ভৈরবের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে  দুই গাড়িতে ডাকাতি । দায়িত্ব অবহেলার কারনে  থানার দুই পুলিশকে বরখাস্ত। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:২৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৭০ Time View

২২ ফেব্রুয়ারি, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবের অদূরে  ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারনে থানার দুইজন পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।  তারা হলো ভৈরব থানার উপ- পরিদর্শক মোঃ ফরিদুজ্জামান ও সহকারী উপ- পরিদর্শক দেলুয়ার হোসেন।

আজ শনিবার বিকেলে  কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

 জানা গেছে, ডাকাতরা একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে অস্ত্রের মুখে যাত্রী ও চালকদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, সোনার গহনা ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। গত  বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার  দিকে ভৈরবের অদূরে  নরসিংদির রায়পুরা  উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ডাকাতির শিকার হওয়া গাজীপুর এলাকার  ব্যক্তিরা ভৈরব থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ জানায়, ঘটনাটি তাদের অধীনস্থ এলাকায় নয়। এরপর অভিযোগ গ্রহণ না করে তাদের রায়পুরা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না দিয়েই রাতের মধ্যে গন্তব্যে চলে যান। 

ভৈরব থানার সামনে ভুক্তভোগীদের একটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন এস এম দুর্জয় নামে এক ব্যক্তি। মাত্র তিন মিনিটের ওই ভিডিওতে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার করে সিলেটের একটি মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তারা। গাড়ি দুটিতে  ছিলেন বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু। রায়পুরা  উপজেলার মাহমুদাবাদ এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাত দেড়টায়  গাড়ী দুটি  পৌঁছালে চেকপোস্টে থাকা কিছু ব্যক্তি তাদের গাড়ি থামান। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই মুখোশধারী একদল ডাকাতের কবলে পরে তারা। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে  যাত্রীদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, সোনার গহনা, নগদ অর্থ লুট করে নেয়। এছাড়া গাড়ি ভাঙচুরও করে  তারা। তবে এ ঘটনায় কোন যাত্রী বা চালক আহত হয়নি। ডাকাত দল পালিয়ে  যাওয়ার পর যাত্রী ও চালকরা দ্রুত  নিরাপদ স্থানে চলে যান।

ডাকাতির শিকার হওয়া দুই ভুক্তভোগীর মোবাইল নম্বর পাওয়া গেলেও তাদের ফোন দুটি বন্ধ থাকায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই হাইওয়ে পুলিশের একটি চেকপোস্ট থাকলেও দুর্বৃত্তরা নির্বিগ্নে ডাকাতি করেছে। 

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি নুরুল হক জানান, ওই রাতে মহাসড়কে পুলিশের টহল ছিল। তবে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।

এবিষয়ে ভৈরব থানার উপ- পরিদর্শক মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ঘটনার রাতে ভূক্তভূগীরা আমার কাছে আসলে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শাহিনের সাথে পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরকে বলা হয় ঘটনাস্থল রায়পুরা এলাকায়, তাই অভিযোগটি রায়পুরা থানায় দিতে। এরপর তারা চলে যায়। এটাই আমার অপরাধ ধরে আমাকে বরখাস্ত করে প্রত্যাহার করা হয়।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, ঘটনার দিন সময়ে আমি থানায় ছিলামনা। দুজনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের কথা তিনি স্বীকার করেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ বিভাগের। কোন পুলিশ দায়িত্ব অবহেলা করলে অফিসিয়াল ব্যবস্থা নিতে হবে। দুজনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে দুই পুলিশকে বরখাস্ত করে কিশোরগঞ্জের লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে  দুই গাড়িতে ডাকাতি । দায়িত্ব অবহেলার কারনে  থানার দুই পুলিশকে বরখাস্ত। 

Update Time : ০৫:২৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২২ ফেব্রুয়ারি, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবের অদূরে  ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারনে থানার দুইজন পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।  তারা হলো ভৈরব থানার উপ- পরিদর্শক মোঃ ফরিদুজ্জামান ও সহকারী উপ- পরিদর্শক দেলুয়ার হোসেন।

আজ শনিবার বিকেলে  কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

 জানা গেছে, ডাকাতরা একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে অস্ত্রের মুখে যাত্রী ও চালকদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, সোনার গহনা ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। গত  বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার  দিকে ভৈরবের অদূরে  নরসিংদির রায়পুরা  উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ডাকাতির শিকার হওয়া গাজীপুর এলাকার  ব্যক্তিরা ভৈরব থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ জানায়, ঘটনাটি তাদের অধীনস্থ এলাকায় নয়। এরপর অভিযোগ গ্রহণ না করে তাদের রায়পুরা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না দিয়েই রাতের মধ্যে গন্তব্যে চলে যান। 

ভৈরব থানার সামনে ভুক্তভোগীদের একটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন এস এম দুর্জয় নামে এক ব্যক্তি। মাত্র তিন মিনিটের ওই ভিডিওতে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার করে সিলেটের একটি মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তারা। গাড়ি দুটিতে  ছিলেন বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু। রায়পুরা  উপজেলার মাহমুদাবাদ এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাত দেড়টায়  গাড়ী দুটি  পৌঁছালে চেকপোস্টে থাকা কিছু ব্যক্তি তাদের গাড়ি থামান। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই মুখোশধারী একদল ডাকাতের কবলে পরে তারা। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে  যাত্রীদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, সোনার গহনা, নগদ অর্থ লুট করে নেয়। এছাড়া গাড়ি ভাঙচুরও করে  তারা। তবে এ ঘটনায় কোন যাত্রী বা চালক আহত হয়নি। ডাকাত দল পালিয়ে  যাওয়ার পর যাত্রী ও চালকরা দ্রুত  নিরাপদ স্থানে চলে যান।

ডাকাতির শিকার হওয়া দুই ভুক্তভোগীর মোবাইল নম্বর পাওয়া গেলেও তাদের ফোন দুটি বন্ধ থাকায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই হাইওয়ে পুলিশের একটি চেকপোস্ট থাকলেও দুর্বৃত্তরা নির্বিগ্নে ডাকাতি করেছে। 

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি নুরুল হক জানান, ওই রাতে মহাসড়কে পুলিশের টহল ছিল। তবে ভুয়া পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।

এবিষয়ে ভৈরব থানার উপ- পরিদর্শক মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ঘটনার রাতে ভূক্তভূগীরা আমার কাছে আসলে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শাহিনের সাথে পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরকে বলা হয় ঘটনাস্থল রায়পুরা এলাকায়, তাই অভিযোগটি রায়পুরা থানায় দিতে। এরপর তারা চলে যায়। এটাই আমার অপরাধ ধরে আমাকে বরখাস্ত করে প্রত্যাহার করা হয়।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, ঘটনার দিন সময়ে আমি থানায় ছিলামনা। দুজনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের কথা তিনি স্বীকার করেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ বিভাগের। কোন পুলিশ দায়িত্ব অবহেলা করলে অফিসিয়াল ব্যবস্থা নিতে হবে। দুজনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে দুই পুলিশকে বরখাস্ত করে কিশোরগঞ্জের লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।