ভৈরবে খাল খননের অজুহাতে  ভেকু দিয়ে কৃষকের মালিকানা ফসলি জমি কাটার অভিযোগ।।  হুমকির মুখে বিদ্যালয়।। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৯৬ Time View

২৪ জানুয়ারি,  নিজস্ব  প্রতিনিধি:

 ভৈরবের খাসহাওলা গ্রামে কোদালকাটি খাল কাটার নামে কৃষকের মালিকানা ফসলি জমি কাটার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। একারনে  কালিকাপ্রসাদ আদর্শপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

এনিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে এক সপ্তাহ যাবত ওই এলাকায় তীব্র  উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। 

আজ শুক্রবার সকালে   সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার  কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের খাসহাওয়া এলাকায় খাল খনন প্রকল্পের কাজে দুইটি ভেকু মাটি কাটার জন্য গ্রামের পূর্বপাশে দাঁড়িয়ে আছে।  খালের সাথে  বিদ্যালয়টিও রয়েছে ঝুঁকিতে। মাটি কাটার ফলে শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা আতংকে আছে। 

 জানা যায়, গত বছর বিগত  সরকারের আমলে মেসার্স মুমিনুল হক এন্ড হাসান কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোদাল কাটি খাল খননের কাজ পায়। খাল খনন প্রকল্পটি মেঘনা নদীর মোহনা মহেশপুর এলাকা থেকে কালিকাপ্রসাদের ছিদ্দিরচর পর্যন্ত এক্সেভেটর ও শ্রমিকের মাধ্যমে খাল খনন করে দুই পাশে রাস্তা তৈরি করে গাছ রোপণের মাধ্যমে খালের সৌন্দর্য বর্ধন করা। কাজ পেয়েই তারা এক্সেভেটরের পরিবর্তে ১২/১৫ টি বাংলা ও লোড ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করার পর  বিক্রি করে কৃষি জমির ক্ষতি করায় স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষজন ফুঁসে উঠেছিলো। 

এছাড়া ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খাল খনন প্রকল্পের নামে অবৈধ লোড ড্রেজার ও বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও ঠিকাদারের মধ্য সংঘর্ষ হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ঠিকাদার। 

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, খাসহাওলা গ্রামের কোদালকাটি খাল ছিল না। বসতি গড়তে ও রাস্তা তৈরিতে নিচুভূমি থেকে মাটি কাটে এলাকাবাসী। এতেই খালে পরিণত হয়। আমাদের গ্রামের মানুষ জমি চাষ করে খায়।  সরকার যদি জমি নিতে হয় আমাদের ভর্তুকি দিয়েই নিতে হবে। 

স্থানীয় কৃষক জালাল উদ্দিন, আবু কালাম, মধু মিয়া, মাহমুদা বেগম জানান, খাসহাওলা গ্রামের ফসলি জমি সকল কাগজপত্র আমাদের রয়েছে। এখানে কয়েক শতাধিক বিঘা জমি থাকলে সরকারি খাস জমি রয়েছে ৭ শতক জমি। কিন্তু তারা কীভাবে সরকারী জমি দাবি করে  আমাদের জমির উপর খাল খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কালিকাপ্রসাদ আদর্শ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজিয়া সুলতানা রউফ বলেন, মাটি কাটার কারনে  ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের সীমানা পিলার ভেঙ্গে পড়েছে। সরে গেছে দেয়ালের মাটি। এখন যদি খাল খনন হয় যে কোন মুহূর্তে বিদ্যালয়ের দেয়াল হেলে পড়তে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। 

ভৈরব উপজেলা প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ  জানান, কোদালকাটি খাল খননের কাজ বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল। ঠিকাদার পুনরায় কাজ চালুর বিষয়ে আমার কাছ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা নেয়নি। 

খাল খনন প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মালিক সেলিম মিয়া বলেন, কোদালকাটি খাল খনন একটি সরকারি প্রজেক্ট। আমি কাজ পেয়েছি কাজ করবো। কাজ করতে গিয়ে কোন এলাকার মানুষ বাধা দিলে সেটি প্রশাসন দেখবে। আমি কোন ফসলি জমি ক্ষতি করে কাজ করতে যায়নি। প্রশাসন অনুমতি দিলেই আমি কাজ করবো।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, উপজেলার খাসহাওলা গ্রামে কোদালকাটি খাল পুনরুদ্ধারের এলজিআরডি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। এলাকার লোকজন কি চাই  তা আমি  জেনে এসেছি। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে কাগজপত্র নিয়ে গিয়ে রেকর্ডপত্র যাচাই বাছাই করেছে। আরো যাচাই বাছাই শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে খাল খননের অজুহাতে  ভেকু দিয়ে কৃষকের মালিকানা ফসলি জমি কাটার অভিযোগ।।  হুমকির মুখে বিদ্যালয়।। 

