ভৈরবে  পরকিয়ায় জড়িয়ে নিজের শিশু সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করল মা। ঘটনায় জড়িত মা পুলিশের হাতে আটক।। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:১৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫
  • ৬২৯ Time View

৮ জুন, নিজস্ব  প্রতিনিধি

ভৈরবে স্বামীর বন্ধুর সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে নিজের শিশু সন্তান নুসরাত ( দেড় বছর) কে গলাটিপে হত্যা করল মা আয়েশা বেগম  (২৫)। গতকাল ঈদের দিন শনিবার রাত সাড়ে  ৭ টায় নির্মম নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক  ঘটনাটি ঘটেছে শহরের জগনাথপুর সংলগ্ন লক্ষীপুর এলাকায় শাহিন কবিরের মালিকানাধীন  ভাড়াটিয়া বাসায়। এবাসায় স্বামী – স্ত্রীর পরিচয়ে তারা ভাড়া থাকত।  আয়েশার স্বামীর বাড়ী নরসিংদি জেলার বেলাব উপজেলার নিলক্ষা গ্রামে। তার স্বামীর নাম ওমর ফারুক। সে জুতা কারখারার শ্রমিক। এই দম্পত্তির আরেকটি ছেলে সন্তান আছে, তার নাম আলিফ ( সাড়ে ৩ বছর বয়স)। শনিবার রাত ৯ টায় ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।  হত্যার কথা পুলিশের কাছে মা আয়েশা স্বীকার করেছে।  আজ রোববার দুপুরে শিশুটির মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনায়  মামলার প্রস্ততি চলছে।

পুলিশ ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বেলাব উপজেলার নিলক্ষা গ্রামের কৃষক আবুল কালামের ছেলে ওমর ফারুক ৫ বছর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের মেয়ে আয়েশা বেগমকে বিয়ে করে। স্বামী ওমর ফারুক ভৈরবের একটি পাদুকা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। তারই সহকর্মী ছিল পাদুকা কারখানার শ্রমিক মোঃ আলমগীর। এই সুবাদে আলমগীর বন্ধু ওমর ফারুকের বাসায় যাতায়ত করত। এই সুযোগে তার স্ত্রী আয়েশা স্বামীর সহকর্মী বন্ধু আলমগীরের পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে গত দেড়মাস আগে স্বামীকে না জানিয়ে আয়েশা তার বড় সন্তান আলিফকে স্বামীর বাড়ী রেখে ছোট সন্তান নুসরাতকে কোলে নিয়ে আলমগীরের সাথে পালিয়ে ভৈরব শহরে শাহিন কবিরের বাসা ভাড়া  করে গোপনে বসবাস করতে থাকে। এঘটনার পর স্বামীসহ তার পরিবার দেড়মাস যাবত খোঁজেও তাকে পায়নি। এরই মধ্য স্বামী ওমর ফারুক ঘটনা টের পেয়ে  লজ্জায় ঘৃনায়  বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। শনিবার রাত ১১ টায় ভৈরব থানা পুলিশ আয়েশার শুশুর আবুল কালামকে ফোনে ঘটনাটি অবহিত করলে রাতেই তিনি থানায় উপস্থিত হয়।

আয়েশার শুশুর আবুল কালাম জানান, গতকাল রাত ১১ টায়  ঘটনার খবর পেয়ে বড় নাতি আলিফকে নিয়ে ভৈরব থানায় আসি। বাড়ী থেকে দেড়মাস আগে আয়েশা কোলের শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখোঁজি করেছি, কিন্ত পাইনি। তার বাবার বাড়ীতে যোগাযোগ করলে বাবা মান্নান মিয়া বলেছেন মেয়ে তার বাড়ীতে আছে। তিনি বলেন ঘটনার পর আমার ছেলেও নিখোঁজ রয়েছে। পুত্রবধূর এমন ঘটনায় তিনি হতবাক হয়েছেন। পরকিয়া জড়িয়ে নিজের সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করবে আমি কখনও ভাবতে পারেনি। ঘটনায় আমি মামলা করব। এঘটনায় আয়েশাসহ তার পরকিয়া যুবক আলমগীরের কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী এবিষয়ে জানান, শনিবার রাত ৯ টায় ঘটনার খবর পেয়ে শহরের লক্ষীপুর এলাকার শাহিন কবিরের মালিকানাধীন ভাড়া বাসা থেকে শিশুটির মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এসময় মা আয়েশাকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি পরকিয়ার কারনে ঘটেছে। হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে মা আয়েশা। শিশুটির ময়না তদন্ত করার জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয় লাশ।  আজ রোববার আয়েশাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠাব। ঘটনায় আয়েশার শুশুর আবুল কালাম থানায় বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্ততি চলছে। পরে মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে কলেজ কর্তৃপক্ষের  গাফিলতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি শিক্ষার্থী   মারজিয়া।

