৩০ এপ্রিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবে মিথ্যা মামলায় দুই আসামীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে থানার ওসি খন্দকার ফূয়াদ রুহানীর বিরুদ্ধে এক মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা মামলা প্রত্যাহারসহ ওসির বদলী দাবি করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো ব্যবসায়ী মোঃ শামীম মিয়া (৪০) ও আশিকুর রহমান (২০)। আজ বুধবার সকাল ১১ টায় গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরাসহ ভূক্তভূগীদের পক্ষে এলাকাবাসী স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে। এসময় বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার পরিষদ, ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, সাধারণ সম্পাদক আবির আহমেদ, উপজেলা যুব অধিকার পরিষদ সভাপতি অন্তর মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আকাশ আহমেদ ও সামসুন্নাহার বেগম।

জানা গেছে, ভৈরব শহরের জগনাথপুর গ্রামের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী জমশেদ মিয়া কিশোরগঞ্জ আদালতে ৮ জনকে আসামী করে মানব পাচার আইনে একটি মামলা করেন। আদালত ভৈরব থানার ওসিকে নির্দেশ দেন মামলার অভিযোগ থানায় এজাহারভূক্ত করে তদন্ত করার পর আইনগত ব্যবস্থা নিতে। আদালতের নির্দেশে ওসি গত ২৫ এপ্রিল শুক্রবার অভিযোগটি এজাহারভূক্ত (রেকর্ড) করে মামলার ৭ নং আসামী শামীম মিয়াকে পরদিন শনিবার রাতে তার ভৈরব বাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উক্ত মামলায় শামীমের শুশুর হাজি সাদেক মিয়াও ২ নং আসামী। তারপর গত সোমবার সকালে গ্রেফতারকৃত শামীমের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা এক সংবাদ সন্মেলন করে অভিযোগ করেন মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক। মামলার বাদী জমশেদ ভৈরবের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে এবং সে কয়েকবার জেল খেটেছে। তার দাবি তার বাবার সম্পত্তির গ্রাস করতে এলাকার একটি চক্র তাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। সাদিয়ার কোন ভাই নেই। তারা ৫ বোন। ফলে তাদেরকে হয়রানী করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে ঘটনাটি ঘটিয়েছে বাদী, তার দাবি। সংবাদ সন্মেলনের সময় সাদিয়া সুলতানার আত্মীয় ও গণ অধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল উপস্থিত ছিলেন। এসময় মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের প্রতিবাদ জানান তারা। এই সংবাদ সন্মেলনের পর ঘটনা শুনে এদিন বিকেলে মামলার বাদী জমশেদ মিয়া, গণ অধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজলের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে এক মানববন্ধন করে তাকে গালিগালাজ করে।
এদিকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শহরের চন্ডিবের এলাকার গৃহবধূ সামসুন্নাহার বেগম থানায় গিয়ে ওসির কাছে অভিযোগ করেন তার ছেলে আসিকুর রহমান (২১) মাদকাসক্ত ও জূয়ারি। মাদকের টাকার জন্য ছেলে তাকে অত্যাচার করে, ঘরের জিনিষপত্র ভাঙচুর করে। তাই তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতে অনুরোধ করেন তিনি। অভিযোগের পরদিন গত ৪ ফেব্রুয়ারী ওসি’র নির্দেশে পুলিশ আসিকুরকে গ্রেফতার করে এক ডাকাতি প্রস্ততি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠায়। এতে ক্ষিপ্ত হন ছেলের মা সামসুন্নাহার। তার দাবি ছিল ছেলেকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে এক দুইমাস জেলে রাখার ব্যবস্থা করা। কিন্ত ওসি তাকে কঠিন মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন তিনমাস যাবত সে কারাগারে। আদালত জামিন দিচ্ছেনা। গৃহবধূর অভিযোগ ওসি তার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়েছে। তিনি এখন ছেলের মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। এসময় ওসির বিচার দাবি করেন তিনি।
এই দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার মানববন্ধন সমাবেশ করে তারা। এসময় গণ অধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল তার বক্তব্যে দুইজনের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান এবং তাদের মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার আত্মীয় শামীমকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে বাদী মাদক ব্যবসায়ী মানববন্ধন করে কিভাবে। তিনি এসময় বলেন, ভৈরব থানার ওসি ঘূষখোর, দুর্নীতিবাজ। অনেক মানুষকে মামলা দিয়ে তিনি হয়রানী করছেন, আবার ঘূষের টাকা পেলে আসামী ধরেও ছেড়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ আছে বলে কাজল দাবি করেন। তিনি আরও বলেন ওসি ফূয়াদকে থানা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। তানাহলে আরও বড় ধরনের আন্দোলন করার ব্যবস্থা করবেন তারা।
গ্রেফতারকৃত আসামী আসিকুনের মা মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে তার ছেলের মুক্তি দাবি করেন। এসময় তিনি বলেন ওসি আমার সাথে প্রতারণা করে ছেলেকে ডাকাতি মামলার আসামী করেছেন। এসময় মানববন্ধনে ওসির বিচার দাবি করেন তিনি।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফূয়াদ রুহানী এবিষয়ে জানান, জমশেদ নামক এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করলে এমামলাটি আদালতের নির্দেশে থানায় এজাহারভূক্ত করা হয়। মামলার আসামী হিসেবে শামীমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তে যদি প্রমান হয় তিনি ঘটনায় নির্দোষ তবে চার্জশীটে তার নাম বাদ যাবে। বাদী মাদকাসক্ত না খারাপ মানুষ অথবা মামলাটি মিথ্যাভাবে করেছে কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মিথ্যা মামলা করলে বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এছাড়া চন্ডিবের এলাকার আশিকুর চিন্হিত ছিনতাইকারী। সে মাদকাসক্ত ও জূয়ারি। ডাকাতিও করে সে। মায়ের অভিযোগে নয় অপরাধী হিসেবে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ ভাল কাজ করতে গিয়ে যদি কেউ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মানববন্ধন সমাবেশ করে তাহলে কিভাবে ভৈরবের আইনশৃংখলা বজায় রাখব এপ্রশ্ন করেন তিনি।
ভৈরব পুলিশ সার্কেলের এএসপি নাজমুস সাকিব এবিষয়ে বলেন, আজ মানববন্ধনের কথা শুনেছি। অপরাধীদের গ্রেফতার করলে যদি পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাহলে কিভাবে কাজ করবে। দুজনের মামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে। তারা অপরাধী না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অপরাধ) মাহমুদুল ইসলামকে তার মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি বিষয় আমাদের নজরে আছে। একজন আদালতে মামলা করেছে, সেই মামলায় শামীমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাদী যদি মিথ্যা মামলা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবেন। আসিকুরের বিষয়ে বলেন, এঘটনাটি তদন্ত করা হবে। এদুটি ঘটনায় থানার ওসির কোন গাফলতি থাকলে ব্যবস্থা নিব। এসব ঘটনা আমাদেরকে লিখিতভাবে না জানিয়ে মানববন্ধন করলেতো সমস্যা সমাধান হবেনা বলে তিনি জানান।