৩০ আগষ্ট, নিজস্ব প্রতিনিধি
কোনরকম নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে একটি প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ভৈরব-আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি নদী থেকে লোড ড্রেজারে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । প্রতিদিন ১০/১২টি লোড ড্রেজারে কয়েকদিন যাবত রাতদিন ২৪ ঘন্টায় কয়েক লাখ ঘন ফুট বালি উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা । এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জাতীয় গ্রীড লাইনের বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও চর সোনারাম পুর গ্রামটি হুমকির মুখে পড়েছে । যে কোন সময় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক জাতীয় গ্রীড লাইনের ভৈরব-–আশুগঞ্জ ২টি টাওয়ার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আশুগঞ্জ থেকে উত্তর বঙ্গে সরবরাহকৃত বিদ্যুত বন্ধ হয়ে কল-কারখানায় উৎপাদন বন্ধসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ । অন্যদিকে চর সোনারামপুরের বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তাই জাতীয় স্বার্থে এসব স্থান থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান স্থানীয়রা ।
জানা যায়, ২০২৩ সালে মীর আক্তার কোং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ফোর লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বালি সরবরাহের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার পান । ওই বছরই তারা কাজ শুরু করে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে ৩৭ লাখ ঘনফুট বালি উত্তোলন করেন বলে জানান মীর আক্তার কোং জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত বাবু । পরে ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর বালি উত্তোলন কাজ স্থগিত করেন । কিন্ত বর্তমানে ওই কোম্পানীর নাম ভাঙিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি নদী থেকে লোড ড্রেজারে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে । এ বিষয়ে ইন্দ্রজিত বাবু আরো জানান,কারা তাদের কোম্পানীর নাম ভাঙিয়ে বালি উত্তোলন করছে তা তিনি জানেননা । তবে খোজঁ নিয়ে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
আজ শনিবার যুগান্তরসহ কয়েকটি মিডিয়ার কর্মীরা সরজমিনে মেঘনা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ১০/১২ টি লোডড্রেজার একসঙ্গে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। তাদের নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে রাজী হয়নি। কার নির্দেশে বালু উত্তোলন করছে এবিষয়ে কথা বলতে রাজী হয়নি তারা। এক পর্যায়ে তারা রাগান্বিত হয়ে সাংবাদিকদেরকে বলেন আপনারা কোন ছবি তুলবেননা, ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
আশুগঞ্জের সোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মানিক মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের কাছে মেঘনা নদী থেকে বেশ কয়েকদিন যাবত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে আমরা আতংকে আছি। তিনি বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবি করেন।
এবিষয়ে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিচালক ( টেকনিক্যাল) আবদুল মজিদ জানান, আমাদের বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছাকাছি মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে যদি নদী ভাঙ্গনে ক্ষতি হয় তবে সারাদেশের গ্রাহকরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরাতো বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারবনা। যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
ভৈরব বিদ্যুত বিতরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল হোসেন এবিষয়ে বলেন, আশুগঞ্জ বিদ্যুত তাপ কেন্দ্র থেকে আমাদের বিদ্যুত পাই। কেন্দ্রটি বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ভৈরববাসীসহ সারাদেশের কিছু অংশ বিদ্যুত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।