ভৈরবে বাসায় স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের।  ৪ জন একসাথে মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটন করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৪২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৫৮ Time View

২৭ নভেম্বর, বিশেষ প্রতিনিধি:

ভৈরবে বাসায় স্বামী – স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করল নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস ( মামলা নং ৪১)। আজ বুধবার সকালে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে মা এই মামলাটি দায়ের করেন। একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরববাসী হতবাক শোকে কাতর হয়ে গেছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ, ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই, সিআইডি  মাঠে নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার  বিকেলে ঘটনার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৭ টায়  কিশোরগন্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও পুলিশের ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই, সিআইডির কর্মকর্তাগন  ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করেন। একসঙ্গে ৪ জনের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে তারাও হতবাক। আজ বুধবার সকালে নিহত ৪ জনের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগন্জ পাঠিয়েছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়  ভৈরবের রানীর বাজার শাহজাহান মিয়ার সাততলা ভবনের একটি বাসা থেকে স্বামী জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩০), তার স্ত্রী নিপা রানী বিশ্বাস (২৬), তাদের ছেলে ধ্রুব চন্দ্র বিশ্বাস (৮), মেয়ে কথা চন্দ্র বিশ্বাস (৬) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত অবস্থায় খাটে ছিল ও স্বামী জনি রুমের পাখার সাথে গলায় কাপড় দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারনা সোমবার রাতের কোন এক সময়ে  স্বামী প্রথমে তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর দুই সন্তানকে হত্যা করে সে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানায় স্ত্রী নিপা ৫ মাসের গর্ভবতি ছিল। নিহত জনি বিশ্বাস দীর্ঘদিন যাবত  ভৈরব বাজারের একটি ওয়ার্কশপে লেদ মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করত। 

আজ বুধবার জনপদ সংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তাদের মৃত্যুর নানা রহস্য। বিষয়টি নিয়ে জনপদ সংবাদ এর বিশেষ প্রতিনিধি বাসার মালিক, প্রতিবেশী, ওয়ার্কশপ মালিক, পুলিশের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে নানা কাহিনী।

ভবন মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিনমাস আগে জনি তার পরিবার নিয়ে বাসাটি সাড়ে ছয় হাজার টাকা মাসে ভাড়া নেন। তবে তার বাসায় কার্তিক বর্মন নামের এক শ্রমিক সাবলিজ হিসেবে অর্ধেক ভাড়ায় থাকত। তার ( কার্তিকের)  স্ত্রীর নাম সৃষ্টি বর্মন। তাদের একটি ছোট মেয়ে আছে। একই বাসায় দুইরুমে দুটি পরিবার বসবাস করত। সাবলিজ নেয়া কার্তিকের স্ত্রী  সৃষ্টি বলেন,  গত রবিবার জনি তার পরিবার নিয়ে বাবার বাড়ী নরসিংদির রায়পুরা থানার আনোয়ারাবাদ গ্রামে বেড়াতে যায়।   সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় তারা বাসায় ঢুকেন। এদিন রাতে আমি স্বামীকে নিয়ে মাজারে যায়। রাত সাড়ে ১১ টায় আমরা বাসায় ফিরে দেখি জনির রুমের দরজা বন্ধ। মনে করেছি তারা ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘূম থেকে উঠলেও তাদের খবর নেয়নি। ধারনা ছিল তারা হয়তো রুমে ঘুমিয়ে আছে। দুপুর আড়াইটায় ওয়ার্কশপ থেকে জনিকে খোঁজতে এসে ঘটনা ধরা পরলে আমরা তাদের লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ আসে।

কথা হয় ভৈরব বাজারের বিপুল ওয়ার্কশপ মালিক বিপুলের সাথে। তিনি বলেন জনি আমার ওয়ার্কশপে ৪ বছর চাকরি করেছে। তবে দেড় বছর আগে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। চলাফেরায় তাকে ভাল দেখতাম। তবে অনেকে বলেছে সে নেশা করত। তার আপন ভাই পলাশ এখনও আমার দোকানে চাকরি করে। মঙ্গলবার বিকেলে শুনলাম তাদের মৃত্যুর ঘটনা।

