মামলা হলে এজাহারে নাম থাকলেই গ্রেফতার নয়, ভৈরবে এনির্দেশ মানা হচ্ছেনা। অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩০:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩২ Time View

১৩ নভেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার নির্দেশনা দিয়েছেন মামলা হলেই গ্রেফতার হয়রানী নয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার ঢাকায় একই নির্দেশনা দিয়েছেন। ভৈরবে আইন শৃংখলা বাহিনী এনির্দেশনা মানছেনা। পুলিশ, র‍্যাব, যৌথবাহিনী  একাধিক মামলার এজাহার নামীয় আসামী একের পর এক গ্রেফতার করছে। অনেক মামলায় এজাহার নামীয় আসামীরা নিরীহ বা রাজনীতি বা অপরাধের সাথে জড়িত নয় এমন আসামীদেরকে আটক করছে, গ্রেফতার করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ক্রাব নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে  ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান বলেছেন থানায় মামলা রেকর্ড হলেই এজাহারনামীয় আসামী ধরতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আসামী ধরা হবে তদন্ত সাপেক্ষ। গণহারে মামলা ও এজাহারে সাংবাদিকদের নাম দেওয়া প্রসঙ্গে ডিএমপির কমিশনার বলেছেন এজাহারে নাম থাকলেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে বিষয়টা এরকম নয়। কালেকটিভ তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে এভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত একমাস যাবত ভৈরবে পুলিশ, র‍্যাবসহ যৌথ বাহিনী প্রতিদিন এজাহারনামীয় আসামী গ্রেফতার করে কিশোরগন্জ আদালতে চালান দেয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার মোস্তাফিজুর রহমান খোকন, এর আগের দিন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, শহীদুল্লাহ কায়সারকে র‍্যাব গ্রেফতার করে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় কোন কোন মামলার এজাহারভূক্ত আসামী। এর কয়েকদিন আগে জনি নামের এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তিনি এজাহারভুক্ত আসামী ছিলনা। ঠিক এমনিভাবে একাধিক মামলার আসামীকে ভৈরবের আইনশৃংখলা বাহিনী একের পর এক গ্রেফতার করছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্য অনেকেই ছাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা কোন অপরাধে জড়িত ছিলনা বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার কারনে বা নৌকায় ভোট দিয়েছে এমন সন্দেহ পোষনে, অথবা পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারনে তাদেরকে বাদীগন হয়রানী করতে আসামী করেছে এমনটা মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দাগন। গতকাল গ্রেফতার হওয়া খোকন একজন ভাল মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সে কোন রাজনীতি বা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল এমনটি কোন প্রমান নেই।

গত ৪ আগস্ট ভৈরবের কিশোর জোবায়েদ (১৬) যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এদাবি তার পরিবারের। কিন্ত ভৈরবের সাবেক যুবলীগ নেতা ও প্রতারক হিসেবে পরিচিত মোঃ মনির হোসেন এঘটনাকে অপহরণ দেখিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ভৈরবের ৯১ জনকে আসামী করে একটি মিথ্যা মামলা করেছে গত ১ সেপ্টেম্বর। এই মামলায় কয়েকজন প্রবাসীসহ তিনজন সাংবাদিককে আসামী করেছে। নিহতে পরিবারের মা – বাবা বলেছে আমার ছেলে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ভৈরবের কোন লোক আমার ছেলেকে হত্যা করেনি। নিহতের মায়ের জবানবন্দির ভিডিও  যুগান্তর প্রতিনিধির নিকট সংরক্ষিত আছে। অভিযোগ রয়েছে মনির মামলা করার পর আসামীদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে আসামীর নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করবে বলে।

ভৈরবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে তদন্ত ছাড়াই প্রতিদিন বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করার কারনে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিকার দাবি করছে স্থানীয়রা। তবে কেউ  প্রকৃত অপরাধী বা দোষ  করলে তাকে গ্রেফতার করতে স্থানীয়দের আপত্তি নেই।

মোস্তাফিজ রহমান খোকনের মামা সহীদুল কবির বলেন, মঙ্গলবার আমার ভাগ্নেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। খোকন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা বা কোন অপরাধ করেনি। কেন তাকে কারা আসামী করল তা আমরা জানিনা। তার মুক্তির দাবি করেন তিনি। একই কথা বললেন গ্রেফতারকৃত মানিকের মামা আক্রাম হোসেন।

স্থানীয় সাংবাদিক কাজী মাছুম ও অপু বলেন, যাত্রাবাড়ী থানায় জোবায়েদ হত্যা মামলায় আমাদের ভৈরবের  তিনজন সাংবাদিককে  মিথ্যা আসামী করা হয়েছে। বাদী মনির একজন প্রতারক। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে বাদীর   বিচার দাবি করেন তারা। 

এবিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, ছাত্রবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। মামলাগুলির এজাহার কপি Rab ক্যাম্প সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। এখন তারা এজাহারের নাম দেখে আসামী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলে আমরা গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়। গত একমাসে পুলিশ ২/৩ জন ছাড়া বাকী সব আসামী তারা ধরেছে। এতে আমার কি করার আছে। পুলিশ তদন্তে প্রামান ছাড়া কোন আসামী গ্রেফতার করেনি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন Rab আলাদা একটা বাহিনী। তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

