১৫ জানুয়ারি, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসের ভিতরের রুম থেকে মিষ্টির দোকান কর্মচারী মোঃ শফিক মিয়া নামের এক যুবকের (৩৫) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিশোরগন্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের মোঃ সামসু মিয়ার ছেলে নিহত শফিক। আজ বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে ভৈরব বাজার হুলুদ পট্রির নিকটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ভিতরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি রুমে লাশটি পাওয়া যায়। লাশের সাথে একটি ইনহেলাল ( এজমা রোগের জন্য ব্যবহৃত) ও একটি এনড্রোয়েট মোবাইল পাওয়া গেছে। নিহতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই।
এখানে উল্লেখ্য গত বছর ৫ আগস্ট বিগত সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ অফিসটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। অফিসের ভিতর দুটি রুম রয়েছে। তার মধ্য দক্ষিণ দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ অফিস, উত্তর দিকে উপজেলা যুবলীগ অফিস ও পর্শ্বিম দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস। সবগুলি অফিসের দরজা জানালা, আসবাপত্র না থাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে । বিগত সরকার পতনের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ দলের অংগসংগঠনের কোন নেতাকর্মীকে অফিসগুলিতে দেখা যায়না।
ভৈরব বাজার কলা পট্রির আদুরি মিষ্টান্ন ভান্ডারে দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে চাকরি করত শফিক। আজ বুধবার সকাল ৯ টায় সে বাড়ী যাওয়ার কথা বলে দোকান থেকে বের হয়ে তিন ঘন্টা পর লাশ হলো। কিভাবে সে মারা গেল কেউ বলতে পারছেনা। তবে নিহতের ভাই ও দোকান মালিক বলেছে সে দীর্ঘদিন যাবত এজমার ( শ্বাসকষ্ট) রোগী ছিল। তার শ্বাসকষ্ট হলে যেখানে সেখানে শুয়ে পড়ত। পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে আজ বিকাল ৩ টার দিকে ভৈরব থানায় এসে তার লাশ সনাক্ত করে।
আদুরি মিষ্টান্ন ভান্ডারের ম্যানেজার বিকাশ দেব জানান, গত এক সপ্তাহ আগে শফিক মিয়া আমাদের দোকানে দৈনিক বেতনে চাকরি নেয়। চাকরি নেয়ার পর দেখলাম সে অসুস্থ হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। অসুস্থতার কারনে চাকরির ৭ দিনের মধ্য সে ৪ দিন ডিউটি করে। আজ বুধবার সকাল ৯ টার দিকে ইনহেলাল ( শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত) কেনার জন্য সে ৩০০ টাকা চাই এবং দুদিনের ছুটি দেয়ার অনুরোধ করে। তখন আমি টাকা দিয়ে ছুটি মন্জুর করি। তারপর সে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। ৪ ঘন্টা পর পুলিশের কাছে খবর পাই তার লাশ পাওয়া গেছে। কিভাবে সে মারা গেল বলতে পারবনা। তবে আমার ধারনা অসুস্থতার কারনে সে মারা গেছে।
তার বড় ভাই জনি মিয়া বলেন, আমি ফেসবুকে তার ছবি দেখে আজ বিকাল ৩ টায় ভৈরব থানায় ছুটে এসে লাশ সনাক্ত করি। আমার ভাই বিবাহিত ও তার একটি ২ বছর বয়সী ছেলে আছে। আমার ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট রোগ আছে দীর্ঘদিন যাবত। যখনই তার শ্বাসকষ্ট হয় তখনই সে মাটিতে শুয়ে পড়ে। এই অভ্যাস অনেকদিনের। তার কোন শত্রু সেই। বাড়ী থেকে বের হয়ে ভৈরবে এসে বিভিন্ন কাজ করত সে। গত ২৫ দিন আগে বাড়ী থেকে এসেছিল। আজ তার মৃত্যুর খবর পেলাম। কিভাবে সে মারা গেল তা জানিনা। অসুস্থতার কারনে মারা যেতে পারে তার ধারনা ।
জানা গেছে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী আজ বুধবার দুপুর ১২ টায় পরিত্যক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের মাঠে তার মটরসাইকেল রাখতে গিয়ে রুমের ভিতর লাশটি দেখতে পায়। পরে লোকজনের মধ্য ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় উৎসুক জনতা লাশ দেখতে ভীড় জমায়। এসময় জনতা পুলিশকে খবর দেয়।
দোকানের ম্যানেজার ও তার ভাইয়ের কথায় ধারনা করা হচ্ছে আজ সকালে মিষ্টির দোকান থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এলে সে শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে অফিসের ভিতরের রুমে ফ্লোরে পড়ে তার মৃত্যু হয়। এসময় ঘটনাস্থলে লোকজন না থাকায় মৃত্যুর ঘটনাটি কেউ দেখতে পায়নি।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফূয়াদ রোহানী সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় পুলিশসহ আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছি। এসময় দেখা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত অফিসের ভিতরের একটি রুমে লাশটি ফ্লোরে পড়ে আছে। লাশের সাথে একটি ইনহেলাল ও একটি এনড্রোয়েট মোবাইল পাওয়া যায়। এসময় পুলিশ তার মোবাইলের কলরেকর্ড দেখে মিষ্টির দোকানের নাম্বার পায়। পরে দোকানে যোগাযোগ করার পর ম্যানেজার বিকাশ দেব লাশ দেখে তাকে চিনতে পারে। এরপর নিহতের ভাই এসে তার লাশ সনাক্ত করে। তিনি বলেন, তার ভাইয়ের কথা বুঝা গেল সে দীর্ঘদিন যাবত শ্বাসকষ্ট রোগে ভূগছিল। ঘটনাস্থলে সে কখন কিভাবে এল বা কিভাবে তার মৃত্যু হলো তা পুলিশ তদন্ত করবে। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগন্জ পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।