ভৈরবে  গ্রাহকদের জমাকৃত ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও  মাল্টিপারপাস মালিক।। অতি মুনাফার লোভে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে।। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ১৫৩ Time View

১২ মার্চ,   নিজস্ব  প্রতিনিধি:

 ভৈরবে গ্রাহকদের জমাকৃত ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার  অভিযোগ উঠেছে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকের শাহ আলমের বিরুদ্ধে। অতি মুনাফার লোভে অনেকেই এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। 

গ্রামের মানুষদের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশত গ্রাহকের কাছ থেকে ডিপোজিট জমা রেখে আমানত সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেওয়া এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের কয়েক শতাধিক গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন। 

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালে ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চানপুর চক বাজারে প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলে চানপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। গ্রাহকদের 

প্রতি লাখ টাকা ডিপোজিট রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দিবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের শাহ আলম মিয়া কয়েকশত গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা জমা নেন। প্রতি মাসে সুদের মত  মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা ও গ্রাহকদের জমি বিক্রির টাকা,  এমনকি অন্যান্য ব্যাংকে রাখা টাকাও উত্তোলন করে ডিপোজিট করেন চানপুর মাল্টিপারপাস নামের এই সমবায় সমিতিতে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক লাখ টাকা থেকে শুরু একেক জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা নেয়ার সময় সবার হাতেই একাধিক ব্যাংকের চেক ধরিয়ে দেন। এসব চেকের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক গ্রাহকের জমাকৃত প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন । পরবর্তীতে গ্রাহকরা যখন তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত চান ঠিক তখনই সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম মিয়া তার বসত বাড়ি বিক্রি করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতের আধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায় ।

পালানোর খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে  চানপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সামনে এসে কয়েকশ ভুক্তভোগীরা জড়ো হয়। পরে তারা প্রতারক শাহ আলমের বাড়িতে গেলে জানতে পারেন তার বসত বাড়ি গ্রামের এক  প্রভাবশালীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। 

দানু মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর ভালই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মত পরিশোধ করা হতো। আমার আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছে।

রোকেয়া বেগম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমার ছেলে সৌদি প্রবাসীর। জীবনের সঞ্চয় করা ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর কয়েক মাস একটা লভ্যাংশ পেয়েছিলাম। কিন্ত যখন টাকা ফেরত চাইলাম তার কিছু দিন পরই সব কার্যক্রম বন্ধ করে সমিতির মালিক পালিয়েছে।

আমার আরেক ছেলে সার্বিয়া যাওয়ার কথা তার ভিসাও এসে গেছে। আমার বড় ছেলের জমানো টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্ত এখন সে পলাতক। 

আরেক গ্রাহক শফিক মিয়া বলেন, এই সমিতিতে আমার নিজের ও দুই বোনের মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের কার্যালয়ে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। শুনেছি তাদের বাড়ি ঘর বিক্রি করে চলে গেছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমের সাথে কথা বলতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার বাসায় গেলে বাড়ীর মালিক ওয়াসির উদ্দিন জানান তার কাছে বাড়ীটি কিছুদিন আগে বিক্রি করে দেয় তিনি। শাহ আলম কোথায় আছেন তাহা তার জানা নেই বলে জানান তিনি। 

ভৈরব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুবাইয়া বেগম বলেন, ২০১০ সাল থেকে সমবায় সমিতিটি পরিচালনা করে আসছে শাহ আলম । তবে কিছুদিন হলো প্রতিষ্ঠান মালিক  গ্রাহকদের বিশাল অংকের ডিপোজিট অর্থ নিয়ে পালিয়েছে শুনলাম । এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সমিতির গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।  অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করাসহ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত আইনে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান ।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, সমবায় সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতির মাধ্যমে এলাকাবাসী যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সে ক্ষেত্রে   এটি প্রতারণা। এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। কোনো ভুক্তভোগী স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করলে   প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে  গ্রাহকদের জমাকৃত ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও  মাল্টিপারপাস মালিক।। অতি মুনাফার লোভে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে।। 

