২২ জানুয়ারি, নিজস্ব প্রতিনিধি:
এবারের মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ন হয়েও চিন্তিত ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের দুই শিক্ষার্থী। ভর্তির টাকা কিভাবে পরিবার যোগার করবে, আর ভর্তি হলে লেখাপড়ার টাকা কোথায় পাবে এনিয়ে দুজনই চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থী শিমা আক্তার শিমু। বাবা ভ্যানচালক ও ছোট ভাই বিভাটেক চালাই। নরসিংদির রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের দরিদ্র বাবা মোঃ বাদশা মিয়ার মেয়ে শিমু। ২০২৪-২৫ ইং শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস পরীক্ষায় ৭৬.২৫ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। ভৈরবের রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ থেকে সে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কলেজের শিক্ষকদের সহযোগীতা ও পরিবারের কষ্টের মধ্য শিমু তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ভৈরব থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ী। প্রতিদিন বাড়ী থেকে কলেজে আসতে হয়েছে তার। মেডিকেল পরীক্ষায় এবার সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সে ও তার পরিবার আনন্দিত হলেও মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার মত আর্থিক অবস্থা তার নেই। তার বাবা ভ্যানগাড়ী চালিয়ে যে উপার্জন করে তা দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। আজ বুধবার দুপুরে কলেজে আসে শিমু শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে। এসময় শিমু যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে আনুমানিক ২০ হাজার টাকা লাগবে, তারপর লেখাপড়ার খরচ। একারনে আমি চিন্তিত আছি। যদি লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে পারি তবে মানুষের সেবা করে যাব।
নুসরাত জাহান শশী। বাবা জিল্লুর রহমান সুজন ভৈরবের একটি বেসরকারী হাসপাতালে মার্কেটিং বিভাগে ছোট চাকরী করে। তার বাড়ীও নরসিংদির রায়পুরা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামে। সে ভৈরবের রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। এবারের এমবিবিএস পরীক্ষায় সে ৭৫.৭৫ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা তিনবোন। ছোট বোনেরা লেখাপড়া করে। তিনজনের পড়া চালিয়ে যেতে তার বাবা হিমশিম খাচ্ছে। শশী কলেজের হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করেছে। সে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কলেজে পড়তে গিয়ে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা তাকে নানাভাবে সহযোগীতা করেছে বলে সে জানায়। মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে ও তার পরিবার আনন্দিত হলেও এখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও ভবিষ্যত লেখাপড়ার টাকা যোগার নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে আছে। সামনের মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে। হাতে সময় কম। কিভাবে যোগার করা হবে টাকা এচিন্তায় তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আজ বুধবার সে কলেজে আসে। তার সাথে কলেজে যুগান্তর প্রতিনিধির কথা হলে সে এসব কথা জানায়। শশী বলেন আমি যদি আল্লাহর রহমতে ডাক্তার হতে পারি তবে সমাজের অবহেলিত দরিদ্র মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করব।
রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রভাষক সত্যজিৎ দাস ধ্রুব যুগান্তরকে জানান, আমাদের কলেজ থেকে এবার ৭ জন শিক্ষার্থী মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার মধ্য দুইজন শিক্ষার্থীর আর্থিক দিক দিয়ে অবস্থা খুব খারাপ। শিক্ষার্থী শিমুর বাবা ভ্যানচালক। তার বেতন ছাড়া সে কলেজে পড়েছে। তার বইপত্র আমরা ফ্রি দিয়েছি। ভাল জামাও নেই তার। প্রায়দিন তার মা কলেজে এসে মেয়ের লেখাপড়ার দুর্শ্বিন্তার কথা বলত। ভাল ছাত্রী সে। এছাড়া আরেক শিক্ষার্থী শশীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমনটা ভাল নয়। তার বাবাও অনেক কষ্ট করে মেয়েকে পড়াচ্ছে। দুটি মেয়ের বিষয়ে কলেজ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করার জন্য আমরা ভাবছি।
কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সহিদুল্লাহ জানান, ভৈরবের মধ্য আমাদের কলেজটি সেরা কলেজ। এবার মেডিকেল পরীক্ষায় কলেজ থেকে ৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ২ জন শিক্ষার্থীর পরিবার অতি দরিদ্র। তাদের মেডিকেল কলেজে ভর্তির আর্থিক বিষয়টি আমরা সহযোগীতার হাত বাড়াব। তিনি সমাজের বিত্তশালীদেরকে দুজনের বিষয়ে সহযোগীতার জন্য অনুরোধ করেছেন।