১৩ অক্টোবর, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবের মেঘনা নদীতে প্রতিদিন নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বাড়ছে। গত দেড়মাসে কয়েকটি ট্রলার ও লঞ্চে ডাকাতরা ডাকাতি করে লাখ লাখ টাকা ও মালামাল লুট করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নদীতে নৌ- পুলিশের টহল না থাকায় ডাকাতদের উপদ্রবে ট্রলারের মাঝিরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
আজ রোববার দুপুরে একদল ট্রলার মাঝি ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অফিসে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট এই অভিযোগ করেন। এসময় মাঝিরা বলেন নদীতে নৌ- ডাকাতরা ডাকাতির সময় বাধা দিলে কয়েকজন যাত্রীসহ মাঝিদের ছুরিকাঘাত করে আহত করে। ভৈরব নৌ- থানায় এবিষয়ে মাঝিরা একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে তাদের অভিযোগ। এছাড়া ডাকাতদল মেঘনা নদীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চেও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, গতকাল শনিবার ভোরে ভৈরব – ওরাইলগামী মহিউদ্দিন মাঝির ট্রলারে নৌ- ডাকাতরা ডাকাতি করে প্রায় দুইলাখ নগদ টাকাসহ লাখ টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভৈরব – সরাইলগামী নরিছলাম মাঝির ট্রলারে ডাকাতি সংগঠিত হয়। এসময় ডাকাতরা দেড়লাখ টাকার মালামালসহ নগদ টাকা নিয়ে যায়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভৈরব – সাচনাগামী এম এল বৃষ্টি নামের একটি লঞ্চ ভৈরব ঘাট থেকে রাতে ছেড়ে বাজিতপুর এলাকার ঘোড়াউত্রা ও কালনী নদীর সংযোগস্থলের সোনা মিয়ার চর নামক স্থানে পৌঁছলে একদল নৌ- ডাকাত একটি ইন্জিনচালিত কুসা নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লঞ্চে উঠে ডাকাতরা যাত্রীদের উপর হামলা চালায়। এসময় ডাকাতরা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধোর করে একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকাসহ যাত্রীদের ৩০ টি মোবাইল, কয়েক ভরি স্বর্ন ও মূল্যবান জিনিষপত্র লুট করে পালিয়ে যায়। এব্যাপারে লঞ্চের সুকানী ধীরেন্দ্র দাস বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করে। মেঘনা নদীতে প্রতিদিন এধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও নৌ- পুলিশ কোন প্রতিকার করছেনা মাঝিদের অভিযোগ। ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার সরাইল থানার ধোবাজাইল, পানিশ্বর, রাজাপুর, আশুগন্জ বিদ্যুত তাপকেন্দ্র সংলগ্ন, ভৈরবের মেন্দিপুর, খলাপাড়া, বাজিতপুরের ঘোড়াউত্রা কালী নদীতে ডাকাতির ঘটনাগুলি ঘটছে। এখানে উল্লেখ্য হাওরের সুনামগন্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগন্জ ও ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার কিছু উপজেলার মানুষ প্রতিদিন লঞ্চ ও ট্রলারযোগে ভৈরবে যাতায়তসহ মালামাল নিতে আসে। এসব লঞ্চ ও ট্রলার প্রতিদিন ভোরে বা দুপুরে যাওয়া আসার পথে নৌ- ডাকাতরা উপদ্রব করে থাকে। ডাকাতদল নদীতে কুসা ট্রলার বা ছোট ট্রলারে ডাবল ইন্জিন লাগিয়ে চলাচল করে। ডাকাতরা নদীতে নিরব স্থানে উৎ পেতে ট্রলার নিয়ে বসে থাকে। লঞ্চ ট্রলার কাছে আসা মাত্র দ্রুত গতিতে কুসা ট্রলার চালিয়ে হামলা চালায়। অস্ত্রের ভয়ের মুখে মাঝিরা যাত্রীদের নিয়ে ডাকাতদের প্রতিহত করতে পারেনা বলে মাঝিরা জানায়।
হাওরে চলাচলকারী ট্রলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল্লাহ অভিযোগে জানান, বিগত সরকার পতনের পর থেকে গত দেড়মাস যাবত মেঘনা নদীতে নৌ- ডাকাতদের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৈরব থেকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সরাইল এলাকায় প্রতিদিন ১৮ টি ট্রলার চলাচল করে থাকে। গত দেড়মাসে তিনটি ডাকাতি হয়েছে। এসব ঘটনায় ডাকাতরা প্রায় ৭ লাখ টাকা ও ৩ লাখ টাকার স্বর্ন, মোবাইল, স্বর্নসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। ভৈরব নৌ- পুলিশকে ঘটনাগুলি অবহিত করলেও আমরা কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। রোববার দুপুরে অভিযোগ করার সময় ট্রলারের মাঝিদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন মাসুদ মিয়া, কামাল মিয়া, ফরিদ মিয়া, আনফর আলী, জাহের মিয়া, বিমল সাহা, সানু মিয়া, কালা মিয়া, রোজাউল, জাকির মিয়া মাঝি। তারা ট্রলার মাঝিরা একই অভিযোগ করে বলেন ডাকাতদের উপদ্রবে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। তারা ডাকাতদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে চাই। তানাহলে ট্রলার পেশা তারা ছাড়তে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে । আর ট্রলার নদীতে চলাচল না করলে হাওরের মানুষের জীবনযাত্রা থেমে গিয়ে বিপদে পড়বে হাওরবাসী।
বি আই ডব্লিউ টি এ’র ভৈরব লঞ্চঘাটের ইজারাদার মোঃ খবির উদ্দিন খোকা জানান, মেঘনা নদীতে নৌ- ডাকাতদের উপদ্রব বন্ধ না হলে নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রলার ব্যবসা বন্ধ করে দিবে। এতে হাওরবাসীর কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়বে।
এবিষয়ে ভৈরব নৌ- থানার পুলিশ ইনচার্জ মোঃ ফারুক হোসেন জানান, আমি থানায় যোগদান করেছি মাত্র ২০ দিন আগে। ডাকাতদের উপদ্রব করার বিষয়টি আমি অবগত হলাম। থানায় পুলিশের জনবল কম ও নদীতে পাহারার জন্য কোন যানবাহন নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করব।
কিশোরগন্জের পুলিশ সুপার মোঃ হাসান চৌধুরি এবিষয়ে শুনার পর তিনি জানান, নদীতে আইনশৃংখলা রক্ষা করার দায়িত্ব নৌ- পুলিশের। তারপরও অভিযোগটি যখন জানলাম আমি নৌ- পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ডাকাতির বিষয়টি প্রতিকারের জন্য অবগত করব।
কিশোরগন্জ অঞ্চলের নৌ – পুলিশ সুপার মোঃ আহাদুজ্জামান মিয়ার সাথে এই প্রতিনিধি এবিষয়ে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টির অভিযোগ আমার জানা ছিলনা। এখন শুনলাম। ভৈরব নৌ- থানায় পুলিশের সংখ্যা কম ও নদীতে পাহারার জন্য স্পিটবোর্ড বা ট্রলার ছিলনা। গতকাল শনিবার নতুন একটি স্পিডবোর্ড দেয়া হয়েছে নদীর আইনশৃংখলা রক্ষা করতে। নদীতে ডাকাতি প্রতিরোধ করতে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করব বলে তিনি জানান।