ভৈরবে  পরকিয়ায় জড়িয়ে নিজের শিশু সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করল মা। ঘটনায় জড়িত মা পুলিশের হাতে আটক।। 

Update Time : ০৯:১৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

৮ জুন, নিজস্ব  প্রতিনিধি

ভৈরবে স্বামীর বন্ধুর সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে নিজের শিশু সন্তান নুসরাত ( দেড় বছর) কে গলাটিপে হত্যা করল মা আয়েশা বেগম  (২৫)। গতকাল ঈদের দিন শনিবার রাত সাড়ে  ৭ টায় নির্মম নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক  ঘটনাটি ঘটেছে শহরের জগনাথপুর সংলগ্ন লক্ষীপুর এলাকায় শাহিন কবিরের মালিকানাধীন  ভাড়াটিয়া বাসায়। এবাসায় স্বামী – স্ত্রীর পরিচয়ে তারা ভাড়া থাকত।  আয়েশার স্বামীর বাড়ী নরসিংদি জেলার বেলাব উপজেলার নিলক্ষা গ্রামে। তার স্বামীর নাম ওমর ফারুক। সে জুতা কারখারার শ্রমিক। এই দম্পত্তির আরেকটি ছেলে সন্তান আছে, তার নাম আলিফ ( সাড়ে ৩ বছর বয়স)। শনিবার রাত ৯ টায় ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।  হত্যার কথা পুলিশের কাছে মা আয়েশা স্বীকার করেছে।  আজ রোববার দুপুরে শিশুটির মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয়। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনায়  মামলার প্রস্ততি চলছে।

পুলিশ ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বেলাব উপজেলার নিলক্ষা গ্রামের কৃষক আবুল কালামের ছেলে ওমর ফারুক ৫ বছর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের মেয়ে আয়েশা বেগমকে বিয়ে করে। স্বামী ওমর ফারুক ভৈরবের একটি পাদুকা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। তারই সহকর্মী ছিল পাদুকা কারখানার শ্রমিক মোঃ আলমগীর। এই সুবাদে আলমগীর বন্ধু ওমর ফারুকের বাসায় যাতায়ত করত। এই সুযোগে তার স্ত্রী আয়েশা স্বামীর সহকর্মী বন্ধু আলমগীরের পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে গত দেড়মাস আগে স্বামীকে না জানিয়ে আয়েশা তার বড় সন্তান আলিফকে স্বামীর বাড়ী রেখে ছোট সন্তান নুসরাতকে কোলে নিয়ে আলমগীরের সাথে পালিয়ে ভৈরব শহরে শাহিন কবিরের বাসা ভাড়া  করে গোপনে বসবাস করতে থাকে। এঘটনার পর স্বামীসহ তার পরিবার দেড়মাস যাবত খোঁজেও তাকে পায়নি। এরই মধ্য স্বামী ওমর ফারুক ঘটনা টের পেয়ে  লজ্জায় ঘৃনায়  বাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। শনিবার রাত ১১ টায় ভৈরব থানা পুলিশ আয়েশার শুশুর আবুল কালামকে ফোনে ঘটনাটি অবহিত করলে রাতেই তিনি থানায় উপস্থিত হয়।

আয়েশার শুশুর আবুল কালাম জানান, গতকাল রাত ১১ টায়  ঘটনার খবর পেয়ে বড় নাতি আলিফকে নিয়ে ভৈরব থানায় আসি। বাড়ী থেকে দেড়মাস আগে আয়েশা কোলের শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখোঁজি করেছি, কিন্ত পাইনি। তার বাবার বাড়ীতে যোগাযোগ করলে বাবা মান্নান মিয়া বলেছেন মেয়ে তার বাড়ীতে আছে। তিনি বলেন ঘটনার পর আমার ছেলেও নিখোঁজ রয়েছে। পুত্রবধূর এমন ঘটনায় তিনি হতবাক হয়েছেন। পরকিয়া জড়িয়ে নিজের সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করবে আমি কখনও ভাবতে পারেনি। ঘটনায় আমি মামলা করব। এঘটনায় আয়েশাসহ তার পরকিয়া যুবক আলমগীরের কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী এবিষয়ে জানান, শনিবার রাত ৯ টায় ঘটনার খবর পেয়ে শহরের লক্ষীপুর এলাকার শাহিন কবিরের মালিকানাধীন ভাড়া বাসা থেকে শিশুটির মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এসময় মা আয়েশাকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি পরকিয়ার কারনে ঘটেছে। হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে মা আয়েশা। শিশুটির ময়না তদন্ত করার জন্য কিশোরগঞ্জ পাঠানো হয় লাশ।  আজ রোববার আয়েশাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠাব। ঘটনায় আয়েশার শুশুর আবুল কালাম থানায় বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্ততি চলছে। পরে মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।