একটি গাছের ডাল এবং একটি অপমৃত্যু! মায়ের কান্না!

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:২১:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ৯০ Time View

৮ এপ্রিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবে একটি গাছের ডাল মায়ের একমাত্র ছেলে মাহাবুব হোসেন বিপ্লব এর প্রাণ কেড়ে নিয়ে গেল। একমাত্র সন্তানের অকাল মৃত্যুর বেদনা নিয়েই বাকীটা জীবন কাটবে মায়ের। ছেলেটার আশা ছিল সরকারী চাকরি পাবে কিন্ত সেই স্বপ্ন এখন পরকালে দেখবে। একথাগুলি নিহত মাহাবুবের মা নাসিমা আক্তার কাদঁতে কাদঁতে মোবাইলে যুগান্তর প্রতিনিধিকে বললেন।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে রামনগর রেলসেতুর নিকটে ট্রেনে কাটা পড়ে মাহাবুব হোসেন বিপ্লব (২৫) মৃত্যুবরণ করেন।   নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর উপজেলার কালাধরা গ্রামের মৃত আবদুল হালিমের একমাত্র ছেলে নিহত মাহাবুব। ঘটনার  খবর পেয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ এদিন দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে স্বজনদের খবর দিলে তারা ভৈরবে এসে ময়না তদন্ত ছাড়া ( পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায়)  রাত ১১ টায় থানা থেকে  তার লাশ নিহতের বাড়ী নিয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার তার এলাকায় নিহতের  দাফন সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। এবিষয়ে সোমবার রাতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় একটি ইউডি ( অপমৃত্যু)  মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-ঢাকাগামী উপকুল  আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোমবার সকাল ৬ টায় মাইজদি রেলস্টেশন থেকে ছাড়ার সময় যাত্রী হিসেবে মাহাবুব ট্রেনের বগিতে উঠে ঢাকা যাওয়ার উদ্দ্যেশে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন অতিক্রম করে আউটার সিগনাল পাড় হয়ে রামনগর সেতুর কাছে গেলে একটি গাছের ডালের ধাক্কা খেয়ে মাহাবুব ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে গিয়ে কাটা পড়ে। এসময় মাহাবুব কোন কারনে ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো ছিল বলে যাত্রীরা জানায়। ঘটনার আগের দিন রোববার রাতে ভৈরবে ঝড়তুফান হলে রেললাইনের নিকটে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে লাইনের ওপর ডালটি পড়ে থাকে। সেই ডালটির আঘাতে ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো মাহাবুব নিচে পড়ে তার হাত পা দ্বিখন্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে দুপুর ১২ টায় ভৈরব রেলস্টেশন মাস্টার মোঃ ইউছুফ স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পায় রামনগর রেলসেতুর কাছে একজন লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর পুলিশকে ঘটনা অবহিত করলে তার লাশ উদ্ধার করে। এরপর নিহতের পকেটে থাকা মোবাইল দিয়ে স্বজনদের খবর দেয় পুলিশ। 

এবিষয়ে কথা হয় নিহত মাহাবুবের খালাত ভাই আবদুর রহমান সুমনের সাথে। তিনি সোমবার বিকেলে খবর পেয়ে রাত ৯ টায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় আসেন। এসময় তিনি যুগান্তরকে জানান,  মাহাবুব তার মা – বাবার একমাত্র সন্তান। তার কোন ভাইবোন ছিলনা। তার বাবা নেই, তবে মা বেঁচে আছে।  সে অনার্সে পড়ত তৃতীয় বর্ষে। সংসারের অভাবে সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে  গত ঈদের ১০ দিন  আগে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নেয়। এর আগে মাহাবুব বাংলাদেশ রেলওয়েতে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি করত। এছাড়াও সরকারী চাকরি পেতে অনেক চেষ্টা করেও চাকরি জুটেনি। তাকে রেলওয়ের চাকরিটি স্থায়ীকরণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তার কয়েকজন সহকর্মী। কিন্ত চাকরী স্থায়ী না হওয়ায় ভাল বেতনের আশা নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নিতে হয়েছে তার। ঈদের ছুটিতে বাড়ী গিয়ে গতকাল সোমবার সে কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার সময় ট্রেনে দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে।

তার আরেক খালাত ভাই নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা হলে, তিনি বলেন, আমার খালার আর কেউ রইলনা। মাহাবুবের ভাইবোন বা চাচা, ফুফু কেউ নেই। মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে। এই মৃত্যুর বেদনা নিয়ে তার মা বাঁচতে হবে। আমরা খবর পেয়ে তার  লাশ নিতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় এসেছি। লাশ নিয়ে তাকে মাকে কি জবাব দিব ভেবে পাচ্ছিনা।

নিহতের মা নাসিমা আক্তার আজ মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কিভাবে বাঁচব। আল্লাহ কেন এমনটি করলেন। ছেলে হারানোর বেদনা নিয়ে আমি কিভাবে বাকী জীবন কাটাব। এব্যথা বেদনা সহ্য করতে পারছিনা।

ভৈরব রেলওয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার উপ- পরিদর্শক মোঃ দিদার হোসেন জানান, ঘটনাটি একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। ঘটনার সময় মাহাবুব ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো ছিল যা আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে জেনেছি। রোববার ঝড়তুফানে গাছের ডাল রেললাইনের ওপরে পড়া ছিল বলেই সে ডালের ধাক্কায় ট্রেনের নিচে পড়ে কাটা পড়ে। সোমবার রাতেই আমরা তার লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পরিবারের লোকজনের কোন অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়না তদন্তে লাশটি হস্তান্তর করেছি। তবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

একটি গাছের ডাল এবং একটি অপমৃত্যু! মায়ের কান্না!

