ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গনে ১৩০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।। হুমকির মুখে সার গুদাম, যমুনা তেল ডিপো, রেলসেতু।। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৫৭ Time View

৮ সেপ্টম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গনে ১৩০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙ্গনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে বিএডিসি’র দুটি সার গুদাম ও অফিস, যমুনা অয়েল কোম্পানীর তেলের ডিপো ও অফিস এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের  সেতু।

 আজ রোববার ভোররাত তিনটার দিকে নদীর পাড়ের  রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন সার গুদাম ও যমুনা তেলের ডিপো এলাকায় ভাঙ্গনের ঘটনাটি ঘটে। এসময় বিএডিসির সার গুদামের সামনে দরিদ্রদের বসতবাড়ী ১৫/২০ টি ঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানীর একটি অফিসের অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) রেদোয়ান আহমেদ রাফি, কিশোরগন্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল গনি, বিএডিসি (সার)  কিশোরগন্জের যুগ্ম – পরিচালক ইকবাল মোহাম্মদ মোত্তাকিন , উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম, যমুনা অয়েল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক এলাহী, ভৈরব র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মোঃ শহীদুল্লাহ, ভৈরব পুলিশ সার্কেলের এএসপি মোঃ দেলুয়ার হোসেন খাঁন,  থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

নদীর পাড়ের বাসিন্দা পিয়ারা বেগম বলেন, রোববার গভীর রাত তিনটার দিকে লোকজনের হৈচৈ চিৎকার শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি আমার ঘরের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। এসময় কোনরকম জীবন নিয়ে পরিবারসহ ঘর থেকে বের হয়ে প্রাণ বাঁচায়। ঘরের কোন জিনিষপত্র বের করতে পারেনি। একই কথা বললেন আরেক বাসিন্দা নবী হোসেন। 

এবিষয়ে কিশোরগন্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল গনি জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে নদী এলাকা  পরিদর্শন ও পরীক্ষা করে জেনেছি ১৩০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন এলাকায় নদী গভীরতা ৫/৭ মিটার। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে  ভাঙ্গনরোধে  আমরা আজ রোববার বিকেল থেকে জিও ( বালির বস্তা) ফেলা শুরু করব। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক   ভাঙ্গনরোধে স্থায়ীভাবে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করানো হবে বলে জানান তিনি।

ভৈরব বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক ( সার)  শিপন সাহা বলেন আজ ভোরে খবর পেয়ে আমি অফিসে এসে ঘটনা দেখি। পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করি। তিনি বলেন আমাদের দুটি সার গুদামে ৯ হাজার ৭৩ মেঃ টন  নন – ইউরিয়া সার মজুত আছে, যার সরকারী মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ভাঙ্গন এলাকাটি গুদামের ৩০০ গজের মধ্য এসে গেছে। গুদামটি নদী ভাঙ্গনে পড়লে সরকারের ১৮ কোটি টাকা ক্ষতি হবে এবং আগামী বোরো মৌসুমে ভৈরবসহ হাওরের ৩ টি উপজেলায় কৃষকরা চাহিদার সার সময়মত পাবেনা।

যমুনা অয়েল কোম্পানীর ভৈরব অফিসের সহকারী  ব্যবস্থাপক মোঃ মতিউর রহমান জানান, আমাদের ডিপোতে ১৮ লাখ লিটার জ্বালানী তেল মজুত আছে যার মূল্য ১৮ কোটি টাকা। নদী ভাঙ্গনে আমাদের একটি অফিস অর্ধেক ভেঙ্গে গেলেও ডিপোর ক্ষতি হয়নি। তবে ভাঙ্গন এলাকা বৃদ্ধি পেলে মারাত্মক ক্ষতি হবে। এনিয়ে আমরা আতংকে আছি। তিনি বলেন আমরা নিজদের উদ্যেগে বোল্ডার বালির বস্তা নদীতে ফেলতেছি। 

ভৈরব রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হাসান জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করেছি। তিনি বলেন মেঘনা নদীর ওপর ২৯ নং রেলওয়ে সেতু থেকে ভাঙ্গন এলাকা সম্ভবত ১০০০ হাজার গজ দূরে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত থাকলেও পরবর্তী করণীয় কি করব আলোচনা করছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করব। 

কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সর্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি। এবিষয়টি বিএডিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানী, বালাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমি সকালেই ফোন করে ঘটনা  অবহিত করেছি। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে অনুরোধ করেছি বলে তিনি জানান। 

কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সর্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি। এবিষয়টি বিএডিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানী, বালাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমি সকালেই ফোন করে ঘটনা  অবহিত করেছি। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে অনুরোধ করেছি বলে তিনি জানান। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে  এক সঙ্গে তিন জমজ ছেলে সন্তান জন্ম নিল। খুশি দম্পতি তবে চিন্তিত তাদের ভরণপোষণ নিয়ে। 

ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গনে ১৩০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।। হুমকির মুখে সার গুদাম, যমুনা তেল ডিপো, রেলসেতু।। 

Update Time : ১১:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৮ সেপ্টম্বর, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙ্গনে ১৩০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙ্গনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে বিএডিসি’র দুটি সার গুদাম ও অফিস, যমুনা অয়েল কোম্পানীর তেলের ডিপো ও অফিস এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের  সেতু।

 আজ রোববার ভোররাত তিনটার দিকে নদীর পাড়ের  রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন সার গুদাম ও যমুনা তেলের ডিপো এলাকায় ভাঙ্গনের ঘটনাটি ঘটে। এসময় বিএডিসির সার গুদামের সামনে দরিদ্রদের বসতবাড়ী ১৫/২০ টি ঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানীর একটি অফিসের অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) রেদোয়ান আহমেদ রাফি, কিশোরগন্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল গনি, বিএডিসি (সার)  কিশোরগন্জের যুগ্ম – পরিচালক ইকবাল মোহাম্মদ মোত্তাকিন , উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম, যমুনা অয়েল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক এলাহী, ভৈরব র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মোঃ শহীদুল্লাহ, ভৈরব পুলিশ সার্কেলের এএসপি মোঃ দেলুয়ার হোসেন খাঁন,  থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

নদীর পাড়ের বাসিন্দা পিয়ারা বেগম বলেন, রোববার গভীর রাত তিনটার দিকে লোকজনের হৈচৈ চিৎকার শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি আমার ঘরের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। এসময় কোনরকম জীবন নিয়ে পরিবারসহ ঘর থেকে বের হয়ে প্রাণ বাঁচায়। ঘরের কোন জিনিষপত্র বের করতে পারেনি। একই কথা বললেন আরেক বাসিন্দা নবী হোসেন। 

এবিষয়ে কিশোরগন্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল গনি জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে নদী এলাকা  পরিদর্শন ও পরীক্ষা করে জেনেছি ১৩০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন এলাকায় নদী গভীরতা ৫/৭ মিটার। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে  ভাঙ্গনরোধে  আমরা আজ রোববার বিকেল থেকে জিও ( বালির বস্তা) ফেলা শুরু করব। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক   ভাঙ্গনরোধে স্থায়ীভাবে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করানো হবে বলে জানান তিনি।

ভৈরব বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক ( সার)  শিপন সাহা বলেন আজ ভোরে খবর পেয়ে আমি অফিসে এসে ঘটনা দেখি। পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করি। তিনি বলেন আমাদের দুটি সার গুদামে ৯ হাজার ৭৩ মেঃ টন  নন – ইউরিয়া সার মজুত আছে, যার সরকারী মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ভাঙ্গন এলাকাটি গুদামের ৩০০ গজের মধ্য এসে গেছে। গুদামটি নদী ভাঙ্গনে পড়লে সরকারের ১৮ কোটি টাকা ক্ষতি হবে এবং আগামী বোরো মৌসুমে ভৈরবসহ হাওরের ৩ টি উপজেলায় কৃষকরা চাহিদার সার সময়মত পাবেনা।

যমুনা অয়েল কোম্পানীর ভৈরব অফিসের সহকারী  ব্যবস্থাপক মোঃ মতিউর রহমান জানান, আমাদের ডিপোতে ১৮ লাখ লিটার জ্বালানী তেল মজুত আছে যার মূল্য ১৮ কোটি টাকা। নদী ভাঙ্গনে আমাদের একটি অফিস অর্ধেক ভেঙ্গে গেলেও ডিপোর ক্ষতি হয়নি। তবে ভাঙ্গন এলাকা বৃদ্ধি পেলে মারাত্মক ক্ষতি হবে। এনিয়ে আমরা আতংকে আছি। তিনি বলেন আমরা নিজদের উদ্যেগে বোল্ডার বালির বস্তা নদীতে ফেলতেছি। 

ভৈরব রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হাসান জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করেছি। তিনি বলেন মেঘনা নদীর ওপর ২৯ নং রেলওয়ে সেতু থেকে ভাঙ্গন এলাকা সম্ভবত ১০০০ হাজার গজ দূরে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত থাকলেও পরবর্তী করণীয় কি করব আলোচনা করছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করব। 

কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সর্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি। এবিষয়টি বিএডিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানী, বালাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমি সকালেই ফোন করে ঘটনা  অবহিত করেছি। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে অনুরোধ করেছি বলে তিনি জানান। 

কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সর্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি। এবিষয়টি বিএডিসি, যমুনা অয়েল কোম্পানী, বালাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমি সকালেই ফোন করে ঘটনা  অবহিত করেছি। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ গ্রহন করতে অনুরোধ করেছি বলে তিনি জানান।