ভৈরব বাজার বাগানবাড়ী এলাকার মায়ের দোয়া ওয়ার্কশপে জনি বর্মন চাকরি করত। মাসিক বেতন ছিল ২৮ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন খোরাকির টাকা ছিল ১০০ টাকা। এই ওয়ার্কশপের কর্মচারী জোটন প্রমানিক। তারই খালাত ভাই জনি। জোটন বলেন, গত রোববার দুপুর পর্যন্ত দোকানে কাজ করে জনি তার বাড়ী যাওয়ার কথা বলে দেড়দিনের ছুটি নেয়। কথা ছিল মঙ্গলবার সকালে দোকানে কাজে আসবে। এদিন সকালে দোকানে না আসায় মালিক আমাকে সকাল সাড়ে ১০ টায়  তার বাসায় পাঠায়। আমি বাসায় গিয়ে তার রুমে ডাকাডাকি করলে কেউ সারাশব্দ দেয়নি। আমি মনে করেছি তারা ঘুমিয়ে আছে। পরে দোকানে চলে আসি। দুপুরে মালিক আবারও তাকে আনতে বাসায় পাঠায়। দুপুর আড়াইটায় তার বাসায় গিয়ে রুম বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করলে কারো সারা মেলেনি। তখন প্রতিবেশী রুমমেট সৃষ্টিকে ঘটনাটি অবহিত করে বাসার মালিককে খবর দেয়। এসময় প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে রুমের ছিদ্র দিয়ে দেখি জনি পাখার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে। পরে রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখি স্ত্রী ও দুই সন্তান খাটে মৃত ও জনি গলায় ফাঁস নিয়েছে। তারপর বাসার মালিকসহ অন্যরা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। নিহত জনির ছোট ভাই পলাশ বলেন, আমার ভাই পরিবারসহ রোববার আমাদের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। দেড়দিন থেকে সোমবার ভৈরবের বাসায় চলে আসে। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর খবর পায়।

মা শিখা রানী জানান, আমার ছেলে তার পরিবারসহ দেড়দিন আমার বাড়ীতে বেড়ানোর পর সোমবার ভৈরব চলে আসে। তাদের পরিবারে কোন কলহ ছিলনা। সুন্দর সংসার ছিল। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরবে এসে লাশ দেখলাম। এব্যথা বেদনা আমি সহ্য করতে পারছিনা। আমার ধারনা তাদের মৃত্যুর কোন রহস্য আছে। তাই আমি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি। পুলিশ ঘটনার রহস্য বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত কয়েকদিন  আগে জনির স্ত্রী নিপার মন খারাপ দেখে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি কেন মন খারাপ। জবাবে মন খারাপের কারন বলেনি। পরিবারটি দরিদ্র ছিল। প্রায়দিন দেখতাম এককেজি চাল ও ১০ টাকার তেল দোকান থেকে এনে রান্না করত। কি কারনে এঘটনা ঘটল বুঝতে পারছিনা।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, গতকাল লাশ উদ্ধার করে আজ সকালে লাশের ময়না তদন্ত করতে লাশগুলি কিশোরগন্জ পাঠিয়েছি। ঘটনায় জনির মা বাদি হয়ে থানায় বুধবার সকালে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে  একটি হত্যা মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিশোরগন্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী জনপদ সংবাদ প্রতিনিধিকে মোবাইলে জানান, খবর পেয়ে আমি মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা বলেছেন জনি বর্মন নেশা করত গোপনে। মাদকাসক্ত হয়ে ঘটনাটি ঘটাতে পারে জনি।  আমাদের ধারনা জনি প্রথমে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে। রুমে রক্তের দাগে তাই মনে হয়। তাদেরকে হত্যার পর সে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারনা। তদন্তে সবকিছু বের হবে। তিনি বলেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশের ক্রাইম টিম, পিবিআই, সিআইডি, পুলিশ মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন  যত দ্রুত সম্ভব তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে বাসায় স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের।  ৪ জন একসাথে মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটন করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।।

Update Time : ০৩:৪২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

২৭ নভেম্বর, বিশেষ প্রতিনিধি:

