ভৈরবের ভবানীপুর গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে  ১ জন নিহত, আহত – ২০।। মৌটুপি গ্রামের বিরোধের জেরে এঘটনা।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৫০ Time View

১৮ এপ্রিল, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে মিজান মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়। গ্রামের রবিউল মিয়ার ছেলে নিহত মিজান। আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে ভবানীপুর চকবাজারে দুইপক্ষের বিরোধ শত্রুতা  মীমাংসা করতে বসে আলাপ আলোচনার সময় উভয়পক্ষ উত্তেজিত হয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দুইপক্ষের লোকজন লাঠিসোডাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাঠে সংঘর্ষে  নেমে পড়লে প্রতিপক্ষের আঘাতে মিজান মিয়া গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনার সময় আহতরা হলো দুধ মিয়া (৩২), অপু মিয়া (২৪), পাপ্পু (২২), মোঃ আক্তার (৩০)। তাদের মধ্য গুরুতর আহত  পাপ্পুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য  ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।  তারা ৪ জন  উপজেলা  হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও  অন্যান্য আহতরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় গত মঙ্গলবার ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে সরকার বংশ ও কর্তা বংশের মধ্য দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধলে কমপক্ষে এদিন ৫০ জন আহত হয়। সেদিনের ঘটনায় ভবানীপুরের কিছু লোক দুটি বংশের পক্ষে সমর্থন করে। কেউ কর্তা বংশ আবার কেউ সরকার বংশকে সমর্থন করে তারা গত মঙ্গলবার মৌটুপি গ্রামের দুইপক্ষের  সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে এদিন ভবানীপুর গ্রামের মিজান মিয়া ও বাদশা মিয়া নিজ গ্রামে এসে ঝগড়া বিবাদ করে। মঙ্গলবারের দুজনের ঝগড়ার   ঘটনাটি মীমাংসা করতে শ্রীনগর  এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হারুনউর রশিদসহ  গন্যমান্য ব্যক্তিগন  আজ শুক্রবার সকালে মীমাংসায় বসে। এসময় এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গনি, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মোশারফ হোসেনসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মীমাংসার শালীস  দরবারে আলোচনার এক পর্যায়ে মিজান মিয়া ও বাদশা মেম্বার তর্কাতর্কি শুরু করে। এসময় তাদের দুজনের পক্ষের লোকজন সকলের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে মিজান গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।

মূলত মৌটুপি গ্রামের দুই বংশের  দুই চেয়ারম্যানের পূর্ব শত্রুতা, গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৫৫ বছরে ১৮ খুন হয়। এই গ্রামের ঘটনায় সবসময় ভবানীপুরের লোকজন কারো না কারো পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়। অর্থাৎ মৌটুপি গ্রামের বিরোধের জের ভবানীপুরে আসে। ফলে আজ আবারও খুনের ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের ফুফাত ভাই পারভেজ বলেন, মৌটুপির সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিজান মিয়া ও বাদশা মেম্বার ঝগড়া করলে এলাকার চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি মীমাংসা করতে আজ শালীসে বসে। এসময় দুজন উত্তেজিত হয়ে দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। এসময় প্রতিপক্ষের আঘাতে আমার ভাই মিজান নিহত হয়।

শ্রীনগর এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান গনি বলেন, মৌটুপি গ্রামের বিরোধ ঝগড়া আমাদের গ্রামে এসে পড়ল। আমরা চেয়েছিলাম মৌটুপির ঘটনার বিরোধ যেন আমাদের গ্রামে না হয়। কিন্ত শালীশির সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ঘটনাটি ঘটে।

এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুনউর রশিদ বলেন, যদি জানতাম এঘটনা ঘটবে তবে আজ শালিশের ব্যবস্থা করতামনা। দুটি পক্ষই উগ্রবাদ। মৌটুপি গ্রামের বিবাদ ঝগড়া  এখন আমাদের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। মিজানের নিহত হওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ থানায় আনা হয়। লাশের ময়না তদন্ত করতে কিশোরগঞ্জ পাঠানো হবে। পরে নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবের ভবানীপুর গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে  ১ জন নিহত, আহত – ২০।। মৌটুপি গ্রামের বিরোধের জেরে এঘটনা।।