Update Time : ০৯:০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

১২ মার্চ,   নিজস্ব  প্রতিনিধি:

 ভৈরবে গ্রাহকদের জমাকৃত ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার  অভিযোগ উঠেছে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকের শাহ আলমের বিরুদ্ধে। অতি মুনাফার লোভে অনেকেই এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। 

গ্রামের মানুষদের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশত গ্রাহকের কাছ থেকে ডিপোজিট জমা রেখে আমানত সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেওয়া এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের কয়েক শতাধিক গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন। 

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালে ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চানপুর চক বাজারে প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলে চানপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। গ্রাহকদের 

প্রতি লাখ টাকা ডিপোজিট রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দিবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের শাহ আলম মিয়া কয়েকশত গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা জমা নেন। প্রতি মাসে সুদের মত  মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা ও গ্রাহকদের জমি বিক্রির টাকা,  এমনকি অন্যান্য ব্যাংকে রাখা টাকাও উত্তোলন করে ডিপোজিট করেন চানপুর মাল্টিপারপাস নামের এই সমবায় সমিতিতে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক লাখ টাকা থেকে শুরু একেক জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা নেয়ার সময় সবার হাতেই একাধিক ব্যাংকের চেক ধরিয়ে দেন। এসব চেকের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক গ্রাহকের জমাকৃত প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন । পরবর্তীতে গ্রাহকরা যখন তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত চান ঠিক তখনই সমবায় সমিতির সভাপতি শাহ আলম মিয়া তার বসত বাড়ি বিক্রি করে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতের আধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায় ।

পালানোর খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে  চানপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সামনে এসে কয়েকশ ভুক্তভোগীরা জড়ো হয়। পরে তারা প্রতারক শাহ আলমের বাড়িতে গেলে জানতে পারেন তার বসত বাড়ি গ্রামের এক  প্রভাবশালীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। 

দানু মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর ভালই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মত পরিশোধ করা হতো। আমার আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়েছে।

রোকেয়া বেগম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমার ছেলে সৌদি প্রবাসীর। জীবনের সঞ্চয় করা ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর কয়েক মাস একটা লভ্যাংশ পেয়েছিলাম। কিন্ত যখন টাকা ফেরত চাইলাম তার কিছু দিন পরই সব কার্যক্রম বন্ধ করে সমিতির মালিক পালিয়েছে।

আমার আরেক ছেলে সার্বিয়া যাওয়ার কথা তার ভিসাও এসে গেছে। আমার বড় ছেলের জমানো টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্ত এখন সে পলাতক। 

আরেক গ্রাহক শফিক মিয়া বলেন, এই সমিতিতে আমার নিজের ও দুই বোনের মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের কার্যালয়ে এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। শুনেছি তাদের বাড়ি ঘর বিক্রি করে চলে গেছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমের সাথে কথা বলতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার বাসায় গেলে বাড়ীর মালিক ওয়াসির উদ্দিন জানান তার কাছে বাড়ীটি কিছুদিন আগে বিক্রি করে দেয় তিনি। শাহ আলম কোথায় আছেন তাহা তার জানা নেই বলে জানান তিনি। 

ভৈরব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুবাইয়া বেগম বলেন, ২০১০ সাল থেকে সমবায় সমিতিটি পরিচালনা করে আসছে শাহ আলম । তবে কিছুদিন হলো প্রতিষ্ঠান মালিক  গ্রাহকদের বিশাল অংকের ডিপোজিট অর্থ নিয়ে পালিয়েছে শুনলাম । এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সমিতির গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।  অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করাসহ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত আইনে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান ।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, সমবায় সমিতির কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতির মাধ্যমে এলাকাবাসী যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সে ক্ষেত্রে   এটি প্রতারণা। এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। কোনো ভুক্তভোগী স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করলে   প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।