বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভৈরবের কিশোর জোবায়েদ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়।। ঘটনায় ৯১ জনকে আসামী করে   হত্যা মামলা দায়েরের পর বাদী পলাতক

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩৩ Time View

৯ অক্টোবর, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট ভৈরবের  জোবায়েদ (১৬) ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়  পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ঘটনার সময় সে চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এদাবী তার পরিবারের। কিশোর জোবায়েদ ঢাকায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ৪ আগস্ট সকালে সে তার শনির আখড়ার  বাসা থেকে বের হয়ে দুপুরে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে মারা গেলে পুলিশ তার  লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় । পরে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখোঁজি করে মর্গ থেকে লাশ উদ্ধার করে পরদিন ভৈরবে নিজ গ্রামে তাকে দাফন করে। ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে নিহত জোবায়ের। দরিদ্র পরিবারটি ঢাকার শনিবার আখড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। 

নিহত ঘটনার ২৭ দিন পর  গত ১ সেপ্টেম্বর ভৈরবের রসুলপুর গ্রামের যুবলীগের সাবেক নেতা মনির হোসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ভৈরবের ৯১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এই মামলায় কয়েকজন প্রবাসী ও ভৈরবের তিন সাংবাদিককেও আসামী করায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। মামলার বাদী নিহতের পরিবারের কোন আত্মীয়-স্বজন বা নিহত জোবায়েদের কেউ নয়। মামলায় অভিযোগ করা হয় আসামীরা ঘটনার দিন ৪ আগস্ট জোবায়েদকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণ করে একটি মাইক্রোতে তুলে হত্যার পর যাত্রাবাড়ী এলাকার কাজলা নামক স্থানে লাশ ফেলে আসামীরা পালিয়ে যায়। উক্ত মামলায় জোবায়েদের বাবা-মায়ের নাম বা তার কোন ঠিকানা লেখা হয়নি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জোবায়েদের পরিচয় ছাড়া কিভাবে মামলাটি গ্রহন করা হলো, তাকে অপহরণ করতে ৯১ জন লোক জড়িত ছিল কিভাবে। আসামীদের মধ্য ৪ জন প্রবাসী ও তিনজন সাংবাদিকের নাম আছে। তারা বিদেশে থেকে কিভাবে অপহরণে জড়িত এবং ভৈরবের তিন সাংবাদিক কেন তাকে অপহরণ করবে। নিহতের মা – বাবা বলছে আমাদের ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, তাই আমরা মামলা করতে আগ্রহী নয়, তার ভাগ্যে ছিল এমন মৃত্যু। মামলার বাদী মনির হোসেনকে নিহতের পরিবারের কেউ চেনেননা বলে তাদের দাবি। এই মামলা নিয়ে এক ধ্রুমজালের সৃষ্টি হয়েছে। কেন মামলা করল মনির হোসেন। আসামী পক্ষের  অভিযোগ রয়েছে ভৈরবের একটি কুচুক্রি মহলের প্ররোচনায় আসামীদেরকে হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা আদায় করা বাদীর মূল পরিকল্পনা বা উদ্যেশ্য রয়েছে।  ভূক্তভূগীদের দাবি এই মিথ্যা মামলা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে আসামীদেরকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে। 

এবিষয়ে জানতে  মামলার বাদী মনির হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার  ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে মোবাইলে যুগান্তর প্রতিনিধি  ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি  কলবেগ করেননি। তবে এলাকাবাসীর অনেকেই বলেছে মিথ্যা মামলা করার পর বুঝতে পেরে জান বাঁচাতে এলাকা থেকে পালিয়েছে বাদী মনির।