Update Time : ১২:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

১৮ এপ্রিল, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষে মিজান মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়। গ্রামের রবিউল মিয়ার ছেলে নিহত মিজান। আজ শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে ভবানীপুর চকবাজারে দুইপক্ষের বিরোধ শত্রুতা  মীমাংসা করতে বসে আলাপ আলোচনার সময় উভয়পক্ষ উত্তেজিত হয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দুইপক্ষের লোকজন লাঠিসোডাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাঠে সংঘর্ষে  নেমে পড়লে প্রতিপক্ষের আঘাতে মিজান মিয়া গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনার সময় আহতরা হলো দুধ মিয়া (৩২), অপু মিয়া (২৪), পাপ্পু (২২), মোঃ আক্তার (৩০)। তাদের মধ্য গুরুতর আহত  পাপ্পুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য  ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।  তারা ৪ জন  উপজেলা  হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও  অন্যান্য আহতরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় গত মঙ্গলবার ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে সরকার বংশ ও কর্তা বংশের মধ্য দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধলে কমপক্ষে এদিন ৫০ জন আহত হয়। সেদিনের ঘটনায় ভবানীপুরের কিছু লোক দুটি বংশের পক্ষে সমর্থন করে। কেউ কর্তা বংশ আবার কেউ সরকার বংশকে সমর্থন করে তারা গত মঙ্গলবার মৌটুপি গ্রামের দুইপক্ষের  সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে এদিন ভবানীপুর গ্রামের মিজান মিয়া ও বাদশা মিয়া নিজ গ্রামে এসে ঝগড়া বিবাদ করে। মঙ্গলবারের দুজনের ঝগড়ার   ঘটনাটি মীমাংসা করতে শ্রীনগর  এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হারুনউর রশিদসহ  গন্যমান্য ব্যক্তিগন  আজ শুক্রবার সকালে মীমাংসায় বসে। এসময় এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গনি, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মোশারফ হোসেনসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মীমাংসার শালীস  দরবারে আলোচনার এক পর্যায়ে মিজান মিয়া ও বাদশা মেম্বার তর্কাতর্কি শুরু করে। এসময় তাদের দুজনের পক্ষের লোকজন সকলের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে মিজান গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে।

মূলত মৌটুপি গ্রামের দুই বংশের  দুই চেয়ারম্যানের পূর্ব শত্রুতা, গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৫৫ বছরে ১৮ খুন হয়। এই গ্রামের ঘটনায় সবসময় ভবানীপুরের লোকজন কারো না কারো পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়। অর্থাৎ মৌটুপি গ্রামের বিরোধের জের ভবানীপুরে আসে। ফলে আজ আবারও খুনের ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের ফুফাত ভাই পারভেজ বলেন, মৌটুপির সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিজান মিয়া ও বাদশা মেম্বার ঝগড়া করলে এলাকার চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি মীমাংসা করতে আজ শালীসে বসে। এসময় দুজন উত্তেজিত হয়ে দুই পক্ষের লোকজন নিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। এসময় প্রতিপক্ষের আঘাতে আমার ভাই মিজান নিহত হয়।

শ্রীনগর এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান গনি বলেন, মৌটুপি গ্রামের বিরোধ ঝগড়া আমাদের গ্রামে এসে পড়ল। আমরা চেয়েছিলাম মৌটুপির ঘটনার বিরোধ যেন আমাদের গ্রামে না হয়। কিন্ত শালীশির সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ঘটনাটি ঘটে।

এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুনউর রশিদ বলেন, যদি জানতাম এঘটনা ঘটবে তবে আজ শালিশের ব্যবস্থা করতামনা। দুটি পক্ষই উগ্রবাদ। মৌটুপি গ্রামের বিবাদ ঝগড়া  এখন আমাদের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। মিজানের নিহত হওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ থানায় আনা হয়। লাশের ময়না তদন্ত করতে কিশোরগঞ্জ পাঠানো হবে। পরে নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।