Update Time : ০৫:৪৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

২৪ জানুয়ারি,  নিজস্ব  প্রতিনিধি:

 ভৈরবের খাসহাওলা গ্রামে কোদালকাটি খাল কাটার নামে কৃষকের মালিকানা ফসলি জমি কাটার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। একারনে  কালিকাপ্রসাদ আদর্শপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

এনিয়ে গ্রামবাসীদের মাঝে এক সপ্তাহ যাবত ওই এলাকায় তীব্র  উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। 

আজ শুক্রবার সকালে   সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার  কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের খাসহাওয়া এলাকায় খাল খনন প্রকল্পের কাজে দুইটি ভেকু মাটি কাটার জন্য গ্রামের পূর্বপাশে দাঁড়িয়ে আছে।  খালের সাথে  বিদ্যালয়টিও রয়েছে ঝুঁকিতে। মাটি কাটার ফলে শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা আতংকে আছে। 

 জানা যায়, গত বছর বিগত  সরকারের আমলে মেসার্স মুমিনুল হক এন্ড হাসান কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোদাল কাটি খাল খননের কাজ পায়। খাল খনন প্রকল্পটি মেঘনা নদীর মোহনা মহেশপুর এলাকা থেকে কালিকাপ্রসাদের ছিদ্দিরচর পর্যন্ত এক্সেভেটর ও শ্রমিকের মাধ্যমে খাল খনন করে দুই পাশে রাস্তা তৈরি করে গাছ রোপণের মাধ্যমে খালের সৌন্দর্য বর্ধন করা। কাজ পেয়েই তারা এক্সেভেটরের পরিবর্তে ১২/১৫ টি বাংলা ও লোড ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করার পর  বিক্রি করে কৃষি জমির ক্ষতি করায় স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষজন ফুঁসে উঠেছিলো। 

এছাড়া ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খাল খনন প্রকল্পের নামে অবৈধ লোড ড্রেজার ও বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও ঠিকাদারের মধ্য সংঘর্ষ হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ঠিকাদার। 

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, খাসহাওলা গ্রামের কোদালকাটি খাল ছিল না। বসতি গড়তে ও রাস্তা তৈরিতে নিচুভূমি থেকে মাটি কাটে এলাকাবাসী। এতেই খালে পরিণত হয়। আমাদের গ্রামের মানুষ জমি চাষ করে খায়।  সরকার যদি জমি নিতে হয় আমাদের ভর্তুকি দিয়েই নিতে হবে। 

স্থানীয় কৃষক জালাল উদ্দিন, আবু কালাম, মধু মিয়া, মাহমুদা বেগম জানান, খাসহাওলা গ্রামের ফসলি জমি সকল কাগজপত্র আমাদের রয়েছে। এখানে কয়েক শতাধিক বিঘা জমি থাকলে সরকারি খাস জমি রয়েছে ৭ শতক জমি। কিন্তু তারা কীভাবে সরকারী জমি দাবি করে  আমাদের জমির উপর খাল খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কালিকাপ্রসাদ আদর্শ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজিয়া সুলতানা রউফ বলেন, মাটি কাটার কারনে  ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের সীমানা পিলার ভেঙ্গে পড়েছে। সরে গেছে দেয়ালের মাটি। এখন যদি খাল খনন হয় যে কোন মুহূর্তে বিদ্যালয়ের দেয়াল হেলে পড়তে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। 

ভৈরব উপজেলা প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ  জানান, কোদালকাটি খাল খননের কাজ বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল। ঠিকাদার পুনরায় কাজ চালুর বিষয়ে আমার কাছ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা নেয়নি। 

খাল খনন প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মালিক সেলিম মিয়া বলেন, কোদালকাটি খাল খনন একটি সরকারি প্রজেক্ট। আমি কাজ পেয়েছি কাজ করবো। কাজ করতে গিয়ে কোন এলাকার মানুষ বাধা দিলে সেটি প্রশাসন দেখবে। আমি কোন ফসলি জমি ক্ষতি করে কাজ করতে যায়নি। প্রশাসন অনুমতি দিলেই আমি কাজ করবো।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, উপজেলার খাসহাওলা গ্রামে কোদালকাটি খাল পুনরুদ্ধারের এলজিআরডি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। এলাকার লোকজন কি চাই  তা আমি  জেনে এসেছি। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে কাগজপত্র নিয়ে গিয়ে রেকর্ডপত্র যাচাই বাছাই করেছে। আরো যাচাই বাছাই শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।