৯ অক্টোবর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা -২৫ করার উদ্যেগ গ্রহন করেছে সরকার। কিন্ত আসন্ন বোরো মৌসুমে এই নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্ত ডিলারদের মধ্য বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে দেশে সারের সংকট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। একারনে নতুন নীতিমালা পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন ( বিএফএ) এর নেতৃবৃন্দ। একইসাথে সার ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধি করে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বেসরকারীভাবে সার আমদানী বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকার ধানমন্ডির সীমা ব্লোসম টাওয়ারে একটি কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সন্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে সারা দেশের সংগঠন বিএফএ’র পরিচালক ও ডিলারদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আহমেদ।
এসময় কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সারের ডিলার নিয়োগের নতুন নীতিমালা করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে যা বর্তমান সময়ের জন্য বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নয়। কারন বর্তমান নীতিমালায় একজন ডিলারকে একটি গুদাম ও একটি বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করতে হয়। কিন্ত নতুন নীতিমালায় একজন ডিলার ৩ টি বিক্রয়কেন্দ্র রাখতে হবে। এতে ডিলারদের পরিচালনা ব্যয় তিনগুন বেড়ে যাবে। কিন্ত কমিশন আগের মত কেজিতে ২ টাকাই থাকবে। এতে করে সার বিতরণ ও সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন তাড়াহুরা করে নতুন নীতিমালা করা হলে সারের সরকারী দামে এক ধরনের অস্থিরতা বাড়তে পারে। ফলে সার ডিলার ব্যবসাটি আর কার্যকর থাকবেনা। এখন নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময় নয়। কারন বর্তমানে মিনি পিকসিজন রবি শস্যের এবং সামনে বোরোর ভরা মৌসুম। এই ভরা মৌসুমে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গেলে মাঠে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হতে পারে।
সংবাদ সন্মলনে তিনি আরও বলেন ১৯৯৫ সালে সার ডিলারশীপ প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি উপজেলায় ২০০৯ সালের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নের ডিলারগন সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ করে আসছে। সারা দেশে সব মিলিয়ে বিসিআইসির ৫৬০০ ও বিএডিসির ৫২০০ মোট ১০৮০০ ডিলার এবং প্রায় ৪৫ হাজার খুচরা বিক্রেতা আছে। কফিল উদ্দিন আরও বলেন, নীতিমালা পরিবর্তনের আগে অবশ্যই অংশীজনের সঙ্গে সভা করা ও মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত তথ্য নেওয়া দরকার ছিল। সেটা করা হয়নি। তাদের দাবি এধরনের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য এপ্রিল – মে মাসের পর অর্থাৎ অবপিকসিজনে করতে হবে। মতামত নিতে হবে ডিলারদের। তানাহলে দেশে সার নিয়ে অস্থিশীল এবং সার সংকট হলে এর দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।
দেশের কিছু এলাকায় কৃষকদের সার না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএফএ’র সাবেক পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
বিএফএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান বকুল বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং করতে চাই। বেসরকারী আমদানী ও সরবরাহে যাতে স্বচ্ছতা থাকে সেটা আমরা চাই। তিনি বলেন সার সরবরাহ সুষ্ঠু করতে হলে ডিলারদের পরিবহন খরচ ও কমিশন বৃদ্ধি করতে হবে। ২০০৮ সালের পর জ্বালানী তেলের দাম কয়েকদফা বৃদ্ধি হয়েছে। তাছাড়া ব্যাংক সুদ, গুদাম ভাড়া, কর্মচারী বেতন, লোড আনলোড ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুন। অথচ ২০ বছর যাবত ডিলারদের কমিশন বাড়ানো হচ্ছেনা। সরকারী আমদানী খরচ বাড়লেও ৭০% সার বিএডিসি আমদানী করে। বেসরকারী পর্যায়ে সার আমদানী করা হলে সরকারের অর্থ সাশ্রয়সহ দ্রুত সার পরিবহন হবে এবং কৃষকরা সহজে কম সময়ে সার পাবে।
বিএফএ’র নেতৃবুন্দ খুচরা সার ব্যবসায়ীদেরকে বাতিল করতে চাইনা। কারন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিলারগন লাখ লাখ টাকা পাওনা আছে। খুচরা বিক্রেতারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত সার পৌঁছাতে পারে। তাই খুচরা ডিলার বাতিল করা নয়, তাদেরকে রেখে নীতিমালায় অন্তভুক্ত করতে হবে।
নতুন নীতিমালায় বিসিআসি ও বিএডিসি’র সার ডিলাদেরকে একত্রিকরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন নীতিমালায় ডিলারদের জামানত ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হবে। এটা অযৌক্তিক বলে তারা দাবি করেন। বর্তমানে বিসিআইসির ডিলারগন ২ লাখ টাকা ও বিএডিসির ডিলারগনের জামানত ২৫ হাজার টাকা। বিএডিসির ডিলারগন নন- ইউরিয়ার সার বরাদ্দ পেলেও ইউরিয়া পায়না। এই বৈষম্য দূর করে দুই প্রতিষ্ঠানের ডিলারদেরকে একত্রিকরণ করা হবে।