ভৈরব চেম্বারের সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, আমি গত ১৯ জুলাই অষ্ট্রলিয়ায় এসেছি। শুনেছি আমাকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। ভৈরবের মিনা ইসলাম মোবাইলে জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবত আমেরিকা প্রবাসী। আমাকে মামলায় কেন, কি কারনে আসামী করা হলো। সাংবাদিক মাছুম ও অপু বলেন, আমরা সাংবাদিকতা করি। নিহত জোবায়েদকেসহ বাদী মনিরকে আমরা চিনিনা। ৪ আগস্ট আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিউজ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম। জোবায়েদ মৃত্যুর ঘটনার মামলায় আমরা তিনজন সাংবাদিককে কেন আসামী করা হলো তা সুষ্ঠু তদন্ত করে বাদীর বিচার করতে হবে।

নিহত জোবায়েদের বাবা নাজির হোসেন বলেন, আমরা গরীব পরিবার। দীর্ঘদিন যাবত ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ঢাকাতে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট জোবায়েদ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যায়। দুপুরে ফেরার পথে এক চায়ের দোকানের নিকটে দাঁড়ালে পুলিশের গুলি তার শরীরে লাগলে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। তিনি বলেন আমার ছেলেকে কেউ অপহরণ করে হত্যা করেনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল   থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ভৈরবে এনে তাকে দাফন করি। আমরা ভৈরবের নিরপরাধ মানুষকে হত্যা মামলায় জড়াতে চাইনা। বাদী মনিরকে আমরা চিনিনা, তাকে বলেনি মামলা করতে। নিহতের নানা বাচ্চু মিয়া যুগান্তরকে জানান কে এই মনির তাকেতো আমরা চিনিনা। আমার নাতির কোন শত্রু নেই, যে তাকে অপহরণ করে মেরে ফেলবে। শুনেছি মনির একজন টাউটার ও প্রতারক। ভাল মানুষকে মামলায় আসামী দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করা তার উদ্যেশ্য আছে। তানাহলে আমার নাতির মৃত্যুর ঘটনায় সে কেন মামলা করে বিনা দোষের মানুষকে হয়রানী করবে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করতে আসলে আমরা সত্য কথা বলব। ঘটনার জন্য তিনি উল্টো বাদীর বিচার দাবি করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভৈরবের কিশোর জোবায়েদ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়।। ঘটনায় ৯১ জনকে আসামী করে   হত্যা মামলা দায়েরের পর বাদী পলাতক

Update Time : ১২:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

৯ অক্টোবর, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট ভৈরবের  জোবায়েদ (১৬) ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়  পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ঘটনার সময় সে চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এদাবী তার পরিবারের। কিশোর জোবায়েদ ঢাকায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ৪ আগস্ট সকালে সে তার শনির আখড়ার  বাসা থেকে বের হয়ে দুপুরে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে মারা গেলে পুলিশ তার  লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় । পরে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখোঁজি করে মর্গ থেকে লাশ উদ্ধার করে পরদিন ভৈরবে নিজ গ্রামে তাকে দাফন করে। ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে নিহত জোবায়ের। দরিদ্র পরিবারটি ঢাকার শনিবার আখড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। 