মামলা হলে এজাহারে নাম থাকলেই গ্রেফতার নয়, ভৈরবে এনির্দেশ মানা হচ্ছেনা। অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ।।

Update Time : ০৫:৩০:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

১৩ নভেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার নির্দেশনা দিয়েছেন মামলা হলেই গ্রেফতার হয়রানী নয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার ঢাকায় একই নির্দেশনা দিয়েছেন। ভৈরবে আইন শৃংখলা বাহিনী এনির্দেশনা মানছেনা। পুলিশ, র‍্যাব, যৌথবাহিনী  একাধিক মামলার এজাহার নামীয় আসামী একের পর এক গ্রেফতার করছে। অনেক মামলায় এজাহার নামীয় আসামীরা নিরীহ বা রাজনীতি বা অপরাধের সাথে জড়িত নয় এমন আসামীদেরকে আটক করছে, গ্রেফতার করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ক্রাব নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে  ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান বলেছেন থানায় মামলা রেকর্ড হলেই এজাহারনামীয় আসামী ধরতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আসামী ধরা হবে তদন্ত সাপেক্ষ। গণহারে মামলা ও এজাহারে সাংবাদিকদের নাম দেওয়া প্রসঙ্গে ডিএমপির কমিশনার বলেছেন এজাহারে নাম থাকলেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে বিষয়টা এরকম নয়। কালেকটিভ তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে এভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত একমাস যাবত ভৈরবে পুলিশ, র‍্যাবসহ যৌথ বাহিনী প্রতিদিন এজাহারনামীয় আসামী গ্রেফতার করে কিশোরগন্জ আদালতে চালান দেয়া হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার মোস্তাফিজুর রহমান খোকন, এর আগের দিন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, শহীদুল্লাহ কায়সারকে র‍্যাব গ্রেফতার করে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় কোন কোন মামলার এজাহারভূক্ত আসামী। এর কয়েকদিন আগে জনি নামের এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তিনি এজাহারভুক্ত আসামী ছিলনা। ঠিক এমনিভাবে একাধিক মামলার আসামীকে ভৈরবের আইনশৃংখলা বাহিনী একের পর এক গ্রেফতার করছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্য অনেকেই ছাত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা কোন অপরাধে জড়িত ছিলনা বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার কারনে বা নৌকায় ভোট দিয়েছে এমন সন্দেহ পোষনে, অথবা পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারনে তাদেরকে বাদীগন হয়রানী করতে আসামী করেছে এমনটা মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দাগন। গতকাল গ্রেফতার হওয়া খোকন একজন ভাল মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সে কোন রাজনীতি বা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল এমনটি কোন প্রমান নেই।

গত ৪ আগস্ট ভৈরবের কিশোর জোবায়েদ (১৬) যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এদাবি তার পরিবারের। কিন্ত ভৈরবের সাবেক যুবলীগ নেতা ও প্রতারক হিসেবে পরিচিত মোঃ মনির হোসেন এঘটনাকে অপহরণ দেখিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ভৈরবের ৯১ জনকে আসামী করে একটি মিথ্যা মামলা করেছে গত ১ সেপ্টেম্বর। এই মামলায় কয়েকজন প্রবাসীসহ তিনজন সাংবাদিককে আসামী করেছে। নিহতে পরিবারের মা – বাবা বলেছে আমার ছেলে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ভৈরবের কোন লোক আমার ছেলেকে হত্যা করেনি। নিহতের মায়ের জবানবন্দির ভিডিও  যুগান্তর প্রতিনিধির নিকট সংরক্ষিত আছে। অভিযোগ রয়েছে মনির মামলা করার পর আসামীদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে আসামীর নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করবে বলে।

ভৈরবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে তদন্ত ছাড়াই প্রতিদিন বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করার কারনে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিকার দাবি করছে স্থানীয়রা। তবে কেউ  প্রকৃত অপরাধী বা দোষ  করলে তাকে গ্রেফতার করতে স্থানীয়দের আপত্তি নেই।

মোস্তাফিজ রহমান খোকনের মামা সহীদুল কবির বলেন, মঙ্গলবার আমার ভাগ্নেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। খোকন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা বা কোন অপরাধ করেনি। কেন তাকে কারা আসামী করল তা আমরা জানিনা। তার মুক্তির দাবি করেন তিনি। একই কথা বললেন গ্রেফতারকৃত মানিকের মামা আক্রাম হোসেন।

স্থানীয় সাংবাদিক কাজী মাছুম ও অপু বলেন, যাত্রাবাড়ী থানায় জোবায়েদ হত্যা মামলায় আমাদের ভৈরবের  তিনজন সাংবাদিককে  মিথ্যা আসামী করা হয়েছে। বাদী মনির একজন প্রতারক। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে বাদীর   বিচার দাবি করেন তারা। 

এবিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, ছাত্রবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। মামলাগুলির এজাহার কপি Rab ক্যাম্প সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে। এখন তারা এজাহারের নাম দেখে আসামী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলে আমরা গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়। গত একমাসে পুলিশ ২/৩ জন ছাড়া বাকী সব আসামী তারা ধরেছে। এতে আমার কি করার আছে। পুলিশ তদন্তে প্রামান ছাড়া কোন আসামী গ্রেফতার করেনি বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন Rab আলাদা একটা বাহিনী। তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।