৫ ডিসেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্রগ্রাম আদালতের আইনজীবি এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী চন্দন (৩৫) কে ভৈরব থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গতকাল বুধবার রাত ১১. ৪০ মিনিটে থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করে। চট্রগ্রাম বান্ডেল রোডের সেবক কলোনির মেথরপট্রি এলাকার মৃত ধারী’র ছেলে চন্দন। এসময় আসামী চন্দন ট্রেন থেকে নেমে তার ভৈরবস্থ মেথর পট্রি শুশুরের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। সে মামলার ১ নং আসামী বলে পুলিশ জানায়। গ্রেফতারের খবর চট্রগ্রাম কোতোয়ালী থানা পুলিশকে রাতেই অবহিত করা হলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্রগ্রাম পুলিশ ভৈরব থানায় এসে তাকে নিয়ে যায়।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, ঘটনার পর চট্রগ্রাম কোতোয়ালী থানায় এবিষয়ে মামলা হলে মামলার প্রধান আসামী চন্দনকে ধরতে চট্রগ্রাম ডিবি গত দুদিন যাবত ভৈরবে অবস্থান করছিল। ডিবি জানতে পারে আসামী চন্দনের শুশুরবাড়ী ভৈরব এলাকায়। কিন্ত ডিবি তার খোঁজ পাচ্ছিলনা। বুধবার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে সে ভৈরবে অবস্থান করছে। পরে এখবর ডিবি আমাদেরকে জানালে ভৈরব শহর পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই মোঃ সাইফুলসহ আমি সন্ধ্যার পর থেকে ভৈরব রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়। বুধবার রাত ১১.৪০ মিনিটের দিকে আমি ওসি শাহিন মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে রেলস্টেশন এলাকা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন চন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ট্রেনে চট্রগ্রাম থেকে রাওয়ানা হয়ে রাত সাড়ে ৭ টায় ভৈরব রেলস্টেশনে নামে। তার শুশুরবাড়ী ভৈরবের মেথরপট্রিতে। ট্রেন থেকে নেমে সে স্টেশনে ঘূরাঘূরি করছিল। তার ইচ্ছা ছিল রাত গভীর হলে শুশুরের বাসায় যাবে । এরই মধ্য আমরা তাকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারের বিষয়টি চট্রগ্রাম কোতোয়ালী থানা পুলিশকে রাতেই অবগত করা হলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্রগ্রাম থেকে পুলিশের একটি দল ভৈরব থানায় এসে তাকে নিয়ে যায়। ভৈরব থানার ওসি মোঃ শাহিন ও শহর ফাঁড়ির পুলিশ এটিএসআই সাইফুল ইসলামের কৌশলের কারনে আসামী চন্দন ভৈরবে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী চন্দন ভৈরব থানায় যুগান্তর প্রতিনিধির নিকট বলেন, ঘটনার দিন আমি মদ খেয়ে নেশাগ্রস্থ ছিলাম। আমি দেখলাম, আমার সঙ্গীগন আইনজীবিকে মারধোর করছে। এসময় মদের নেশার ঘোরে তাকে আমিও মারধোর করেছি। পরে শুনেছি তিনি মারা গেছেন। ঘটনায় আমি আসামী হয়েছি খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বুধবার আমি ট্রেনে ভৈরবে এসে শুশুরের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। ভাবছিলাম পালিয়ে থাকব। কিন্ত ধরা খেলাম পুলিশের হাতে।
গত ২৬ নভেম্বর চট্রগ্রামের এসি দত্ত রোডের এক বিল্ডিংয়ের সামনে আইনজীবি সাইফুল ইসলামকে আসামীরা কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে চট্রগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার এজাহারে ১ নং আসামী ভৈরবে গ্রেফতারকৃত চন্দন। এই মামলায় চট্রগ্রাম পুলিশ আগেই ৯ জনকে গ্রেফতার করলেও প্রধান আসামী চন্দন ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল। অবশেষে সে বুধবার রাতে ভৈরব থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চট্রগ্রাম কোতোয়ালী জেনের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার সকালে মোবাইলে যুগান্তর প্রতিনিধিকে জানান, মামলার আসামীরা ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার হলে ক্ষুদ্ধ হয়। ঘটনার দিন আইনজীবি সাইফুল ইসলাম কোর্ট থেকে তার বাসায় ফেরার সময় একটি রোডে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে আসামী করে বাদী। ভৈরবে মামলার প্রধান আসামী চন্দন গ্রেফতার হয়েছে বুধবার রাতেই শুনেছি। ঘটনাটি চট্রগামে আলোচিত বিষয়। তাকে ভৈরব থেকে চট্রগ্রাম আনার পর আদালতে হাজির করা হবে। মামলাটি সুষ্ঠু নিরেপেক্ষ তদন্ত করে সকল অপরাধীদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।