বাবা-মায়ের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে ছেলে-মেয়েরাও। বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করায় এ দম্পতিকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেসহ সরাসরি শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ মিষ্টিমুখ করাতেও দেখা গেছে।

দম্পতির শিক্ষাজীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে। ওই মাদ্রাসা থেকে তারা দু’জন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে এ সফলতা অর্জন করেছেন।

পড়ালেখার মাঝপথে থেমে যাওয়া এই দম্পতির জীবনে এসএসসি পরীক্ষা যেন দ্বিতীয় সূচনা। তাঁদের এই যাত্রা শুধু তাঁদের নিজেদের জন্যই নয়, বরং সমাজের বহু মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে ‘শিখতে কোন বয়স লাগেনা।”

এই  দম্পতি কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচিত মুখ।

কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামে। মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। তারা দুজনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করেন আজ থেকে ৩১ বছর আগে। 

পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তারা দুজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস না করায় তাঁদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তাঁরা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ  সাহিত্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিাঙ্গনেরও একজন সক্রিয় কর্মী। কবিতা লেখেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার শতাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিকতার কাজেও তিনি জড়িত আছেন। 

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন,  সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছেন। কেবল কষ্ট ছিল পড়াশোনা নিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট। 

পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তারের ভাষ্য, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হয়। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট প্রায় তিন যুগ ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। 

এদিকে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও  মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। প্রায় শেষ বয়সে এসে সংসার সামলিয়েও তারা দুজনে যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা -২৫ পেছানো দাবি ডিলার এসোসিয়েশনের। যৌক্তিক কমিশন নির্ধারণ করার দাবি। 

কুলিয়ারচরে   বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন  দম্পতি

Update Time : ০৮:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

১১ জুলাই,  নিজস্ব  প্রতিনিধি

‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা’- এই বাক্যটির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের  মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও  মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪) দম্পতির মাধ্যমে। দু’জনেই চলতি ২০২৫ সালের দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমান নম্বর জিপিএ- ৪ দশমিক ১১ পেয়ে সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয় দিয়েছেন। গত ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে যেন আনন্দের বন্যা বইছে এই দম্পতির মাঝে। বাবা-মায়ের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে ছেলে-মেয়েরাও। বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করায় এ দম্পতিকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেসহ সরাসরি শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ মিষ্টিমুখ করাতেও দেখা গেছে।

দম্পতির শিক্ষাজীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে। ওই মাদ্রাসা থেকে তারা দু’জন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে এ সফলতা অর্জন করেছেন।

পড়ালেখার মাঝপথে থেমে যাওয়া এই দম্পতির জীবনে এসএসসি পরীক্ষা যেন দ্বিতীয় সূচনা। তাঁদের এই যাত্রা শুধু তাঁদের নিজেদের জন্যই নয়, বরং সমাজের বহু মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে ‘শিখতে কোন বয়স লাগেনা।”

এই  দম্পতি কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচিত মুখ।

কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামে। মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। তারা দুজনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করেন আজ থেকে ৩১ বছর আগে। 

পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তারা দুজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস না করায় তাঁদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তাঁরা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ  সাহিত্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিাঙ্গনেরও একজন সক্রিয় কর্মী। কবিতা লেখেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার শতাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিকতার কাজেও তিনি জড়িত আছেন। 

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন,  সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছেন। কেবল কষ্ট ছিল পড়াশোনা নিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট। 

পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তারের ভাষ্য, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হয়। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট প্রায় তিন যুগ ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। 

এদিকে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও  মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। প্রায় শেষ বয়সে এসে সংসার সামলিয়েও তারা দুজনে যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।