ভৈরবের রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুব হত্যার অপরাধে তার স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে কিশোরগন্জের আদালত।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:২০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩২৬ Time View

১৯ সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুবুর রহমান (৩৮) হত্যার অপরাধে তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার (২৮) ও প্রেমিক আসিফ (১৯) কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় কিশোরগন্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক শারমিন হাসনাত পারভিন বিচার শেষে সাক্ষীদের  সাক্ষ্যপ্রমানে প্রমানিত হওয়ায় এই দুইজনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। আদালত তার রায়ে বলেছেন মাহবুবকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী এবং তারই প্রেমিক হত্যা করেছে যা  স্বাক্ষ্যপ্রমানে প্রমানিত হয়েছে। আদালত রায়ে বলেন,  নিহত মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল কিন্ত সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জগন্যতম হত্যাটির পরিকল্পনাকারী ছিল তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। একারনে তারা দুজনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবি ছিল এপিপি সিনিয়র  এড, রাখাল চন্দ্র দাস ও আসামী পক্ষে আইনজীবি ছিল সিনিয়র এড, বাবু অশোক ঘোষ। মামলায় দুজনের মৃত্যুদন্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইজীবি এপিপি এড, রাখাল চন্দ্র দাস ও মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে মাহবুবুর রহমানকে খুন করা করা হয়। ভৈরব শহরের চন্ডিবের এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মাহবুব। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের এস এস ফিডার ( লোকোশেড)  পদে ঢাকার  তেজগাঁও এলাকায় চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় তার পরিবার ভৈরবের নিজ বাড়ীতে বসবাস করত। মাহবুব প্রতি সপ্তাহে ভৈরবে এসে দুইদিন থেকে রোববার ঢাকায় চলে যেতেন।

ঘটনার দিন গভীর  রাতে সে খুন হলে তার স্ত্রী রোকসানা ভোরে চিৎকার করতে থাকেন স্বামী মাহবুবকে ডাকাতরা খুন করে পালিয়ে গেছে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যগন ছুটে এসে দেখেন মাহবুব বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার বুকে ছুরির আঘাত রয়েছে। এসময় স্ত্রীর হাতে ছুরির আঘাত দেখা যায়। তখন স্ত্রী বলেছে ডাকাতরা তার স্বামীকে হত্যা করে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এরই মধ্য স্ত্রী রোকসানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল। থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  মোঃ শাহিন ঘটনাস্থলে এসে ডাকাতির ঘটনা সন্দেহ পোষন করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী  রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করে তার বাসার কাছে প্রতিবেশী কলেজ ছাত্র আসিফ (১৯) এর সাথে তার প্রেম ছিল। মাহবুব ঢাকায় থাকলে সে সবসময় প্রেমিকের সাথে রাতে মেলামেশা শারীরিক সম্পর্কে জড়িত ছিল। পরে একদিন মাহবুব ভৈরবের বাসায় আসলে  তারা দুজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে পায়েসের সাথে ঘূমের বড়ি মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ানোর পর তিনি ঘুমিয়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর গভীর রাতে প্রেমিক আসিফকে ঘরে প্রবেশ করান স্ত্রী। এরাতেই ঘুমন্ত অবস্থায় আসিফ তার  বুকে  ছুরিকাঘাত করে মাহবুবকে খুন করে। এরপর কিশোরগন্জ আদালতে তারা দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।

দীর্ঘ ৫ বছর বিচার শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগন্জ আদালত দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।

এবিষয়ে মামলার বাদী ও নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আদালতে   ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমার ছোট ভাইয়ের তিনটি শিশু সন্তান ছিল। তার স্ত্রী মাহবুবের অনুপস্থিতে পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রেমিক আসিফকে দিয়ে তাকে খুন করে ডাকাতি বলে প্রচার করেছিল। পুলিশ হত্যার রহস্যটি উদঘাটন করেছে। এখন তিন সন্তানকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকবে। সন্তানরা বাবা – মা দুজনকে হারাল। বিচারের রায়ে আমি খুশী হলাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১০ম গ্রেডের দাবিতে ভৈরবে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ভৈরবের রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুব হত্যার অপরাধে তার স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে কিশোরগন্জের আদালত।।

