ভৈরবে রাত হলেই ছিনতাই আতংকে মানুষ। একমাসে একাধিক ছিনতাই। নিহত – ১, আহত ২০।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ১৯১ Time View

৪ জুন, নিজস্ব  প্রতিনিধি

ভৈরবে রাত হলেও ছিনতাই আতংকে থাকে মানুষ। শহরের একাধিক সড়কে প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়া বা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি আটকিয়ে পথচারীদের টাকা পয়সা, মোবাইল, গহনা নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিলেই ছুরিকাঘাতে আহত করা হয় পথচারীদের। গত সোমবার রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমল হুদা তার স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরব রেলস্টেশনে যাওয়ার পথে তাদের রিক্সা গতিরোধ করে টাকা পয়সা, স্বর্নের গহনা নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। ঘটনার সময় বাধা দিলে তার স্ত্রীর কান ছিড়েঁ নিয়ে যায় কানের জেওর। এর আগে গত সপ্তাহে সজীব মিয়া নামের একজন ট্রাক চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। শহরের স্টেশন রোড, ভৈরবপুর উত্তর পাড়া গার্লস হাইস্কুল রোড, স্টেডিয়াম রোড, নাটাল মোড়, নদীর পাড়, মনামারা সেতু রোড, মালগুদাম রোড, কামাল সরকার খাল রোড, সম্ভুপুর, ভৈরব – কিশোরগঞ্জ সড়ক, পঞ্চবটি রোড, আমলাপাড়া রোড, জগনাথপুর রোড, বাসস্ট্যান্ড, ভৈরব বাজারের বিভিন্ন রোডসহ বিভিন্ন রোডগুলিতে প্রতিদিন ছিনতাই হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে রোডগুলি অনিরাপদ হয়ে পড়ে। আবার ভোররাতে কোন যাত্রী রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড যাতায়ত করলেই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সব হারাতে হয়। পুলিশ শহরের অলিগলিতে টহল দিলেও দমন করতে পারছেনা ছিনতাই। কয়েক বছর আগে ছিনকাইকারীদের হাতে এস আই মোস্তাফিজুর রহমানসহ দুইজন পুলিশ কনেস্টেবল ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। তারা ছিনতাইকারীদের ধরতে গেলে ছুরির আঘাতে তিনজন নিহত হয়। মাদক ব্যবসা ও সেবনকে কেন্দ্র করেই এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয় মাদক সেবনকারীরা মাদকের টাকা যোগার করতে এসব ছিনতাই করছে। গত রোববার পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে ১০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। ছিনতাই প্রতিরোধে ভৈরবে নাগরিক সমাজ মাঠে নেমেছে। নাগরিক সমাজের সদস্যরা গত এক সপ্তাহ যাবত রাতে সড়কগুলি পাহারায় নেমেছে। তারপরও ছিনতাই কমছেনা। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির কারনে ভৈরব শহর এখন আতংকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত একমাসে ভৈরবে কমপক্ষে ৩০/৪০ টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ১৫/২০  জন আহত হয়। এসব ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করে আবার কেউ পুলিশের ঝামেলা এড়াতে থানায় অভিযোগ দিতে যায়না। 

নাগরিক সমাজের নেতা আল- মামিন ও আর এ মারুকী শাহিন বলেন, আমরা মাঠে নেমেছি ছিনতাই প্রতিরোধ করতে। ইতিমধ্যই সভা – সমাবেশ, মতবিনিময় করছি। মানুষ মুখে মুখে প্রতিবাদ করে, সমালোচনা করে কিন্ত কেউ এগিয়ে আসেনা। চোখের সামনে ছিনতাই হলেও ভয়ে বাধা দেয়না। পুলিশ এক রোডে টহল দিলে অন্যরোডে ছিনতাই হয়। ভৈরবের আইনশৃংখলা ভেঙ্গে পড়েছে ছিনতাইয়ের কারনে। আমরা এসব ঘটনা পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে অবগত করলেও কোন কাজ হচ্ছেনা। কমিটির আরেক সদস্য সাংবাদিক সোহেলুর রহমান বলেন, ভৈরবের ছিনতাই কমাতে আমরা মাঠে নেমেছি। রাতের বেলায় পাহারা দিচ্ছি বিভিন্ন সড়ক। তারপরও ছিনতাই কমছেনা। তিনি পুলিশকে আরও সক্রীয় হতে অনুরোধ করেন এবং মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। 

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, শহরের ছিনতাই কমাতে পুলিশ কাজ করছে। প্রতিদিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছি কিন্ত আদালত থেকে জামিন পেয়ে অপরাধীরা আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। চিন্হিত ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন ভৈরবের মাদক সেবনকারীরা ছিনতাইয়ে জড়িত। মাদক ব্যবসা ও সেবন দিন দিন বাড়ছে। অপরাধ কমাতে গেলে সমাজের মানুষকে সচেতন হতে হবে। জনগন সহযোগীতা করলে অপরাধ কমানো  সম্ভব। তারপরও পুলিশ চেষ্টা করছে ছিনতাই প্রতিরোধ করতে। আইনশৃংখলা দমনে জনগনের সহযোগীতা অনেক প্রয়োজন তার দাবি। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে কলেজ কর্তৃপক্ষের  গাফিলতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি শিক্ষার্থী   মারজিয়া।

ভৈরবে রাত হলেই ছিনতাই আতংকে মানুষ। একমাসে একাধিক ছিনতাই। নিহত – ১, আহত ২০।।

Update Time : ১২:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

৪ জুন, নিজস্ব  প্রতিনিধি

ভৈরবে রাত হলেও ছিনতাই আতংকে থাকে মানুষ। শহরের একাধিক সড়কে প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়া বা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি আটকিয়ে পথচারীদের টাকা পয়সা, মোবাইল, গহনা নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিলেই ছুরিকাঘাতে আহত করা হয় পথচারীদের। গত সোমবার রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজমল হুদা তার স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরব রেলস্টেশনে যাওয়ার পথে তাদের রিক্সা গতিরোধ করে টাকা পয়সা, স্বর্নের গহনা নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। ঘটনার সময় বাধা দিলে তার স্ত্রীর কান ছিড়েঁ নিয়ে যায় কানের জেওর। এর আগে গত সপ্তাহে সজীব মিয়া নামের একজন ট্রাক চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। শহরের স্টেশন রোড, ভৈরবপুর উত্তর পাড়া গার্লস হাইস্কুল রোড, স্টেডিয়াম রোড, নাটাল মোড়, নদীর পাড়, মনামারা সেতু রোড, মালগুদাম রোড, কামাল সরকার খাল রোড, সম্ভুপুর, ভৈরব – কিশোরগঞ্জ সড়ক, পঞ্চবটি রোড, আমলাপাড়া রোড, জগনাথপুর রোড, বাসস্ট্যান্ড, ভৈরব বাজারের বিভিন্ন রোডসহ বিভিন্ন রোডগুলিতে প্রতিদিন ছিনতাই হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে রোডগুলি অনিরাপদ হয়ে পড়ে। আবার ভোররাতে কোন যাত্রী রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড যাতায়ত করলেই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সব হারাতে হয়। পুলিশ শহরের অলিগলিতে টহল দিলেও দমন করতে পারছেনা ছিনতাই। কয়েক বছর আগে ছিনকাইকারীদের হাতে এস আই মোস্তাফিজুর রহমানসহ দুইজন পুলিশ কনেস্টেবল ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। তারা ছিনতাইকারীদের ধরতে গেলে ছুরির আঘাতে তিনজন নিহত হয়। মাদক ব্যবসা ও সেবনকে কেন্দ্র করেই এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয় মাদক সেবনকারীরা মাদকের টাকা যোগার করতে এসব ছিনতাই করছে। গত রোববার পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে ১০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। ছিনতাই প্রতিরোধে ভৈরবে নাগরিক সমাজ মাঠে নেমেছে। নাগরিক সমাজের সদস্যরা গত এক সপ্তাহ যাবত রাতে সড়কগুলি পাহারায় নেমেছে। তারপরও ছিনতাই কমছেনা। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির কারনে ভৈরব শহর এখন আতংকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত একমাসে ভৈরবে কমপক্ষে ৩০/৪০ টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ১৫/২০  জন আহত হয়। এসব ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করে আবার কেউ পুলিশের ঝামেলা এড়াতে থানায় অভিযোগ দিতে যায়না। 

নাগরিক সমাজের নেতা আল- মামিন ও আর এ মারুকী শাহিন বলেন, আমরা মাঠে নেমেছি ছিনতাই প্রতিরোধ করতে। ইতিমধ্যই সভা – সমাবেশ, মতবিনিময় করছি। মানুষ মুখে মুখে প্রতিবাদ করে, সমালোচনা করে কিন্ত কেউ এগিয়ে আসেনা। চোখের সামনে ছিনতাই হলেও ভয়ে বাধা দেয়না। পুলিশ এক রোডে টহল দিলে অন্যরোডে ছিনতাই হয়। ভৈরবের আইনশৃংখলা ভেঙ্গে পড়েছে ছিনতাইয়ের কারনে। আমরা এসব ঘটনা পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে অবগত করলেও কোন কাজ হচ্ছেনা। কমিটির আরেক সদস্য সাংবাদিক সোহেলুর রহমান বলেন, ভৈরবের ছিনতাই কমাতে আমরা মাঠে নেমেছি। রাতের বেলায় পাহারা দিচ্ছি বিভিন্ন সড়ক। তারপরও ছিনতাই কমছেনা। তিনি পুলিশকে আরও সক্রীয় হতে অনুরোধ করেন এবং মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান। 

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, শহরের ছিনতাই কমাতে পুলিশ কাজ করছে। প্রতিদিন ছিনতাইকারী গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছি কিন্ত আদালত থেকে জামিন পেয়ে অপরাধীরা আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। চিন্হিত ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশ প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন ভৈরবের মাদক সেবনকারীরা ছিনতাইয়ে জড়িত। মাদক ব্যবসা ও সেবন দিন দিন বাড়ছে। অপরাধ কমাতে গেলে সমাজের মানুষকে সচেতন হতে হবে। জনগন সহযোগীতা করলে অপরাধ কমানো  সম্ভব। তারপরও পুলিশ চেষ্টা করছে ছিনতাই প্রতিরোধ করতে। আইনশৃংখলা দমনে জনগনের সহযোগীতা অনেক প্রয়োজন তার দাবি।