ভৈরবে মৌটুপি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত।। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৬৭ Time View

১৫ এপ্রিল, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ী ও সরকার বাড়ীর গোষ্টির মধ্য পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই সংঘর্ষ বাঁধে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিকেল ৫ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ( রাত ৮ টা)  দুই পক্ষের  সংঘর্ষ উত্তেজনা চলছে। এমনকি মৌটুপি গ্রামের ঝগড়া পাশের গ্রাম ভবানীপুর ছড়িয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।  গুরুতর আহতদের মধ্য যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলো পাভেল (৩০), মিলন মিয়া (৬০), তানিম (২০), হাজি আলী আহমেদ (৭৫), মাসুকুর রহমান (৪৫), আংগুর মিয়া (৫৯), বুলবুল (৩২)  রুবেল পান্ডা (৩৫) ও তৌহিদ (২২)। তাদের মধ্য রুবেল পান্ডার অবস্থা গুরুতর বলে ডাক্তার জানায়।  এসব সকল আহতদেরকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। আহতদের সবার বাড়ী মৌটুপি গ্রামে এবং তারা সবাই কর্তা বংশের সমর্থক। এছাড়া সরকার বংশের আহতদের মধ্য কেউ ভৈরবের সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি কর্তা বংশের লোকজনের ভয়ে। তারা পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারচরসহ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কিছু আহত স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ৫৪ বছর যাবত মৌটুপি গ্রামের দুটি গোষ্টি কর্তা বংশ ও সরকার বংশের শত্রুতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে দুই বংশের সংঘর্ষে  ৮/৯ জন খুন হয়েছে। সর্বশেষ সরকার বংশের  কাইয়ূম ও কর্তা বংশের নাদিম খুন হয় গত বছর। বর্তমানে তাদের এলাকার সাদেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরকার বংশের আওয়ামী লীগ নেতা  সাফায়েত উল্লাহ। তিনি সরকার বংশের নেতৃত্ব দেন। এর আগে তার বাবা আ,লীগ নেতা  আবুবকর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে মাঝখানে বিএনপি নেতা এবং কর্তা বংশের তোফাজ্জল হক একবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন এলাকার। দুই দলের দুই নেতা দুটি বংশের নেতৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৫৫ বছরে কমপক্ষে শতবার ঝগড়া সংঘর্ষ করে একাধিক খুন, জগমের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় এপর্যন্ত উভয় পক্ষের অর্ধশত মামলা চলমান আছে। এসব মামলায় আসামী হয়েছে হাজারের অধিক। সর্বশেষ সরকার বংশের   কাইয়ূম হত্যার পর কয়েকমাস যাবত কর্তা বংশের লোকজন মামলার আসামী হয়ে পলাতক জীবনযাপন করছিল। তারা গত ঈদেও বাড়ী যেতে পারেনি। এরই মধ্য এক সপ্তাহ আগে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ২১ সদস্যবিশিষ্ট শান্তি কমিটি করে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে ঝগড়াবিবাদ মীমাংসার উদ্যেগ গ্রহন করে। শান্তি কমিটির সদস্যরা আজ কর্তা বংশের পলাতক লোকজনকে বিকেলে বাড়ীতে নিয়ে গেলে সরকার বাড়ীর লোকজন তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বলে অভিযোগ । ঘটনার সময় সরকার বংশের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লার ছেলে নাহিদকে কর্তা বংশের লোকজন মারধোর করলে দুই পক্ষের উত্তেজনা বেড়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

কর্তা বংশের আহত আংগুর মিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বলেন আমাদের বংশের লোকজন দীর্ঘদিন যাবত পলাতক থেকে আজ বাড়ী গেলে চেয়ারম্যানের ছেলে নাহিদের নেতৃত্বে আক্রমন চালায়, হামলা করে। এতেই সংঘর্ষ বাঁধে। আহত মাসুকুর একই কথা বলেন।  এসময় আমাদের বংশের ১৫/২০ জন আহত হয়।

সাবেক চেয়ারম্যান ও কর্তা বংশের নেতা তোফাজ্জল হক বলেন, বিনা কারনে আজ সরকার বাড়ীর লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি খুন  করছে। 

এবিষয়ে সরকার বংশের চেয়ারম্যানের ছেলে নাহিদ বলেন, তারা বাড়ীতে এলে আমাদের লোকজন তাদেরকে বাঁধা দেয়নি। বরং আমাকে তারা দেখে আমার ওপর হামলা করে। এতে আমাদের বংশের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। এসময় তাদের আক্রমনে আমাদের প্রায় ১০ জন লোক আহত হয়। আমাদের পক্ষের আহতরা ভৈরবের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেনি তাদের বাঁধার কারনে। তারা কুলিয়ারচর  ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার মেহেদি জানান, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত গুরুতর আহত ৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেছি। তার মধ্য রুবেল পান্ডা নামের এক রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে তিনি জানান। 

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, মৌটুপি গ্রামের দুটি পক্ষের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। পুলিশকে পর্যন্ত তারা ভয় পায়না। আজ ঘটনার খবর পেয়ে বিকেল ৫ টায় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে মৌটুপি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত।। 