ভৈরবে বাসায় স্বামী – স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করল নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাসের মা শিখা রানী বিশ্বাস ( মামলা নং ৪১)। আজ বুধবার সকালে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে মা এই মামলাটি দায়ের করেন। একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরববাসী হতবাক শোকে কাতর হয়ে গেছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ, ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই, সিআইডি  মাঠে নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার  বিকেলে ঘটনার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৭ টায়  কিশোরগন্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও পুলিশের ক্রাইমসিন বিভাগ, পিবিআই, সিআইডির কর্মকর্তাগন  ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করেন। একসঙ্গে ৪ জনের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে তারাও হতবাক। আজ বুধবার সকালে নিহত ৪ জনের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগন্জ পাঠিয়েছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়  ভৈরবের রানীর বাজার শাহজাহান মিয়ার সাততলা ভবনের একটি বাসা থেকে স্বামী জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩০), তার স্ত্রী নিপা রানী বিশ্বাস (২৬), তাদের ছেলে ধ্রুব চন্দ্র বিশ্বাস (৮), মেয়ে কথা চন্দ্র বিশ্বাস (৬) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় স্ত্রী ও দুই সন্তান মৃত অবস্থায় খাটে ছিল ও স্বামী জনি রুমের পাখার সাথে গলায় কাপড় দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশের ধারনা সোমবার রাতের কোন এক সময়ে  স্বামী প্রথমে তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর দুই সন্তানকে হত্যা করে সে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানায় স্ত্রী নিপা ৫ মাসের গর্ভবতি ছিল। নিহত জনি বিশ্বাস দীর্ঘদিন যাবত  ভৈরব বাজারের একটি ওয়ার্কশপে লেদ মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করত। 

আজ বুধবার জনপদ সংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তাদের মৃত্যুর নানা রহস্য। বিষয়টি নিয়ে জনপদ সংবাদ এর বিশেষ প্রতিনিধি বাসার মালিক, প্রতিবেশী, ওয়ার্কশপ মালিক, পুলিশের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে নানা কাহিনী।

ভবন মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিনমাস আগে জনি তার পরিবার নিয়ে বাসাটি সাড়ে ছয় হাজার টাকা মাসে ভাড়া নেন। তবে তার বাসায় কার্তিক বর্মন নামের এক শ্রমিক সাবলিজ হিসেবে অর্ধেক ভাড়ায় থাকত। তার ( কার্তিকের)  স্ত্রীর নাম সৃষ্টি বর্মন। তাদের একটি ছোট মেয়ে আছে। একই বাসায় দুইরুমে দুটি পরিবার বসবাস করত। সাবলিজ নেয়া কার্তিকের স্ত্রী  সৃষ্টি বলেন,  গত রবিবার জনি তার পরিবার নিয়ে বাবার বাড়ী নরসিংদির রায়পুরা থানার আনোয়ারাবাদ গ্রামে বেড়াতে যায়।   সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় তারা বাসায় ঢুকেন। এদিন রাতে আমি স্বামীকে নিয়ে মাজারে যায়। রাত সাড়ে ১১ টায় আমরা বাসায় ফিরে দেখি জনির রুমের দরজা বন্ধ। মনে করেছি তারা ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘূম থেকে উঠলেও তাদের খবর নেয়নি। ধারনা ছিল তারা হয়তো রুমে ঘুমিয়ে আছে। দুপুর আড়াইটায় ওয়ার্কশপ থেকে জনিকে খোঁজতে এসে ঘটনা ধরা পরলে আমরা তাদের লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ আসে।

কথা হয় ভৈরব বাজারের বিপুল ওয়ার্কশপ মালিক বিপুলের সাথে। তিনি বলেন জনি আমার ওয়ার্কশপে ৪ বছর চাকরি করেছে। তবে দেড় বছর আগে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। চলাফেরায় তাকে ভাল দেখতাম। তবে অনেকে বলেছে সে নেশা করত। তার আপন ভাই পলাশ এখনও আমার দোকানে চাকরি করে। মঙ্গলবার বিকেলে শুনলাম তাদের মৃত্যুর ঘটনা।

