৭ জানুয়ারী, নিজস্ব প্রতিনিধি।।
ভৈরবে ইমন মিয়া (২৭) নামের এক যুবককে শুশুরবাড়ীতে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শ্বাশুড়িকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। শহরের কমলপুর এলাকার হারুন মিয়ার ছেলে নিহত ইমন। গতকাল সোমবার রাতে নিহতের বাবা হারুন মিয়া বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো শ্বাশুড়ি হাফছা বেগম, স্ত্রী আরজুদা আক্তার বীথিকা, শ্যালক তন্ময়, প্রতিবেশী দয়াল মিয়ার ছেলে সাজন, রাজন ও বিজন। ঘটনার বিষয়ে শুশুরবাড়ীর লোকজন বলছে ইমনকে তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট। ইমন নিজেই শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহত ইমন ও তার শুশুরবাড়ী ভৈরব শহরের একই এলাকা কমলপুর গ্রামে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ( ২ জানুয়ারি) ইমন তার স্ত্রীকে আনতে শুশুরবাড়ী যায়। এর আগে তার স্ত্রী গত ৩১ ডিসেম্বর তাকে নোটারি পাবলিক করে তালাক দেয়। স্ত্রীর অভিযোগ ছিল স্বামী ইমন মাদকাসক্ত ও তাকে প্রায়ই মারধোর করে। তালাকের ঘটনাটি স্বামী জানতনা। একারনে স্ত্রী আরজুদা তার সাথে স্বামীর বাড়ী যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তারপরও জোর করে স্ত্রীকে নিতে চাইলে শুশুর বাড়ীর লোকজন তাকে মারধোর করে। এতে রাগ করে ইমন তার শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। তার অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠিয়ে দেন। দুইদিন ঢাকায় চিকিৎসার পর গত শনিবার ইমন হাসপাতালে মারা যায়। তারপর ময়না তদন্ত শেষে ওইদিন রাতেই তাকে ভৈরবে এনে কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, গত ৪ বছর আগে ইমনের সাথে আরজুদা আক্তার বীথির পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তাদের একটি মেয়ে সন্তান আছে। বিয়ের পর থেকে দুজনের দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। ইমন এলাকার চিন্হিত ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বামীর অত্যাচার, নির্যাতন এতদিন সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী কয়েকদিন আগে বাবার বাড়ী চলে আসে। এরপর বাবার বাড়ীতে থেকেই গত ৩১ ডিসেম্বর স্ত্রী তার স্বামী ইমনকে তালাক দেয়। তালাকের ঘটনাটি জানা না থাকায় সে তার স্ত্রীকে শুশুরবাড়ী থেকে আনতে গিয়ে ঘটনাটি ঘটে।
এবিষয়ে তার স্ত্রী আরজুদা বলেন, ইমন একজন অত্যাচারি স্বামী। সে নেশাখোর, ছিনতাইকারী। একারনে আমি তার সংসার করবনা ভেবে তাকে তালাক দিয়েছি। তারপরও ঘটনার দিন সে আমার বাবার বাড়ী এসে জোর করে আমাকে নিতে চাই। আমি তার বাড়ী যেতে না চাইলে সে হাতে বোতলে নিয়ে আসা পেট্রোল দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকার হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধতায় মারা যায়।
ইমনের বাবা মামলার বাদী মোঃ হারুন মিয়া জানান, ঘটনার দিন আমার ছেলে তার স্ত্রীকে আনতে গেলে শুশুরবাড়ীর লোকজনসহ প্রতিবেশী কয়েকজন আমার ছেলে প্রচুর মারধোর করে। পরে তার শরীরে তারা আগুন ধরিয়ে দিলে সে গুরুতর আহত হয়ে পরে ঢাকার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার পেতে থানায় মামলা করেছি।
এব্যাপারে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, গতকাল সোমবার রাতে ঘটনার অভিযোগ করে নিহত ইমনের বাবা। বাদী মামলায় ৬ জনকে আসামী করেছে। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবে বলে তিনি জানান।