Update Time : ১১:২১:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

৮ এপ্রিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবে একটি গাছের ডাল মায়ের একমাত্র ছেলে মাহাবুব হোসেন বিপ্লব এর প্রাণ কেড়ে নিয়ে গেল। একমাত্র সন্তানের অকাল মৃত্যুর বেদনা নিয়েই বাকীটা জীবন কাটবে মায়ের। ছেলেটার আশা ছিল সরকারী চাকরি পাবে কিন্ত সেই স্বপ্ন এখন পরকালে দেখবে। একথাগুলি নিহত মাহাবুবের মা নাসিমা আক্তার কাদঁতে কাদঁতে মোবাইলে যুগান্তর প্রতিনিধিকে বললেন।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে রামনগর রেলসেতুর নিকটে ট্রেনে কাটা পড়ে মাহাবুব হোসেন বিপ্লব (২৫) মৃত্যুবরণ করেন।   নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর উপজেলার কালাধরা গ্রামের মৃত আবদুল হালিমের একমাত্র ছেলে নিহত মাহাবুব। ঘটনার  খবর পেয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ এদিন দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে স্বজনদের খবর দিলে তারা ভৈরবে এসে ময়না তদন্ত ছাড়া ( পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায়)  রাত ১১ টায় থানা থেকে  তার লাশ নিহতের বাড়ী নিয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার তার এলাকায় নিহতের  দাফন সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। এবিষয়ে সোমবার রাতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় একটি ইউডি ( অপমৃত্যু)  মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-ঢাকাগামী উপকুল  আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোমবার সকাল ৬ টায় মাইজদি রেলস্টেশন থেকে ছাড়ার সময় যাত্রী হিসেবে মাহাবুব ট্রেনের বগিতে উঠে ঢাকা যাওয়ার উদ্দ্যেশে। ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন অতিক্রম করে আউটার সিগনাল পাড় হয়ে রামনগর সেতুর কাছে গেলে একটি গাছের ডালের ধাক্কা খেয়ে মাহাবুব ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে গিয়ে কাটা পড়ে। এসময় মাহাবুব কোন কারনে ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো ছিল বলে যাত্রীরা জানায়। ঘটনার আগের দিন রোববার রাতে ভৈরবে ঝড়তুফান হলে রেললাইনের নিকটে একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে লাইনের ওপর ডালটি পড়ে থাকে। সেই ডালটির আঘাতে ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো মাহাবুব নিচে পড়ে তার হাত পা দ্বিখন্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে দুপুর ১২ টায় ভৈরব রেলস্টেশন মাস্টার মোঃ ইউছুফ স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পায় রামনগর রেলসেতুর কাছে একজন লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর পুলিশকে ঘটনা অবহিত করলে তার লাশ উদ্ধার করে। এরপর নিহতের পকেটে থাকা মোবাইল দিয়ে স্বজনদের খবর দেয় পুলিশ। 

এবিষয়ে কথা হয় নিহত মাহাবুবের খালাত ভাই আবদুর রহমান সুমনের সাথে। তিনি সোমবার বিকেলে খবর পেয়ে রাত ৯ টায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় আসেন। এসময় তিনি যুগান্তরকে জানান,  মাহাবুব তার মা – বাবার একমাত্র সন্তান। তার কোন ভাইবোন ছিলনা। তার বাবা নেই, তবে মা বেঁচে আছে।  সে অনার্সে পড়ত তৃতীয় বর্ষে। সংসারের অভাবে সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে  গত ঈদের ১০ দিন  আগে ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নেয়। এর আগে মাহাবুব বাংলাদেশ রেলওয়েতে দৈনিক ভিত্তিতে চাকরি করত। এছাড়াও সরকারী চাকরি পেতে অনেক চেষ্টা করেও চাকরি জুটেনি। তাকে রেলওয়ের চাকরিটি স্থায়ীকরণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তার কয়েকজন সহকর্মী। কিন্ত চাকরী স্থায়ী না হওয়ায় ভাল বেতনের আশা নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নিতে হয়েছে তার। ঈদের ছুটিতে বাড়ী গিয়ে গতকাল সোমবার সে কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার সময় ট্রেনে দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে।

তার আরেক খালাত ভাই নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা হলে, তিনি বলেন, আমার খালার আর কেউ রইলনা। মাহাবুবের ভাইবোন বা চাচা, ফুফু কেউ নেই। মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে। এই মৃত্যুর বেদনা নিয়ে তার মা বাঁচতে হবে। আমরা খবর পেয়ে তার  লাশ নিতে ভৈরব রেলওয়ে থানায় এসেছি। লাশ নিয়ে তাকে মাকে কি জবাব দিব ভেবে পাচ্ছিনা।

নিহতের মা নাসিমা আক্তার আজ মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কিভাবে বাঁচব। আল্লাহ কেন এমনটি করলেন। ছেলে হারানোর বেদনা নিয়ে আমি কিভাবে বাকী জীবন কাটাব। এব্যথা বেদনা সহ্য করতে পারছিনা।

ভৈরব রেলওয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার উপ- পরিদর্শক মোঃ দিদার হোসেন জানান, ঘটনাটি একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। ঘটনার সময় মাহাবুব ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো ছিল যা আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে জেনেছি। রোববার ঝড়তুফানে গাছের ডাল রেললাইনের ওপরে পড়া ছিল বলেই সে ডালের ধাক্কায় ট্রেনের নিচে পড়ে কাটা পড়ে। সোমবার রাতেই আমরা তার লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পরিবারের লোকজনের কোন অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়না তদন্তে লাশটি হস্তান্তর করেছি। তবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।