Update Time : ০৩:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

১৫ এপ্রিল, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ী ও সরকার বাড়ীর গোষ্টির মধ্য পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই সংঘর্ষ বাঁধে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিকেল ৫ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ( রাত ৮ টা)  দুই পক্ষের  সংঘর্ষ উত্তেজনা চলছে। এমনকি মৌটুপি গ্রামের ঝগড়া পাশের গ্রাম ভবানীপুর ছড়িয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।  গুরুতর আহতদের মধ্য যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলো পাভেল (৩০), মিলন মিয়া (৬০), তানিম (২০), হাজি আলী আহমেদ (৭৫), মাসুকুর রহমান (৪৫), আংগুর মিয়া (৫৯), বুলবুল (৩২)  রুবেল পান্ডা (৩৫) ও তৌহিদ (২২)। তাদের মধ্য রুবেল পান্ডার অবস্থা গুরুতর বলে ডাক্তার জানায়।  এসব সকল আহতদেরকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। আহতদের সবার বাড়ী মৌটুপি গ্রামে এবং তারা সবাই কর্তা বংশের সমর্থক। এছাড়া সরকার বংশের আহতদের মধ্য কেউ ভৈরবের সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি কর্তা বংশের লোকজনের ভয়ে। তারা পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারচরসহ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কিছু আহত স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ৫৪ বছর যাবত মৌটুপি গ্রামের দুটি গোষ্টি কর্তা বংশ ও সরকার বংশের শত্রুতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে দুই বংশের সংঘর্ষে  ৮/৯ জন খুন হয়েছে। সর্বশেষ সরকার বংশের  কাইয়ূম ও কর্তা বংশের নাদিম খুন হয় গত বছর। বর্তমানে তাদের এলাকার সাদেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরকার বংশের আওয়ামী লীগ নেতা  সাফায়েত উল্লাহ। তিনি সরকার বংশের নেতৃত্ব দেন। এর আগে তার বাবা আ,লীগ নেতা  আবুবকর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে মাঝখানে বিএনপি নেতা এবং কর্তা বংশের তোফাজ্জল হক একবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন এলাকার। দুই দলের দুই নেতা দুটি বংশের নেতৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৫৫ বছরে কমপক্ষে শতবার ঝগড়া সংঘর্ষ করে একাধিক খুন, জগমের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় এপর্যন্ত উভয় পক্ষের অর্ধশত মামলা চলমান আছে। এসব মামলায় আসামী হয়েছে হাজারের অধিক। সর্বশেষ সরকার বংশের   কাইয়ূম হত্যার পর কয়েকমাস যাবত কর্তা বংশের লোকজন মামলার আসামী হয়ে পলাতক জীবনযাপন করছিল। তারা গত ঈদেও বাড়ী যেতে পারেনি। এরই মধ্য এক সপ্তাহ আগে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ২১ সদস্যবিশিষ্ট শান্তি কমিটি করে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে ঝগড়াবিবাদ মীমাংসার উদ্যেগ গ্রহন করে। শান্তি কমিটির সদস্যরা আজ কর্তা বংশের পলাতক লোকজনকে বিকেলে বাড়ীতে নিয়ে গেলে সরকার বাড়ীর লোকজন তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বলে অভিযোগ । ঘটনার সময় সরকার বংশের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লার ছেলে নাহিদকে কর্তা বংশের লোকজন মারধোর করলে দুই পক্ষের উত্তেজনা বেড়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

কর্তা বংশের আহত আংগুর মিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে বলেন আমাদের বংশের লোকজন দীর্ঘদিন যাবত পলাতক থেকে আজ বাড়ী গেলে চেয়ারম্যানের ছেলে নাহিদের নেতৃত্বে আক্রমন চালায়, হামলা করে। এতেই সংঘর্ষ বাঁধে। আহত মাসুকুর একই কথা বলেন।  এসময় আমাদের বংশের ১৫/২০ জন আহত হয়।

সাবেক চেয়ারম্যান ও কর্তা বংশের নেতা তোফাজ্জল হক বলেন, বিনা কারনে আজ সরকার বাড়ীর লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি খুন  করছে। 

এবিষয়ে সরকার বংশের চেয়ারম্যানের ছেলে নাহিদ বলেন, তারা বাড়ীতে এলে আমাদের লোকজন তাদেরকে বাঁধা দেয়নি। বরং আমাকে তারা দেখে আমার ওপর হামলা করে। এতে আমাদের বংশের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। এসময় তাদের আক্রমনে আমাদের প্রায় ১০ জন লোক আহত হয়। আমাদের পক্ষের আহতরা ভৈরবের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেনি তাদের বাঁধার কারনে। তারা কুলিয়ারচর  ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার মেহেদি জানান, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত গুরুতর আহত ৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেছি। তার মধ্য রুবেল পান্ডা নামের এক রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে তিনি জানান। 

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  খন্দকার ফূয়াদ রুহানী জানান, মৌটুপি গ্রামের দুটি পক্ষের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। পুলিশকে পর্যন্ত তারা ভয় পায়না। আজ ঘটনার খবর পেয়ে বিকেল ৫ টায় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে। ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।