১০ সেপ্টেম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:
ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি’র উর্ধতন কর্মকর্তাগন। গত রোববার গভীররাত তিনটায় হঠাৎ করে বাগানবাড়ীর নদীর পাড় এলাকার একটি রাস্তাসহ ১৬০ মিটার এলাকা ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে বিএডিসি’র দুটি সার গুদাম ও যমুনা অয়েল কোম্পানীর তেল ডিপো ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ে। দুটি সার গুদামে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯০৭৩ মেঃ টন নন- ইউরিয়া সার ও তেল ডিপোতে ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ৪২ কোটি লিটার তেল বর্তমানে মজুত আছে। ভাঙন বৃদ্ধি পেলে দুটি প্রতিষ্ঠানের গুদামঘর ও অফিসসহ ৭০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পানি উন্নয়র বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ( চীফ ইন্জিনিয়ার) মোঃ আসাদুজ্জামান, বিএডিসি’র প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আশরাফুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রেদোয়ান আহমেদ রাফি, ভৈরব সেনা ক্যাম্পের মেজর সানজিদুল ইসলাম, বিএডিসি ভৈরব সার গুদামের সহকারী পরিচালক ( সার) শিপন সাহা, যমুনা ডিপোর সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ মতিউর রহমান। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগন্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শরীফুল আলম মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করেন। এর আগে গত সোমবার দুপুরে টাংগাইল ঘাটাল ক্যান্টেনমেন্টের ব্রেগিডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে দুইদিনের মধ্য ভাঙন প্রতিরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার যমুনা অয়েল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক এলাহি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।
ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও কাজ চলছে ধীরগতিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ বলছে ভাঙন এলাকা প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলতে প্রস্ততি গ্রহন ও ব্যবস্থা নিতে কিছু সময় লাগে। তবে যমুনা অয়েল কোম্পানী নিজ উদ্যেগে কয়েকশ বস্তা জিও ব্যাগ ভাঙন এলাকায় ফেললেও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, মেঘনা নদীর ঘূর্নিপাক ও স্রোতধারার গতিবেগে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে ১৬০ মিটার এলাকা। তবে ভাঙনের গভীরতা ৫/৭ মিটার। ভাঙনরোধে আপাতত ২৫ হাজার জিও ব্যাগ লাগবে। আজ মঙ্গলবারের মধ্য দুই হাজার জিও ব্যাগ ভাঙন এলাকায় ফেলা শেষ হবে। আগামী দুই তিনের মধ্য ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শেষ করা যাবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন এখনকার কাজটি সাময়িক। ভবিষ্যতে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে এখানে বাঁধ দিতে হবে। এতে আনুমানিক ব্যয় হবে শতকোটি টাকা। এবিষয়ে আমি ঢাকায় গিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব বলে তিনি জানান।
বিএডিসি’র প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আশরাফুজ্জামান জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আজ আমি ভৈরবে এসে ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। ভাঙনে আমাদের বিএডিসির দুটি সার গুদাম হুমকিতে পড়েছে। গুদাম দুটি ভাঙনে ক্ষতি হলে সারসহ শতকোটি টাকা ক্ষতি হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিয়েছে দেখলাম। প্রয়োজন হলে গুদামের মজুতকৃত সার কিছু পরিমান আমরা সরিয়ে নিব। ভাঙনে গুদামের সামনের রাস্তাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সার আমদানী রপ্তানীতে সমস্যা হবে। তাই পর্শ্বিমদিকে বিকল্প রাস্তা করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শরীফুল আলম বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নির্দেশে ঘটনাস্থল আজ পরিদর্শন করেছি। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা যা করার প্রশাসনকে আমরা করব। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকটি পরিবারকে আমরা সহযোগীতা করেছি, আরও করব। বিষয়টি নিয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।
ভৈরব সেনা ক্যাম্পের মেজর সানজিদুল ইসলাম বলেন, আমার ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা সর্বক্ষণ ভাঙন এলাকায় প্রহরায় আছে। আমরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগীতা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রেদোয়ান আহমেদ রাফি জানান, কিশোরগন্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি সর্বক্ষণ কাজের খোঁজখবর রাখছি। ভাঙনরোধে যা করার তা আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করে যাব।