১৪ মার্চ, বিশেষ প্রতিনিধি:
ভৈরবে আশ্রায়ন প্রকল্পের ৪১ লাখ টাকা মূল্যের ১২৫ মেঃ টন গম কাজ না করে পুরা গম বিক্রি করে লুটপাট করে খেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া প্রকল্পটির নাম ছিল টুকচাঁনপুর আশ্রায়ন প্রকল্প। ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের টুকচাঁনপুর গ্রামে আশ্রায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। তৎসময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দ দেয়ার পর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ২২ মার্চ ২০২০ ইং ( স্মারক নং ৮১০) তারিখে বরাদ্দটির পত্র ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লুবনা ফারজানা। তখন ৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রকল্পটির সভাপতি করা হয়েছিল আগানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিনকে। তৎসময়ে মূল প্রকল্পে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১০০০ মেঃ টন গম প্রাথামিকভাবে বরাদ্দ দেয়া হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রথমে ৫০০ মেঃ টন গমের কাজ করতে বলা হয়। একাজ শেষ হলে পরবর্তীতে আরও ৫০০ মেঃ টন গম বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্ত তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে প্রাথামিকভাবে কাজের জন্য ১২৫ মেঃ টন গম প্রথম কিস্তিতে বরাদ্দ দেন। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বকারী ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা। তবে তিনি দায়িত্বে থাকলেও তদারকি করতেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সায়দুল্লাহ মিয়া ও তার ছেলে রফিউল আলম মঈন। এছাড়াও মঈনের বন্ধু যুবলীগের নেতা মোঃ আল-আমিন ঘটনায় জড়িত ছিল। প্রকল্পে নামমাত্র সভাপতি ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মমতাজ উদ্দিন। পরবর্তীতে প্রকল্পে কোনরকম কাজ না করে ১২৫ মেঃ টন গম কালবাজারে বিক্রি করে ৪১ লাখ টাকা লুটপাট করে খেয়ে ফেলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার ছেলেসহ স্থানীয় কতিপয় যুবলীগ, আওয়ামী লীগের লুটপাটকারীরা। গম বিক্রিতে জড়িত ছিল স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। অনুসন্ধানে জানা গেছে ওই যুবলীগ নেতা তৎসময়ে কিশোরগঞ্জের এক ময়দার মিলের মালিকের নিকট বরাদ্দের পুরা গম বিক্রি করে ৪১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তারা। পরে ঘটনাটি গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্য জানাজানি হলে প্রকল্পের বাকী গম প্রশাসন আর বরাদ্দ দেয়নি। তারপর প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়া হয়। তখন বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনের কানে গেলে এবিষয়ে কোনরকম আইনগত ব্যবস্থা নেননি তিনি। এমনকি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করার সাহস পায়নি বলে জানা যায়।
এবিষয়ে দুদক বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তৎসময়ে কারা গমের টাকা লুটপাট করে খেয়েছিল সবই বের হবে।
এবিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মমতাজ উদ্দিন বলেন, ৫ বছর আগের কথা এখন আর মনে নেই। তিনি বলেন আমি প্রকল্পের নামমাত্র সভাপতি ছিলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সায়দুল্লাহ মিয়া ও তার ছেলে মঈন, তার বন্ধু আল আমিন বিষয় বলতে পারবেন। প্রকল্পের কোন কাজ হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
এব্যাপারে প্রকল্প আনার সহযোগী মোঃ আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পের আমি কিছুইনা। তবে প্রকল্পটি আনার জন্য আমি সহযোগীতা করেছি। প্রথমে প্রকল্পের ১২৫ মেঃ টন গম বরাদ্দ দেয়া হলে কাজ নিয়ে বদনাম শুরু হয় আমি জানতে পারি। পরে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পটি বাতিল করেন। গম বিক্রির টাকা কারা লুটপাট করে খেয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন ঘটনায় আমি জড়িত নয়।
আগানগর ইউনিয়নের তৎকালীন সচিব মোঃ মনিরুজ্জামানের সাথে ফোনে এবিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, টুকচাঁনপুর আশ্রায়ন প্রকল্পে কোন কাজ তখন হয়নি। ১২৫ টন গম খাদ্য গুদাম থেকে ডেলিবারী হয়েছে তা আমি জানি । এই গম কোথায় গেল তা চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে পারবেন। আশ্রায়ন প্রকল্পে কোন রকম কাজ হয়নি যা আমি জানি।
এবিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়দুল্লাহ মিয়ার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার ছেলে মঈনের মোবাইল বন্ধ। তাই দুজনের সাথে এব্যাপারে কথা বলা সম্ভব হয়নি।