১৩ সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবে মৌটুমি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইকবাল (২৯) নামের একজন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের সরকার বংশের ধন মিয়ার ছেলে নিহত ইকবাল। আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর গ্রামের কর্তাবাড়ী বংশ ও সরকার বাড়ীর বংশের মধ্য পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রথমে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের শত শত লোকজন দেশীয় অস্ত্র লাঠি, বল্লম, টেটাসহ ইটপাটকেল নিয়ে মাঠে নামে। দুই পক্ষের মধ্য কর্তা বাড়ীর নেতৃত্ব দেয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক এবং সরকার বাড়ীর নেতৃত্ব দেয় বর্তমান সাদেকপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সাফায়েত উল্লাহ।
আজকের সংঘর্ষে সরকার বাড়ী যারা আহত হয়েছে তারা হলো লাদেন (২০), সাফিউদ্দিন (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াসিন (২৫), রাকিব (৩২), শাহ আলম (২৫), তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৪)। এসব আহতরা ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্য তিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অন্যান্য আহতদের পাশ্ববর্তী কুলিয়ারচর ও বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে নিহতের প্রতিপক্ষ কর্তা বংশের আহতরা ভৈরব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি বলে জানা গেছে।
এখানে উল্লেখ্য দুটি বংশের মধ্য ৫৭ বছর যাবত শত্রুতায় এপর্যন্ত ১০/১২ জন খুন হয়েছে এবং আহত হয়েছে অসংখ্য। এসব ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্য কমপক্ষে অর্ধশত মামলা এখনও চলমান আছে। গত ঈদের পরের দিন কর্তা বাড়ীর বংশের নাদিম সরকার (৫৫) সরকার বাড়ীর লোকজনের হাতে নিহত হলে থানায় মামলা হয়। পরে মামলায় ৮৩ জনকে আসামী করা হয়। তারপর ৬৯ জন আসামী কয়েকদিন আগে কিশোরগন্জ আদালতে হাজিরা দিলে আদালতের বিচারক সবাইকে কারাগারে পাঠায়। গত কয়েকদিন আগে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আজ পুনরায় সংঘর্ষে নেমে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত একটানা সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে বিকেলে সরকার বাড়ীর ইকবাল প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আজকের সংঘর্ষ হয়। তবে সরকার বাড়ীর লোকজনের দাবি আমরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার পর বাড়ী আসলে তারা বাধা দিচ্ছিল। এনিয়ে গত কদিন যাবত দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্য আজ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
মৌটুপি গ্রামের সরকার বাড়ীর আনোয়ারুল হক ও আঙ্গুর মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আজ কর্তা বাড়ীর নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হকের নির্দেশে এই সংঘর্ষ বাঁধলে আমাদের বংশের ইকবাল মারা যায় ও আহত হয় ২০/৩০ জন। তারা কদিন যাবত চেষ্টা করছে হামলা চালাতে। আমরা প্রতিহত করতে গিয়েই ঝগড়ার সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
এবিষয়ে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সরকার বাড়ীর বংশের সাফায়েত উল্লাহ বলেন, গত ঈদের পরদিনের ঝগড়া সংঘর্ষে কর্তা বাড়ীর নাদিম নিহত হলে তাদের বংশীয় লোকজন আমার বংশের শতাধিক বাড়ীঘর লুটপাট ভাংচুর করে জিনিষপত্র নিয়ে যায়। আমাদের লোকজন খুনের ঘটনায় পলাতক ছিল দেড়মাস। এখন তারা জামিনে আসলেও আমাদেরকে বাড়ীঘরে উঠতে বাধা দিলেই সংঘর্ষ হয়। আজ আমাদের প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে আমার বংশের ইকবাল খুন হয়েছে।
কর্তা বাড়ী নেতা সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, আমি বাড়ীতে থাকিনা। গত ঈদের পরদিন আমার বংশের নাদিমকে সরকার বাড়ীর বংশের লোকজন হত্যা করে। দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে তাদের সাথে। এখন তারা নাদিম হত্যার মামলায় জামিন পেয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালাতে কদিন যাবত চেষ্টা করছে। আজও তারা হামলা চালালে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। শুনেছি সরকার বাড়ীর একজন মারা গেছে। তবে আজকের ঘটনায় আমার বংশের ২০/৩০ জন আহত হয়। ঘটনার সময় কিভাবে, কার আঘাতে সে মারা গেছে আমি জানিনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার ফারিয়া নাজমুল প্রভা জানান, আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ইকবাল নামের এক যুবককে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পায়। তার শরীরে আঘাতের চিন্হ আছে। এছাড়া এপর্যন্ত আমরা ৮ জন আহত রোগীর চিকিৎসা করেছি। তবে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে তাদেরকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। অন্যদের চিকিৎসা চলছে বলে তিনি জানান।