নিহত ঘটনার ২৭ দিন পর  গত ১ সেপ্টেম্বর ভৈরবের রসুলপুর গ্রামের যুবলীগের সাবেক নেতা মনির হোসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ভৈরবের ৯১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এই মামলায় কয়েকজন প্রবাসী ও ভৈরবের তিন সাংবাদিককেও আসামী করায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। মামলার বাদী নিহতের পরিবারের কোন আত্মীয়-স্বজন বা নিহত জোবায়েদের কেউ নয়। মামলায় অভিযোগ করা হয় আসামীরা ঘটনার দিন ৪ আগস্ট জোবায়েদকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণ করে একটি মাইক্রোতে তুলে হত্যার পর যাত্রাবাড়ী এলাকার কাজলা নামক স্থানে লাশ ফেলে আসামীরা পালিয়ে যায়। উক্ত মামলায় জোবায়েদের বাবা-মায়ের নাম বা তার কোন ঠিকানা লেখা হয়নি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জোবায়েদের পরিচয় ছাড়া কিভাবে মামলাটি গ্রহন করা হলো, তাকে অপহরণ করতে ৯১ জন লোক জড়িত ছিল কিভাবে। আসামীদের মধ্য ৪ জন প্রবাসী ও তিনজন সাংবাদিকের নাম আছে। তারা বিদেশে থেকে কিভাবে অপহরণে জড়িত এবং ভৈরবের তিন সাংবাদিক কেন তাকে অপহরণ করবে। নিহতের মা – বাবা বলছে আমাদের ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, তাই আমরা মামলা করতে আগ্রহী নয়, তার ভাগ্যে ছিল এমন মৃত্যু। মামলার বাদী মনির হোসেনকে নিহতের পরিবারের কেউ চেনেননা বলে তাদের দাবি। এই মামলা নিয়ে এক ধ্রুমজালের সৃষ্টি হয়েছে। কেন মামলা করল মনির হোসেন। আসামী পক্ষের  অভিযোগ রয়েছে ভৈরবের একটি কুচুক্রি মহলের প্ররোচনায় আসামীদেরকে হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা আদায় করা বাদীর মূল পরিকল্পনা বা উদ্যেশ্য রয়েছে।  ভূক্তভূগীদের দাবি এই মিথ্যা মামলা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে আসামীদেরকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে। 

এবিষয়ে জানতে  মামলার বাদী মনির হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার  ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে মোবাইলে যুগান্তর প্রতিনিধি  ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি  কলবেগ করেননি। তবে এলাকাবাসীর অনেকেই বলেছে মিথ্যা মামলা করার পর বুঝতে পেরে জান বাঁচাতে এলাকা থেকে পালিয়েছে বাদী মনির।

ভৈরব চেম্বারের সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, আমি গত ১৯ জুলাই অষ্ট্রলিয়ায় এসেছি। শুনেছি আমাকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। ভৈরবের মিনা ইসলাম মোবাইলে জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবত আমেরিকা প্রবাসী। আমাকে মামলায় কেন, কি কারনে আসামী করা হলো। সাংবাদিক মাছুম ও অপু বলেন, আমরা সাংবাদিকতা করি। নিহত জোবায়েদকেসহ বাদী মনিরকে আমরা চিনিনা। ৪ আগস্ট আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিউজ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম। জোবায়েদ মৃত্যুর ঘটনার মামলায় আমরা তিনজন সাংবাদিককে কেন আসামী করা হলো তা সুষ্ঠু তদন্ত করে বাদীর বিচার করতে হবে।

নিহত জোবায়েদের বাবা নাজির হোসেন বলেন, আমরা গরীব পরিবার। দীর্ঘদিন যাবত ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার ছেলে ঢাকাতে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট জোবায়েদ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যায়। দুপুরে ফেরার পথে এক চায়ের দোকানের নিকটে দাঁড়ালে পুলিশের গুলি তার শরীরে লাগলে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। তিনি বলেন আমার ছেলেকে কেউ অপহরণ করে হত্যা করেনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল   থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ভৈরবে এনে তাকে দাফন করি। আমরা ভৈরবের নিরপরাধ মানুষকে হত্যা মামলায় জড়াতে চাইনা। বাদী মনিরকে আমরা চিনিনা, তাকে বলেনি মামলা করতে। নিহতের নানা বাচ্চু মিয়া যুগান্তরকে জানান কে এই মনির তাকেতো আমরা চিনিনা। আমার নাতির কোন শত্রু নেই, যে তাকে অপহরণ করে মেরে ফেলবে। শুনেছি মনির একজন টাউটার ও প্রতারক। ভাল মানুষকে মামলায় আসামী দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করা তার উদ্যেশ্য আছে। তানাহলে আমার নাতির মৃত্যুর ঘটনায় সে কেন মামলা করে বিনা দোষের মানুষকে হয়রানী করবে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করতে আসলে আমরা সত্য কথা বলব। ঘটনার জন্য তিনি উল্টো বাদীর বিচার দাবি করেন।