২৪ সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি
ভৈরব পৌরসভার দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির ৩৪ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কমিউনিটি কর্মী মুর্শিদা বেগম অ্যানি ও সহকারী কর আদায়কারী শ্যামলী বেগম এর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক’কে তদন্ত কমিটির প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দীর্ঘ দুই বছরেও এবিষয়ে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। ফলে এটাকা আদায় নিয়ে দেখা দিয়েছে এক অনিশ্চয়তা।
অভিযুক্ত মুর্শিদা বেগম অ্যানি ও শ্যামলী বেগম ভৈরব পৌরসভার কর্মচারী। তারা ভৈরব পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর তদন্তে টাকা আত্মসাৎ বিষয়টি প্রমানিত হলে উক্ত দুইজনকে পৌর কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন সেক্টর প্রকল্প ও ভৈরব পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরু থেকেই এই কর্মসূচিতে দরিদ্র মানুষের জন্য ঋণ বিতরণ, কিস্তি আদায় ও সঞ্চয়ের টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দেওয়ার কার্যক্রম সঠিকভাবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরিচালনা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল এই চার বছরে পৌরসভার দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির ৭২ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৫৯ টাকা বিতরণ করা হয়। এরপর পৌরসভার মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু দায়িত্বে এলে দেখা যায় আদায়ের টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার মধ্য অনেক টাকার গড়মিল।
পরে মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক’কে তদন্ত কমিটির প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিও ওই দুই নারীর টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। তারপর পৌর কর্তৃপক্ষ দুইজন নারী কর্মচারীকে শোকশ নোটিশ জারি করে। শোকশের জবাব সন্তোষ না হলে কর্তৃপক্ষ তারা দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর তারা দুজন আত্মসাত করা টাকার কিছু অংশ ব্যাংকে জমা করে ও নগদে পৌরসভায় জমা দেয়। বর্তমানে দুজনের কাছে এখনও পাওনা ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫৯ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কমিউনিটি কর্মী সহকারী কর আদায়কারী মুর্শিদা বেগম অ্যানি’কে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
আরেক অভিযুক্ত সহকারী কর আদায়কারী শ্যামলী বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি গ্রাহকদের থেকে যে টাকা তুলেছি সব টাকা আগে পরে পৌরসভায় জমা দিয়েছি। অনেক সময় গ্রাহকরা টাকা জমা দেই নাই বা সঞ্চয়ের টাকা হিসেবের খাতায় উঠে নাই। যার কারণে টাকার হিসাবটা গড়মিল রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন আমার কাছে পৌর কর্তৃপক্ষ এখনও ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা পাওনা আছে। এটাকা আমি শীঘ্রই জমা দিয়ে দিব। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ আমার উপর ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে ভৈরব পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক বলেন, ২০০৬ সাল থেকে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। আর এটি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই দুই নারী কর্মী এই টাকা ব্যাংকে জমা না করে নিজেরা আত্মসাৎ করে। পরে তদন্তে তা প্রমাণিত হলে তাদের দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখন তারা কিছু টাকা ব্যাংকে ও নগদে ফেরতও দেয়। কিন্তু বাকী ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৮ টাকা এখনো তাদের কাছে পাওনা রয়ে গেছে । বর্তমানে এই টাকা উদ্ধারে পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, বিষয়টি অনেকদিন আগের ঘটনা। তখন আমি দায়িত্বে ছিলামনা, দায়িত্ব ছিল তৎকালীন মেয়রের। তিনি বলেন আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘটনাটি আমার নজরে আসে। দুইজন নারী কর্মীকে টাকা ফেরত দিতে পৌরসভা থেকে বার বার নোটিশ করা হচ্ছে । তবে শীঘ্রই টাকা জমা না দিলে দুইজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।