৮ অক্টোবর, নিজস্ব প্রতিনিধি
“মা ইলিশ ধরবো না, দেশের ক্ষতি করবো না” এই স্লোগানে মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌরসভায় সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার আয়োজনে এ চাল বিতরণ করা হয়। অনিয়ম পক্ষপাতিত্ব আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে চাল বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষা অফিসারের সাথে বাক বিকন্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধ জেলেরা। পরে জেলেদের ক্ষোভের মুখে এবং উপস্থিত সাংবাদিক বৃন্দের সুপারিশে আরো ৫ জেলেকে চাল দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান। তিনি চাল বিতরণের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ভৈরব পৌরসভা কার্যালয়ে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে এ চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় চাল বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক জেলে।

জেলেরা বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ইলিশ আহরণে ২২ দিন বিরত থাকার জন্য জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এ চাল বিতরণের কার্ডের তালিকা করতে গিয়ে অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব এবং স্বজনপ্রীতি হয়েছে। প্রকৃত পেশাদার জেলেদের অনেকেই নামের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। আর অপেশাদার ও সচ্ছল জেলেদের অনেকেই কার্ড পেয়েছে। এসব জেলেদের অনেকের ছেলেরাই ইতালি, সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। ভিন্ন পেশায় নিয়োজিতরাও পাচ্ছে ভিজিএফ এর চাল। যাচাই বাছাই না করেই কর্মকর্তার মনগড়া মতো জেলেদের নাম দিয়ে তালিকা করেছে। এতে করে সরকার নির্ধারিত প্রণোদনা কর্মসূচির সহায়তা থেকে পেশাদার হতদরিদ্র জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আয়োজনে ভৈরব পৌরসভা চত্বরে ২২০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।
জেলে ফারুক মিয়া বলেন, এখন মাছ ধরা বন্ধ আমি চলবো কি ভাবে। তারা মানুষ দেখে দেখে নাম ঢুকাচ্ছে। আমিও তো জেলে তাহলে আমাকে কেন চাল দিবে না।
আরেক জেলে হক মিয়া বলেন, আমার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস আসে নদীতে মাছে ধরেই। আজ চাল দিচ্ছে অনেকেই পাচ্ছে চাল কিন্তু আমার জেলে কার্ড থাকা সত্ত্বেও নামের তালিকায় নাম না থাকায় চাল দেই নাই।
এছাড়া আরেক জেলে বাদল মিয়া বলেন, অনেকের ছেলে বিভিন্ন দেশে ভালো পজিশনে আছে। তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। অনেকে আজ চাল নিতেও এসেছে। কিন্তু আমরা যারা প্রকৃত জেলে আমরা কেন চাল পাবো না।
এ বিষয়ে ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের ৫৬ জন জেলের মধ্যে আমরা যাচাই বাছাই করে ৩০ জন জেলের নামের তালিকা করেছি। চাল বিতরণকালে আরও ৫ জন জেলেকে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে জনপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। বাকি ৫ জেলের নামের তালিকা কেন বাদ রাখা হয় এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি জানান, যেদিন নামের তালিকা করা হয় ঐদিন অনেকে জেলে কার্ড নিয়ে আসলেও তাদের মধ্যে অনেককে দেখে প্রকৃত দরিদ্র জেলে মনে হয়নি। যার কারণে ৩৫ জনের তালিকা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। চাল বিতরণের সময় অনেক জেলে চাল নিতে আসলে তাদের মধ্য থেকে প্রকৃত জেলে দেখে বাকি ৫ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিকে চাল বিতরণের সময় ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান এর সাথে তালিকায় জেলের নাম অন্তর্ভুক্ত নিয়ে স্থানীয় জেলেদের তর্ক-বিতর্ক হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক বলেন, সারাদেশব্যাপী মা ইলিশ রক্ষাতে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন, আহরণ সব নিষিদ্ধ। সরকার মাসিক ভিত্তিতে ভৈরব পৌরসভার ভিতরে জেলে কার্ড অনুযায়ী তালিকার ২২০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। যেন তারা ইলিশ মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকে কিন্তু তারা নদীতে অন্যান্য মাছ আহরণ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন জানান, সরকার নির্ধারিত ২৫ কেজি করে চাল পাবে একজন জেলে। আর এই মৌসুমে শুধু মাত্র মা ইলিশ ছাড়া অন্য যে-কোনো মাছ ধরতে পারবে। বর্তমানে যাচাই বাছাই করে এক হাজার জেলে পরিবারের মধ্যে এই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। যদি ভুলবশতঃ কোন জেলের নাম বাদ পড়ে যায় তবে তাকে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।