ভৈরবের  মেঘনায় অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। প্রশাসন নিরব।।  হুমকিতে তিন সেতু, তেলের ডিপো ও সার গুদাম। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:১৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • ৫৩ Time View

১১ মার্চ, নিজস্ব প্রতিনিধি:

 ভৈরবের মেঘনায় অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।  

এতে হুমকির মুখে পড়েছেন ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটির সারের গুদাম। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র  দাবি মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে বৈধ কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।

মেঘনায় নদীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব বাজার কাঠপট্রির সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকশত মিটার দূরবর্তী মেঘনা নদীতে একটি চক্র ১০-১৫ টি লোডিং ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। পরবর্তী সংবাদকর্মীদের দেখে ড্রেজার বন্ধ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা। তবে বালু উত্তোলনের বৈধতা বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোন জবাব দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার পাশে মেঘনা নদীর তীরে একটি চর জেগেছে। সে চরের কারণে সার কারখানার জেটিঘাটে নৌকা ভিড়তে পারছে না। একারনে  বিআইডব্লিউটিএ জেগে উঠা চর ড্রেজিংয়ের জন্য অনুমোদন দেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে চর ড্রেজিং না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা নদী থেকে অবাধে ১০-১৫ টি লোডিং ড্রেজারে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভৈরব বন্দরসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।  

উল্লেখ্য, মেঘনায় অবাধে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কারণে গত ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে হঠাৎ মেঘনা নদীর ভৈরব বন্দর ঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর পরেই মুহুর্তের মধ্য প্রায় ২শ ফুট জায়গা নদীতে তলিয়ে যায়। এর আগে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় দিকে মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন তেলের ডিপোঘাট এলাকায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ১৮০ মিটার ভূমিসহ প্রায় ২০টি কাঁচা ঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশসহ বেশ কিছু স্থাপনা মুহুর্তের মধ্য নদী গর্ভে বিলীন হয়েছিল। এখনো সর্বহারা হয়ে অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর আগেও ২০২২ সালের ভাঙনের দুটি রাইস মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ঘটনায় দুইজন শ্রমিক প্রাণ হারায়।

মেঘনা নদীতে অবাধে ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বাজার এলাকার ভৈরব-আশুগঞ্জ ঘাটে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে হুমকিতে থাকবে বন্দর নগর ভৈরব শহর। সেই সাথে হুমকিতে রয়েছে ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।

স্থানীয় রাইস মিল মালিক প্রিয়াল অভিযোগ করে বলেন, মেঘনা নদীতে অবাধে লোডিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বন্দর এলাকায় দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন। আমরা গত তিন বছরে তিনবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। দুটি রাইস মিল নদীগর্ভের বিলীন হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন শ্রমিক। 

এ বিষয়ে বিআইব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে জেগে উঠা একটি চর ড্রেজিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি গভীর মেঘনা নদী থেকে লোডিং ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান। 

কিশোরগঞ্জ জেলা নৌপুলিশের এসপি মো.আসাদুজ্জামান খান বলেন, মেঘনা নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কোন সরকারি অনুমোদন নেই। কেউ যদি নদী থেকে বালু উত্তোলন করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবের  মেঘনায় অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। প্রশাসন নিরব।।  হুমকিতে তিন সেতু, তেলের ডিপো ও সার গুদাম। 

Update Time : ০৯:১৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

১১ মার্চ, নিজস্ব প্রতিনিধি:

 ভৈরবের মেঘনায় অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।  

এতে হুমকির মুখে পড়েছেন ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটির সারের গুদাম। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র  দাবি মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে বৈধ কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।

মেঘনায় নদীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব বাজার কাঠপট্রির সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকশত মিটার দূরবর্তী মেঘনা নদীতে একটি চক্র ১০-১৫ টি লোডিং ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। পরবর্তী সংবাদকর্মীদের দেখে ড্রেজার বন্ধ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা। তবে বালু উত্তোলনের বৈধতা বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোন জবাব দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার পাশে মেঘনা নদীর তীরে একটি চর জেগেছে। সে চরের কারণে সার কারখানার জেটিঘাটে নৌকা ভিড়তে পারছে না। একারনে  বিআইডব্লিউটিএ জেগে উঠা চর ড্রেজিংয়ের জন্য অনুমোদন দেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে চর ড্রেজিং না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা নদী থেকে অবাধে ১০-১৫ টি লোডিং ড্রেজারে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভৈরব বন্দরসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।  

উল্লেখ্য, মেঘনায় অবাধে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কারণে গত ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে হঠাৎ মেঘনা নদীর ভৈরব বন্দর ঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর পরেই মুহুর্তের মধ্য প্রায় ২শ ফুট জায়গা নদীতে তলিয়ে যায়। এর আগে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় দিকে মেঘনা ব্রীজ সংলগ্ন তেলের ডিপোঘাট এলাকায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ১৮০ মিটার ভূমিসহ প্রায় ২০টি কাঁচা ঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশসহ বেশ কিছু স্থাপনা মুহুর্তের মধ্য নদী গর্ভে বিলীন হয়েছিল। এখনো সর্বহারা হয়ে অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর আগেও ২০২২ সালের ভাঙনের দুটি রাইস মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ঘটনায় দুইজন শ্রমিক প্রাণ হারায়।

মেঘনা নদীতে অবাধে ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বাজার এলাকার ভৈরব-আশুগঞ্জ ঘাটে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গনের স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে হুমকিতে থাকবে বন্দর নগর ভৈরব শহর। সেই সাথে হুমকিতে রয়েছে ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।

স্থানীয় রাইস মিল মালিক প্রিয়াল অভিযোগ করে বলেন, মেঘনা নদীতে অবাধে লোডিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বন্দর এলাকায় দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন। আমরা গত তিন বছরে তিনবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। দুটি রাইস মিল নদীগর্ভের বিলীন হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন শ্রমিক। 

এ বিষয়ে বিআইব্লিউটিএর আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে জেগে উঠা একটি চর ড্রেজিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি গভীর মেঘনা নদী থেকে লোডিং ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান। 

কিশোরগঞ্জ জেলা নৌপুলিশের এসপি মো.আসাদুজ্জামান খান বলেন, মেঘনা নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কোন সরকারি অনুমোদন নেই। কেউ যদি নদী থেকে বালু উত্তোলন করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।