ভৈরবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বই বিক্রি।। পাবলিকেশন কোম্পানীগুলি লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৫৪:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • ১০৬ Time View

৫ মার্চ, নিজস্ব প্রতিনিধি:

 ভৈরবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বই বিক্রর অভিযোগ পাওয়া গেছে।   বিভিন্ন পাবলিকেশন ও বই বিক্রেতারা যোকসাজগ করে এ অসাধু কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের  ইংরেজি ২য় পত্র বইয়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা ২য় পত্র বই কিনতে হচ্ছে।  কেউ ইচ্ছে করলেই শুধুমাত্র ইংরেজি ২য় পত্র বই কিনতে পারছে না। চড়া দামে ইংরেজি বইয়ের সাথে কিনতে হচ্ছে বাংলা বই। দুটি বইয়ের মূল্য ৯৫০/১০০০ টাকা। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনেকেই  এত মূল্য দিয়ে দুটি বই কেনার সামর্থ্য নেই। এব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগন মুখ খুলছেনা। অভিযোগ রয়েছে পাবলিকেশন কোম্পানীগুলি শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করতে যা করা দরকার তাই করেছে।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মডেলসহ গ্রামার অনুশীলনের জন্য বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত গ্রামার বইয়ের পাশাপাশি ২য় পত্রের একটি সহায়ক বই দরকার হয়। ফলে সকল শিক্ষার্থীরাই বাজারে থাকা বিভিন্ন পাবলিকেশনের গ্রামার বইটি ক্রয় করে থাকে। এ সুযোগে পাবলিশার্স ও বই বিক্রতারা মিলে ইংরেজি মডেল বইয়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে  বিক্রি করছে বাংলা ২য় পত্রের বই। কোন শিক্ষার্থী বাংলা ২য় পত্র বইটি নিতে অস্বীকৃতি জানালে বই বিক্রেতাগন  দিচ্ছে না ইংরেজি মডেল গ্রামার বইটি। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বই কিনতে আসা অভিভাবক মাসুদ মিয়া জানান, আমি লেকচারের ইংরেজি বইটি নিতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি বইয়ের সাথে বাংলা বইটি কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ভৈরবের  সবগুলো লাইব্রেরি এক জোট হওয়ায় বেগতিক হয়েই চড়া দামে কিনতে হয়েছে। একই কথা বলেন শিক্ষার্থী মনির হোসেন, রাশিদা খানম ও রনি সাহা। 

ভৈরবের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরির মালিক মোঃ সুজন  জানান, প্রকাশনী থেকে ইংরেজি গ্রামারের সাথে বাংলা ব্যাকরণ বই এক সাথে প্যাকেট করে আমাদেরকে দেয়। তাই ইচ্ছে করলেই আমরা শুধু  ইংরেজি বইটা বিক্রি করতে পারিনা। কারন ইংরেজি বইটি আলাদাভাবে বিক্রি করলে বাংলা বইটি অবিক্রিত থাকবে। এতে আমরা লোকসানে পড়ব। রফিক লাইব্রেরির মালিক মোঃ রফিক বলেন, প্রকাশক কোম্পানীগুলি আমাদেরকে দুটি বই একসাথে করে সরবরাহ করে। তাই আমরাও শিক্ষার্থীদের কাছে এভাবে বিক্রি করতে হয়। কোম্পানীগুলি যদি বই দুটি আলাদা করে দিত তাহলে আমরা সেভাবে বিক্রি করতাম। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ৯৫০/১০০০ টাকা দিয়ে বই কেনার সামর্থ নেই। শুধু ইংরেজি বই কিনলে ৫০০ টাকার মধ্য কিনতে পারত কিন্ত আমরা সিংগেল বই বিক্রি করতে পারছিনা। 

লেকচার পাবলিকেশনের ভৈরব এরিয়ার বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ জাহিদুল হক এবিষয়ে বলেন, আমি বিষয়টির ব্যাপারে কিছুই জানিনা, মার্কিটিং করার দায়িত্ব আমার। পরে পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ কামরুল হাসানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আমরা দুটি বই একসাথে বিক্রি করছি। দেশের একেক স্কুল একেক নিয়মে চলে। বিষয়টি আমাকে যেহেতু জানিয়েছেন, তাই ভবিষ্যতে আমরা এব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে সিংগেলভাবে বই বিক্রির ব্যবস্থা করব। তিনি আরও বলেন, এসব নিয়ে লিখে লাভ কি। এই প্রতিনিধিকে তিনি ঢাকায় সাক্ষাত করে  চা খেতে দাওয়াত দেন। 

পাঞ্জরি পাবলিকেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের বই কিনতে কষ্ট হলে শুধু ইংরেজি বই যাতে নিতে পারে আমি সেই ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন আপনার কোন শিক্ষার্থী থাকলে বলেন আমি বই পৌঁছে দিব, টাকা লাগবেনা। 

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি  শবনম শারমিন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নয়। বোর্ডের পাঠ্য বইয়ের বাইরে কেন বই কিনতে হবে শিক্ষার্থীদের তা আমি খোঁজ নিব। এখন রমজান মাস তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ। ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে বিষয়টি তদন্ত করে বই বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে  এক সঙ্গে তিন জমজ ছেলে সন্তান জন্ম নিল। খুশি দম্পতি তবে চিন্তিত তাদের ভরণপোষণ নিয়ে। 

ভৈরবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বই বিক্রি।। পাবলিকেশন কোম্পানীগুলি লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

Update Time : ০১:৫৪:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

৫ মার্চ, নিজস্ব প্রতিনিধি:

 ভৈরবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বই বিক্রর অভিযোগ পাওয়া গেছে।   বিভিন্ন পাবলিকেশন ও বই বিক্রেতারা যোকসাজগ করে এ অসাধু কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের  ইংরেজি ২য় পত্র বইয়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা ২য় পত্র বই কিনতে হচ্ছে।  কেউ ইচ্ছে করলেই শুধুমাত্র ইংরেজি ২য় পত্র বই কিনতে পারছে না। চড়া দামে ইংরেজি বইয়ের সাথে কিনতে হচ্ছে বাংলা বই। দুটি বইয়ের মূল্য ৯৫০/১০০০ টাকা। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনেকেই  এত মূল্য দিয়ে দুটি বই কেনার সামর্থ্য নেই। এব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগন মুখ খুলছেনা। অভিযোগ রয়েছে পাবলিকেশন কোম্পানীগুলি শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করতে যা করা দরকার তাই করেছে।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মডেলসহ গ্রামার অনুশীলনের জন্য বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত গ্রামার বইয়ের পাশাপাশি ২য় পত্রের একটি সহায়ক বই দরকার হয়। ফলে সকল শিক্ষার্থীরাই বাজারে থাকা বিভিন্ন পাবলিকেশনের গ্রামার বইটি ক্রয় করে থাকে। এ সুযোগে পাবলিশার্স ও বই বিক্রতারা মিলে ইংরেজি মডেল বইয়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে  বিক্রি করছে বাংলা ২য় পত্রের বই। কোন শিক্ষার্থী বাংলা ২য় পত্র বইটি নিতে অস্বীকৃতি জানালে বই বিক্রেতাগন  দিচ্ছে না ইংরেজি মডেল গ্রামার বইটি। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বই কিনতে আসা অভিভাবক মাসুদ মিয়া জানান, আমি লেকচারের ইংরেজি বইটি নিতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি বইয়ের সাথে বাংলা বইটি কিনতে হয়েছে চড়া দামে। ভৈরবের  সবগুলো লাইব্রেরি এক জোট হওয়ায় বেগতিক হয়েই চড়া দামে কিনতে হয়েছে। একই কথা বলেন শিক্ষার্থী মনির হোসেন, রাশিদা খানম ও রনি সাহা। 

ভৈরবের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরির মালিক মোঃ সুজন  জানান, প্রকাশনী থেকে ইংরেজি গ্রামারের সাথে বাংলা ব্যাকরণ বই এক সাথে প্যাকেট করে আমাদেরকে দেয়। তাই ইচ্ছে করলেই আমরা শুধু  ইংরেজি বইটা বিক্রি করতে পারিনা। কারন ইংরেজি বইটি আলাদাভাবে বিক্রি করলে বাংলা বইটি অবিক্রিত থাকবে। এতে আমরা লোকসানে পড়ব। রফিক লাইব্রেরির মালিক মোঃ রফিক বলেন, প্রকাশক কোম্পানীগুলি আমাদেরকে দুটি বই একসাথে করে সরবরাহ করে। তাই আমরাও শিক্ষার্থীদের কাছে এভাবে বিক্রি করতে হয়। কোম্পানীগুলি যদি বই দুটি আলাদা করে দিত তাহলে আমরা সেভাবে বিক্রি করতাম। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ৯৫০/১০০০ টাকা দিয়ে বই কেনার সামর্থ নেই। শুধু ইংরেজি বই কিনলে ৫০০ টাকার মধ্য কিনতে পারত কিন্ত আমরা সিংগেল বই বিক্রি করতে পারছিনা। 

লেকচার পাবলিকেশনের ভৈরব এরিয়ার বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ জাহিদুল হক এবিষয়ে বলেন, আমি বিষয়টির ব্যাপারে কিছুই জানিনা, মার্কিটিং করার দায়িত্ব আমার। পরে পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ কামরুল হাসানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আমরা দুটি বই একসাথে বিক্রি করছি। দেশের একেক স্কুল একেক নিয়মে চলে। বিষয়টি আমাকে যেহেতু জানিয়েছেন, তাই ভবিষ্যতে আমরা এব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে সিংগেলভাবে বই বিক্রির ব্যবস্থা করব। তিনি আরও বলেন, এসব নিয়ে লিখে লাভ কি। এই প্রতিনিধিকে তিনি ঢাকায় সাক্ষাত করে  চা খেতে দাওয়াত দেন। 

পাঞ্জরি পাবলিকেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের বই কিনতে কষ্ট হলে শুধু ইংরেজি বই যাতে নিতে পারে আমি সেই ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন আপনার কোন শিক্ষার্থী থাকলে বলেন আমি বই পৌঁছে দিব, টাকা লাগবেনা। 

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি  শবনম শারমিন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নয়। বোর্ডের পাঠ্য বইয়ের বাইরে কেন বই কিনতে হবে শিক্ষার্থীদের তা আমি খোঁজ নিব। এখন রমজান মাস তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ। ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে বিষয়টি তদন্ত করে বই বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।