ভৈরব বাজার বাগানবাড়ী এলাকার মায়ের দোয়া ওয়ার্কশপে জনি বর্মন চাকরি করত। মাসিক বেতন ছিল ২৮ হাজার টাকা এবং প্রতিদিন খোরাকির টাকা ছিল ১০০ টাকা। এই ওয়ার্কশপের কর্মচারী জোটন প্রমানিক। তারই খালাত ভাই জনি। জোটন বলেন, গত রোববার দুপুর পর্যন্ত দোকানে কাজ করে জনি তার বাড়ী যাওয়ার কথা বলে দেড়দিনের ছুটি নেয়। কথা ছিল মঙ্গলবার সকালে দোকানে কাজে আসবে। এদিন সকালে দোকানে না আসায় মালিক আমাকে সকাল সাড়ে ১০ টায়  তার বাসায় পাঠায়। আমি বাসায় গিয়ে তার রুমে ডাকাডাকি করলে কেউ সারাশব্দ দেয়নি। আমি মনে করেছি তারা ঘুমিয়ে আছে। পরে দোকানে চলে আসি। দুপুরে মালিক আবারও তাকে আনতে বাসায় পাঠায়। দুপুর আড়াইটায় তার বাসায় গিয়ে রুম বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করলে কারো সারা মেলেনি। তখন প্রতিবেশী রুমমেট সৃষ্টিকে ঘটনাটি অবহিত করে বাসার মালিককে খবর দেয়। এসময় প্রতিবেশীরা জড়ো হয়ে রুমের ছিদ্র দিয়ে দেখি জনি পাখার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে। পরে রুমের দরজা ভেঙ্গে দেখি স্ত্রী ও দুই সন্তান খাটে মৃত ও জনি গলায় ফাঁস নিয়েছে। তারপর বাসার মালিকসহ অন্যরা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। নিহত জনির ছোট ভাই পলাশ বলেন, আমার ভাই পরিবারসহ রোববার আমাদের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। দেড়দিন থেকে সোমবার ভৈরবের বাসায় চলে আসে। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর খবর পায়।

মা শিখা রানী জানান, আমার ছেলে তার পরিবারসহ দেড়দিন আমার বাড়ীতে বেড়ানোর পর সোমবার ভৈরব চলে আসে। তাদের পরিবারে কোন কলহ ছিলনা। সুন্দর সংসার ছিল। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে ভৈরবে এসে লাশ দেখলাম। এব্যথা বেদনা আমি সহ্য করতে পারছিনা। আমার ধারনা তাদের মৃত্যুর কোন রহস্য আছে। তাই আমি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি। পুলিশ ঘটনার রহস্য বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত কয়েকদিন  আগে জনির স্ত্রী নিপার মন খারাপ দেখে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি কেন মন খারাপ। জবাবে মন খারাপের কারন বলেনি। পরিবারটি দরিদ্র ছিল। প্রায়দিন দেখতাম এককেজি চাল ও ১০ টাকার তেল দোকান থেকে এনে রান্না করত। কি কারনে এঘটনা ঘটল বুঝতে পারছিনা।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, গতকাল লাশ উদ্ধার করে আজ সকালে লাশের ময়না তদন্ত করতে লাশগুলি কিশোরগন্জ পাঠিয়েছি। ঘটনায় জনির মা বাদি হয়ে থানায় বুধবার সকালে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে  একটি হত্যা মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিশোরগন্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী জনপদ সংবাদ প্রতিনিধিকে মোবাইলে জানান, খবর পেয়ে আমি মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা বলেছেন জনি বর্মন নেশা করত গোপনে। মাদকাসক্ত হয়ে ঘটনাটি ঘটাতে পারে জনি।  আমাদের ধারনা জনি প্রথমে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে। রুমে রক্তের দাগে তাই মনে হয়। তাদেরকে হত্যার পর সে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারনা। তদন্তে সবকিছু বের হবে। তিনি বলেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশের ক্রাইম টিম, পিবিআই, সিআইডি, পুলিশ মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন  যত দ্রুত সম্ভব তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে।