ভৈরবে স্বামী স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার।। হৃদবিদারক মর্মান্তিক ঘটনা।   এলাকায় শোকের ছায়া।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩৬ Time View

২৬ নভেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবে স্বামী স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে  পৌর শহরের রানীর বাজার শাহী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান মিয়ার ৭ তলা ভবনের ৭ ম তলায় একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। পরিবারটি গত তিনমাস যাবত এবাসায় বসবাস করত। নিহতরা হলো জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (৩০), তাদের ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৬)। নরসিংদির রায়পুরা উপজেলার  আনারবাদ এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাস। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করত জনি। তার স্ত্রী নিপা ৫ মাসের গর্ভবতি ছিল। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ধারনা করছে গতকাল সোমবার রাতের কোন এক সময়ে স্বামী জনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে গলায় কাপড়  দিয়ে ঝুলন্ত হয়ে  আত্মহত্যা করে। পুলিশ তার বাসা থেকে  লাশ উদ্ধারের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থা দেখতে পায় এবং স্বামী জনি গলায় কাপড় লাগিয়ে  সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছিল। জনির  পৈতৃক বাড়ী রায়পুরার  আনারবাদ হলেও সে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত  ভৈরবের রানীর বাজার ভাড়া বাসায় থাকত। বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিনমাস আগে জনি এই বাসাটিতে উঠে। এই মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ভৈরবে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশ দেখতে শত শত মানুষ বাসায় ভীড় করে। পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশী সৃষ্টি বর্মন জানান, বাসার ভবনটি ৭ তলা। এই ভবনে দুই ইউনিটে ১৪ টি বাসা। তিনমাস আগে জনি এবাসাটি ভাড়া নিয়ে বাসায় উঠেন। পরিবারটি দরিদ্র। গতকাল সোমবার জনি তার  পরিবারসহ বাবার বাড়ী গিয়ে সারাদিন থেকে রাত ৯ টায় ভৈরবের বাসায় ফিরেন। রাত ১১ টার পর বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পায়। এরপর আর কিছুই জানেননা তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, বিকেল তিনটায় ওয়ার্কশপের এক কর্মচারী জনির খোঁজে বাসায় আসে। ভৈরব বাজার বাগানবাড়ীর মিজান ওয়ার্কশপে জনি কাজ করত। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সে তার কর্মস্থলে না যাওয়ায় ওয়ার্কশপ মালিক তার কর্মচারীকে তার বাসায় পাঠায়। বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ পেলে ডাকতে থাকে। এসময় দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেও ভিতর থেকে কোন সারাশব্দ না পেয়ে আমাকেসহ প্রতিবেশীদের ডেকে আনে। পরে দরজা ভেঙ্গে রুমের ভিতর জনিকে ঝুলন্ত অবস্থায় ও স্ত্রী সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। এসময় শত শত মানুষ খবর পেয়ে বাসায় ভীড় করে।

নিহত জনির মা শিখা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে গতকাল সোমবার সপরিবারে আমার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। সারাদিন বাড়ীতে  থেকে রাতে ভৈরবের বাসায় চলে আসে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফোনে খবর পায় তাদের মৃত্যুর ঘটনা। খবর পেয়ে দ্রুত ভৈরবে এসে দেখলাম আমার ছেলে, তার স্ত্রী ও দুই নাতির লাশ। এসব কথা বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, আজ বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ফোনে খবর পায় ঘটনার বিষয়টি। পরে ঘটনাস্থল বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে লাশের সুরুতহাল তৈরি করার পর  লাশগুলি উদ্ধার করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়  থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। স্থানীয়রাসহ প্রতিবেশীদের ধারনা জনি প্রথমে তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে গলায় কাপড় দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পুলিশের ধারনা তাই। কারন বাসার ফ্লোরে ও খাট রক্তাক্ত ছিল। তিনি বলেন, লাশগুলি ময়না তদন্তের পর রিপোর্ট পেলে ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবে স্বামী স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার।। হৃদবিদারক মর্মান্তিক ঘটনা।   এলাকায় শোকের ছায়া।

Update Time : ০৩:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

২৬ নভেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবে স্বামী স্ত্রীসহ দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে  পৌর শহরের রানীর বাজার শাহী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান মিয়ার ৭ তলা ভবনের ৭ ম তলায় একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। পরিবারটি গত তিনমাস যাবত এবাসায় বসবাস করত। নিহতরা হলো জনি চন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), তার স্ত্রী নিপা মল্লিক (৩০), তাদের ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৮) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৬)। নরসিংদির রায়পুরা উপজেলার  আনারবাদ এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে নিহত জনি চন্দ্র বিশ্বাস। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করত জনি। তার স্ত্রী নিপা ৫ মাসের গর্ভবতি ছিল। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ধারনা করছে গতকাল সোমবার রাতের কোন এক সময়ে স্বামী জনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে গলায় কাপড়  দিয়ে ঝুলন্ত হয়ে  আত্মহত্যা করে। পুলিশ তার বাসা থেকে  লাশ উদ্ধারের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থা দেখতে পায় এবং স্বামী জনি গলায় কাপড় লাগিয়ে  সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছিল। জনির  পৈতৃক বাড়ী রায়পুরার  আনারবাদ হলেও সে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত  ভৈরবের রানীর বাজার ভাড়া বাসায় থাকত। বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, গত তিনমাস আগে জনি এই বাসাটিতে উঠে। এই মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ভৈরবে শোকের ছায়া নেমে আসে। লাশ দেখতে শত শত মানুষ বাসায় ভীড় করে। পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশী সৃষ্টি বর্মন জানান, বাসার ভবনটি ৭ তলা। এই ভবনে দুই ইউনিটে ১৪ টি বাসা। তিনমাস আগে জনি এবাসাটি ভাড়া নিয়ে বাসায় উঠেন। পরিবারটি দরিদ্র। গতকাল সোমবার জনি তার  পরিবারসহ বাবার বাড়ী গিয়ে সারাদিন থেকে রাত ৯ টায় ভৈরবের বাসায় ফিরেন। রাত ১১ টার পর বাসার দরজা বন্ধ দেখতে পায়। এরপর আর কিছুই জানেননা তিনি।

বাসার মালিকের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, বিকেল তিনটায় ওয়ার্কশপের এক কর্মচারী জনির খোঁজে বাসায় আসে। ভৈরব বাজার বাগানবাড়ীর মিজান ওয়ার্কশপে জনি কাজ করত। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সে তার কর্মস্থলে না যাওয়ায় ওয়ার্কশপ মালিক তার কর্মচারীকে তার বাসায় পাঠায়। বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ পেলে ডাকতে থাকে। এসময় দরজায় জোরে ধাক্কা দিলেও ভিতর থেকে কোন সারাশব্দ না পেয়ে আমাকেসহ প্রতিবেশীদের ডেকে আনে। পরে দরজা ভেঙ্গে রুমের ভিতর জনিকে ঝুলন্ত অবস্থায় ও স্ত্রী সন্তানকে খাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। এসময় শত শত মানুষ খবর পেয়ে বাসায় ভীড় করে।

নিহত জনির মা শিখা রানী বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলে গতকাল সোমবার সপরিবারে আমার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। সারাদিন বাড়ীতে  থেকে রাতে ভৈরবের বাসায় চলে আসে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফোনে খবর পায় তাদের মৃত্যুর ঘটনা। খবর পেয়ে দ্রুত ভৈরবে এসে দেখলাম আমার ছেলে, তার স্ত্রী ও দুই নাতির লাশ। এসব কথা বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহিন মিয়া জানান, আজ বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ফোনে খবর পায় ঘটনার বিষয়টি। পরে ঘটনাস্থল বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে লাশের সুরুতহাল তৈরি করার পর  লাশগুলি উদ্ধার করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়  থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। স্থানীয়রাসহ প্রতিবেশীদের ধারনা জনি প্রথমে তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করার পর নিজে গলায় কাপড় দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পুলিশের ধারনা তাই। কারন বাসার ফ্লোরে ও খাট রক্তাক্ত ছিল। তিনি বলেন, লাশগুলি ময়না তদন্তের পর রিপোর্ট পেলে ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।