ভৈরবে ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাহিদ আদালতের রায়ের ৪ বছর পর ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • ৭০ Time View

৮ মে, বিশেষ প্রতিনিধি

ভৈরবে ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদ হাইকোর্টের রায়ের ৪ বছর পর ১০ লাখ টাকা ( আংশিক) ক্ষতিপূরণ পেল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে শুনানীকালে এটাকার পে- অর্ডার আসামী পক্ষ  ওয়ার্কশপ মালিক মোঃ ইয়াকুব আলী বিচারকের কাছে তুলে দেন। এতথ্য জনপদ সংবাদকে  টেলিফোনে  নির্শ্বিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবি ব্যরিস্টার ওমর ফারুক।

  সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭  জন বিচারপতি দ্বৈত বেঞ্চে আজ বাদী পক্ষের আবেদনের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। মামলার বাদী শিশুর বাবা  নিয়ামুল আনোয়ারের পক্ষে আজ শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল অনিকার হক। অপরদিকে আসামী পক্ষে শুনানী করেন সিনিয়র আইনজীবি মোঃ রুহুল কুদ্দুছ কাজল। এখানে উল্লেখ্য শিশুর হাত হারানো ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারকদ্বয় আসামী পক্ষকে ৩০ লাখ টাকা ও শিশুটির  লেখাপড়া চলাকালে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। পরে মামলাটির আদেশের বিরুদ্ধে  আসামী পক্ষ সুপ্রীম কোর্টে  আপীল করলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়। এরপর আসামী ইয়াকুব আলী ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে তালবাহানা করলে বাদী পক্ষ ঘটনাটি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে  অবহিত করেন। তারপর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আসামীকে আটক করে ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপারসহ  তাকে নিয়ে  আদালতে হাজির হতে। সেই মোতাবেক গত ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরি  তাকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হলে মামলাটির এদিন   শুনানী হয়। এদিন আদালত আদেশ দিয়েছিলেন ক্ষতিপূরনের টাকা নিয়ে ৮ মে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত থাকতে। আদেশ মোতাবেক আজ বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরনের আংশিক ১০ লাখ টাকার পে- অর্ডার আসামী পক্ষ আদালতের সম্মূখে বাদীর হাতে তুলে দেন। আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আগামী ১৩ মে। এদিন এই মামলার আবার শুনানী হবে এবং বাকী টাকা পরিশোধ করতে হবে আসামী পক্ষের।

জানা গেছে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভৈরবের ইয়াকুব ওয়ার্কশপে শিশু নাহিদকে (৮)  জোর করে কাজ করাতে নিলে মেশিনে তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে যায়। পরে চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে কনুই পর্যন্ত হাত কেটে ফেলে। পরে শিশু নাহিদের বাবা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে ওয়ার্কশপ মালিক ইয়াকুব আলীর কাছে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর গত বছর জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেন। এরপর আসামী পক্ষ মামলাটি সুর্প্রিম কোর্টে আপীল করলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়।

এবিষয়ে মামলার বাদী শিশুর বাবা নিয়ামুল আনোয়ার জনপদ  প্রতিনিধিকে ফোনে  বলেন, আমি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। ইয়াকুব আলীর কারনে আমার ছেলের জীবন আজ পঙ্গু হয়েছে। তারপর আদালতের আদেশ অমান্য করে আমার ছেলের ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে আমি বার বার আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার পর আজ ১০ লাখ টাকার পে- অর্ডার পেলাম। তিনি বলেন  আগামী ১৩ মে মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বাদী পক্ষের আইনজীবি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জনপদ সংবাদকে  টেলিফোনে জানান, আসামী ইয়াকুব আলী আদালতের আদেশ অমান্য করে ক্ষতিপূরনের টাকা দিতে গড়িমশি করছিল। পরে আদালত অবমাননার অভিযোগ করার পর আজ ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আগামী ১৩ মে আবারও মামলার তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এদিন তাকে ক্ষতিপূরনের বাকী সব টাকা দিতে হবে। আমরা ধার্য তারিখে আবারও শুনানী করব।

আসামী পক্ষের আইনজীবি মোঃ রুহুল কুদ্দুছ কাজল জানান, আসামী পক্ষ ক্ষতিপূরণের পুরা টাকা আজ যোগার করে আনতে পারে নাই। তাই ১০ লাখ টাকা আজ পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাহিদ আদালতের রায়ের ৪ বছর পর ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল। 

