ভৈরবের জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে ছাত্ররা  প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করছে।। ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ লুটপাট।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • ২৭২ Time View

২৮ আগস্ট, নিজস্ব  প্রতিনিধি।। 

ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকায় অবস্থিত জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের  দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কয়েকদিন যাবত স্কুলের ছাত্ররা মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ করে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ডুবতে বসেছে। দুর্নীতিতে জড়িত ছিল ১২ বছর যাবত দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি লোকমান হোসেন। স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের দাবি গত ১২ বছরে প্রধান শিক্ষক কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শাকিলা বিনতে মতিনের নিকট এক লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আজ বুধবারও শিক্ষার্থীরা মিছিল মিটিং করেছে। 

অভিযোগে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান গত ১২ বছর যাবত স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে জসীম উদ্দিন নামের প্রধান শিক্ষককে তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে স্কুল থেকে বিতারিত করেছেন।  স্কুলের বিশেষ ক্লাশের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিয়ে লাখ টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির জরিমানার টাকা আদায় করে টাকা আত্মসাৎ, এসএসসি টেস্ট  পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হলে ছাত্রদের কাছ থেকে ৫/১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, তামান্না বেগম নামের স্কুলের এক শিক্ষিকা বিদেশে চলে গেলে তার বেতন অবৈধভাবে  সাত মাস ধরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ , স্কুলের ক্যান্টিন দেখিয়ে অযথা ব্যয় দেখানো, তার বাসায় কাজের মেয়ের টাকা স্কুল থেকে বেতন উত্তোলন, পত্রিকায় স্কুলের নিউজ প্রকাশের নামে মিথ্যা টাকা পরিশোধ, নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠানকে বিনাকারনে টাকা দেয়া, ভূয়া খরচ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার ভাউচার দেখিয়ে টাকা উত্তোলনসহ ইত্যাদি অনিয়ম দুর্নীতি করে গত ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এই প্রধান শিক্ষক। এনায়েতউল্লাহ নামের একজন শিক্ষককে ৬ লাখ টাকা ঘূষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ আছে।  এসব অনিয়ম দুর্নীতি প্রশয় আশ্রয় দিয়েছে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি লোকমান হোসেন। এই লোকমান হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কতিপয় কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে একাধিকবার সভাপতি হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের আত্মসাৎ করার লাখ লাখ টাকা সভাপতি লোকমান ভাগ পেয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য প্রধান শিক্ষক স্কুলের বিএনসিসি’র লেঃ দাবি করে সামরিক পোশাক পরে অনেককে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের বাড়ীতে তার নিকটআত্মীয়কে বিয়ে করে শিক্ষার্থী অভিভাবকদেরকে ভয় দেখাতেন বলে এলাকাবাসী তার অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পেতনা, এমন অভিযোগ রয়েছে একাধিক। শেখ হাসিনার পতনের পর গত কয়েকদিন যাবত এসব নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তার অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানববন্ধন, সমাবেশ, মিছিল করে যাচ্ছে।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সভায় প্রতিষ্ঠানের খরচের হিসাব দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কখনই হিসাব দিতেননা। তারা বলত হিসাব সভাপতি ছাড়া অন্য কেউ দেখার অধিকার নেই। গত ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে আত্মসাৎ করেছেন তার দাবি। 

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, স্কুল চালাতে গিয়ে আমি সাবেক সভাপতি লোকমান হোসেনের পরামর্শ অনুযায়ী সব কাজ করেছি। তবে কিছু কিছু কাজ সভাপতির চাপে করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন এবিষয়ে জানান, শিক্ষার্থীদের একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করার পর প্রমানিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ভৈরবে যুবলীগ নেতা কর্তৃক  প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অফিসে কক্ষে মারধোর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

ভৈরবের জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে ছাত্ররা  প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করছে।। ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ লুটপাট।।

Update Time : ০৩:৪৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

২৮ আগস্ট, নিজস্ব  প্রতিনিধি।। 

ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকায় অবস্থিত জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের  দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কয়েকদিন যাবত স্কুলের ছাত্ররা মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ করে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ডুবতে বসেছে। দুর্নীতিতে জড়িত ছিল ১২ বছর যাবত দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি লোকমান হোসেন। স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের দাবি গত ১২ বছরে প্রধান শিক্ষক কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শাকিলা বিনতে মতিনের নিকট এক লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আজ বুধবারও শিক্ষার্থীরা মিছিল মিটিং করেছে। 

অভিযোগে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান গত ১২ বছর যাবত স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে জসীম উদ্দিন নামের প্রধান শিক্ষককে তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে স্কুল থেকে বিতারিত করেছেন।  স্কুলের বিশেষ ক্লাশের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন নিয়ে লাখ টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির জরিমানার টাকা আদায় করে টাকা আত্মসাৎ, এসএসসি টেস্ট  পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হলে ছাত্রদের কাছ থেকে ৫/১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, তামান্না বেগম নামের স্কুলের এক শিক্ষিকা বিদেশে চলে গেলে তার বেতন অবৈধভাবে  সাত মাস ধরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ , স্কুলের ক্যান্টিন দেখিয়ে অযথা ব্যয় দেখানো, তার বাসায় কাজের মেয়ের টাকা স্কুল থেকে বেতন উত্তোলন, পত্রিকায় স্কুলের নিউজ প্রকাশের নামে মিথ্যা টাকা পরিশোধ, নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠানকে বিনাকারনে টাকা দেয়া, ভূয়া খরচ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার ভাউচার দেখিয়ে টাকা উত্তোলনসহ ইত্যাদি অনিয়ম দুর্নীতি করে গত ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এই প্রধান শিক্ষক। এনায়েতউল্লাহ নামের একজন শিক্ষককে ৬ লাখ টাকা ঘূষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ আছে।  এসব অনিয়ম দুর্নীতি প্রশয় আশ্রয় দিয়েছে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি লোকমান হোসেন। এই লোকমান হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কতিপয় কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে একাধিকবার সভাপতি হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের আত্মসাৎ করার লাখ লাখ টাকা সভাপতি লোকমান ভাগ পেয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য প্রধান শিক্ষক স্কুলের বিএনসিসি’র লেঃ দাবি করে সামরিক পোশাক পরে অনেককে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের বাড়ীতে তার নিকটআত্মীয়কে বিয়ে করে শিক্ষার্থী অভিভাবকদেরকে ভয় দেখাতেন বলে এলাকাবাসী তার অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পেতনা, এমন অভিযোগ রয়েছে একাধিক। শেখ হাসিনার পতনের পর গত কয়েকদিন যাবত এসব নিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তার অনিয়ম দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানববন্ধন, সমাবেশ, মিছিল করে যাচ্ছে।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সভায় প্রতিষ্ঠানের খরচের হিসাব দেখতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কখনই হিসাব দিতেননা। তারা বলত হিসাব সভাপতি ছাড়া অন্য কেউ দেখার অধিকার নেই। গত ১২ বছরে কয়েক কোটি টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে আত্মসাৎ করেছেন তার দাবি। 

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, স্কুল চালাতে গিয়ে আমি সাবেক সভাপতি লোকমান হোসেনের পরামর্শ অনুযায়ী সব কাজ করেছি। তবে কিছু কিছু কাজ সভাপতির চাপে করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন এবিষয়ে জানান, শিক্ষার্থীদের একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করার পর প্রমানিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।