Update Time : ০৮:২০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

১৯ সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুবুর রহমান (৩৮) হত্যার অপরাধে তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার (২৮) ও প্রেমিক আসিফ (১৯) কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টায় কিশোরগন্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক শারমিন হাসনাত পারভিন বিচার শেষে সাক্ষীদের  সাক্ষ্যপ্রমানে প্রমানিত হওয়ায় এই দুইজনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। আদালত তার রায়ে বলেছেন মাহবুবকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী এবং তারই প্রেমিক হত্যা করেছে যা  স্বাক্ষ্যপ্রমানে প্রমানিত হয়েছে। আদালত রায়ে বলেন,  নিহত মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল কিন্ত সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জগন্যতম হত্যাটির পরিকল্পনাকারী ছিল তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। একারনে তারা দুজনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবি ছিল এপিপি সিনিয়র  এড, রাখাল চন্দ্র দাস ও আসামী পক্ষে আইনজীবি ছিল সিনিয়র এড, বাবু অশোক ঘোষ। মামলায় দুজনের মৃত্যুদন্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন আইজীবি এপিপি এড, রাখাল চন্দ্র দাস ও মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে মাহবুবুর রহমানকে খুন করা করা হয়। ভৈরব শহরের চন্ডিবের এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মাহবুব। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের এস এস ফিডার ( লোকোশেড)  পদে ঢাকার  তেজগাঁও এলাকায় চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় তার পরিবার ভৈরবের নিজ বাড়ীতে বসবাস করত। মাহবুব প্রতি সপ্তাহে ভৈরবে এসে দুইদিন থেকে রোববার ঢাকায় চলে যেতেন।

ঘটনার দিন গভীর  রাতে সে খুন হলে তার স্ত্রী রোকসানা ভোরে চিৎকার করতে থাকেন স্বামী মাহবুবকে ডাকাতরা খুন করে পালিয়ে গেছে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যগন ছুটে এসে দেখেন মাহবুব বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার বুকে ছুরির আঘাত রয়েছে। এসময় স্ত্রীর হাতে ছুরির আঘাত দেখা যায়। তখন স্ত্রী বলেছে ডাকাতরা তার স্বামীকে হত্যা করে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এরই মধ্য স্ত্রী রোকসানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল। থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)  মোঃ শাহিন ঘটনাস্থলে এসে ডাকাতির ঘটনা সন্দেহ পোষন করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী  রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করে তার বাসার কাছে প্রতিবেশী কলেজ ছাত্র আসিফ (১৯) এর সাথে তার প্রেম ছিল। মাহবুব ঢাকায় থাকলে সে সবসময় প্রেমিকের সাথে রাতে মেলামেশা শারীরিক সম্পর্কে জড়িত ছিল। পরে একদিন মাহবুব ভৈরবের বাসায় আসলে  তারা দুজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে পায়েসের সাথে ঘূমের বড়ি মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ানোর পর তিনি ঘুমিয়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর গভীর রাতে প্রেমিক আসিফকে ঘরে প্রবেশ করান স্ত্রী। এরাতেই ঘুমন্ত অবস্থায় আসিফ তার  বুকে  ছুরিকাঘাত করে মাহবুবকে খুন করে। এরপর কিশোরগন্জ আদালতে তারা দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।

দীর্ঘ ৫ বছর বিচার শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগন্জ আদালত দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।

এবিষয়ে মামলার বাদী ও নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আদালতে   ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমার ছোট ভাইয়ের তিনটি শিশু সন্তান ছিল। তার স্ত্রী মাহবুবের অনুপস্থিতে পরকীয়ায় জড়িয়ে প্রেমিক আসিফকে দিয়ে তাকে খুন করে ডাকাতি বলে প্রচার করেছিল। পুলিশ হত্যার রহস্যটি উদঘাটন করেছে। এখন তিন সন্তানকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকবে। সন্তানরা বাবা – মা দুজনকে হারাল। বিচারের রায়ে আমি খুশী হলাম।