Update Time : ১০:২৪:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

৮ মে, বিশেষ প্রতিনিধি

ভৈরবে ওয়ার্কশপে হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদ হাইকোর্টের রায়ের ৪ বছর পর ১০ লাখ টাকা ( আংশিক) ক্ষতিপূরণ পেল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে শুনানীকালে এটাকার পে- অর্ডার আসামী পক্ষ  ওয়ার্কশপ মালিক মোঃ ইয়াকুব আলী বিচারকের কাছে তুলে দেন। এতথ্য জনপদ সংবাদকে  টেলিফোনে  নির্শ্বিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবি ব্যরিস্টার ওমর ফারুক।

  সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭  জন বিচারপতি দ্বৈত বেঞ্চে আজ বাদী পক্ষের আবেদনের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। মামলার বাদী শিশুর বাবা  নিয়ামুল আনোয়ারের পক্ষে আজ শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল অনিকার হক। অপরদিকে আসামী পক্ষে শুনানী করেন সিনিয়র আইনজীবি মোঃ রুহুল কুদ্দুছ কাজল। এখানে উল্লেখ্য শিশুর হাত হারানো ঘটনায় ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারকদ্বয় আসামী পক্ষকে ৩০ লাখ টাকা ও শিশুটির  লেখাপড়া চলাকালে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিমাসে ৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। পরে মামলাটির আদেশের বিরুদ্ধে  আসামী পক্ষ সুপ্রীম কোর্টে  আপীল করলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়। এরপর আসামী ইয়াকুব আলী ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে তালবাহানা করলে বাদী পক্ষ ঘটনাটি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে  অবহিত করেন। তারপর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আসামীকে আটক করে ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপারসহ  তাকে নিয়ে  আদালতে হাজির হতে। সেই মোতাবেক গত ২১ এপ্রিল পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরি  তাকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হলে মামলাটির এদিন   শুনানী হয়। এদিন আদালত আদেশ দিয়েছিলেন ক্ষতিপূরনের টাকা নিয়ে ৮ মে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত থাকতে। আদেশ মোতাবেক আজ বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরনের আংশিক ১০ লাখ টাকার পে- অর্ডার আসামী পক্ষ আদালতের সম্মূখে বাদীর হাতে তুলে দেন। আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আগামী ১৩ মে। এদিন এই মামলার আবার শুনানী হবে এবং বাকী টাকা পরিশোধ করতে হবে আসামী পক্ষের।

জানা গেছে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভৈরবের ইয়াকুব ওয়ার্কশপে শিশু নাহিদকে (৮)  জোর করে কাজ করাতে নিলে মেশিনে তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে যায়। পরে চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে কনুই পর্যন্ত হাত কেটে ফেলে। পরে শিশু নাহিদের বাবা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে ওয়ার্কশপ মালিক ইয়াকুব আলীর কাছে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর গত বছর জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেন। এরপর আসামী পক্ষ মামলাটি সুর্প্রিম কোর্টে আপীল করলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়।

এবিষয়ে মামলার বাদী শিশুর বাবা নিয়ামুল আনোয়ার জনপদ  প্রতিনিধিকে ফোনে  বলেন, আমি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। ইয়াকুব আলীর কারনে আমার ছেলের জীবন আজ পঙ্গু হয়েছে। তারপর আদালতের আদেশ অমান্য করে আমার ছেলের ক্ষতিপূরনের টাকা পেতে আমি বার বার আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার পর আজ ১০ লাখ টাকার পে- অর্ডার পেলাম। তিনি বলেন  আগামী ১৩ মে মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বাদী পক্ষের আইনজীবি ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জনপদ সংবাদকে  টেলিফোনে জানান, আসামী ইয়াকুব আলী আদালতের আদেশ অমান্য করে ক্ষতিপূরনের টাকা দিতে গড়িমশি করছিল। পরে আদালত অবমাননার অভিযোগ করার পর আজ ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। আগামী ১৩ মে আবারও মামলার তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এদিন তাকে ক্ষতিপূরনের বাকী সব টাকা দিতে হবে। আমরা ধার্য তারিখে আবারও শুনানী করব।

আসামী পক্ষের আইনজীবি মোঃ রুহুল কুদ্দুছ কাজল জানান, আসামী পক্ষ ক্ষতিপূরণের পুরা টাকা আজ যোগার করে আনতে পারে নাই। তাই ১০ লাখ টাকা আজ পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।