ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে কর্তা আর সরকার বাড়ীর আধিপত্য বিস্তার ও শত্রুতায় পিতার মত খুন হলো নাদিম।। দুই গোস্টির সংঘর্ষে ৫৪ বছরে একাধিক খুন ও মামলা।।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:২৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
  • ১০৭ Time View

২০ জুন, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে কর্তা আর সরকার বাড়ীর আধিপত্য বিস্তার ও শত্রুতায় পিতা কফিল উদ্দিনের মত খুন হয়েছে নাদিম মিয়া  (৫৫)। বাপছেলে দুজনই কর্তা বাড়ীর বংশধর।  ঈদের আগের দিন কর্তা বাড়ী ও সরকার বাড়ীর লোকজনের মধ্য সংঘর্ষ বাঁধলে নাদিম গুরুতর আহত হয়। গতকাল বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাড়ীর আঙ্গীনায় তাকে দাফন করা হয়। বহু  বছর আগে সরকার বাড়ীর লোকজন নাদিমের পিতা কফিল উদ্দিনকে খুন করে। এর ৬০ বছর আগে  কর্তা বাড়ীর রইছ উদ্দিন সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে মারা যায়।

এদিকে সরকার বাড়ীর নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিকের দুই ছেলে খুন হয়েছে। ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল তার ছোট ছেলে ওবাইদুল্লাহ (৩০) কর্তা বাড়ীর সাথে সংঘর্ষের সময় খুন হয়। ১৯৮৫ সালে আরেক ছেলে হেদায়েত উল্লাহ (১৪) একই ঘটনায় কর্তা বাড়ীর লোকজনের হাতে খুন হয় অনুসন্ধানে জানা গেছে ।

বংশীয় শত্রুতা ও গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পর থেকে ৫৪ বছর যাবত দুই বংশের ঝগড়া, শত্রুতা চলছে। বর্তমানে সরকার বাড়ীর নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সাদেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ। তবে তার বাবা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম  আবুবকর সিদ্দিক জীবিত থাকাকালে তিনি এই বংশের নেতৃত্ব দিতেন। তিনি তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার ছেলে সাফায়েত দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান। তারা বাপছেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আবুবকর জীবিত থাকতে দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আ,লীগের সভাপতি ছিলেন। তার ছেলে সাফায়েত নৌকা মার্কা পেয়ে দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছেন।

অপরদিকে বর্তমানে  কর্তা বাড়ীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ভৈরব উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ- সভাপতি ছিলেন। এর আগে কর্তা বাড়ীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কফিল উদ্দিন ও রইছ উদ্দিন। তারা মারা গেলে এখন তোফাজ্জল হক নেতা হয়েছেন এই বংশের। এছাড়া নিহত নাদিমের ভাই বাকি কর্তা এবংশের নেতা। 

বংশ পরায়ন শত্রুতায় ৫৪ বছরে মৌটুপি গ্রামে দুই বংশেরসহ মোট ১২ জন খুন হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। ঝগড়া সংঘর্ষে আহত হয়েছে শত শত, মামলা হয়েছে শতাধিক, পুলিশের হাতে  গ্রেফতার হয়েছে কয়েকশ। বর্তমানে দুই বংশের একাধিক ব্যক্তি খুনের মামলায় কর্তা বাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান  তোফাজ্জল হক ও সরকার বাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ আসামী হয়ে উভয় পক্ষ মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। যুগ যুগ ধরে মামলা চলছে আর আদালতে হাজিরা দিচ্ছে তারা। সূত্র মতে এখনও দুই পক্ষের বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে আছে প্রায় ৫০০ শত লোক। তারা সংঘর্ষ বাঁধলে উভয় পক্ষ একে অপরের বাড়ঘর লুটপাট, ভাংচুর করে নিয়ে যায়। নাদিম মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে সরকার বাড়ীর লোকজন মামলার ভয়ে পালিয়ে গেছে অনেকে। যে পক্ষ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সেই পক্ষ গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতারা একাধিকবার বসেও দুই পক্ষের লোকজনের বিরোধ মীমাংসা করতে পারছেনা।

এবিষয়ে সরকার বাড়ীর নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ছোটখাট ঘটনায় ঝগড়া হলে পর ঝগড়াটি সংঘর্ষে রুপ নেয়। কর্তা বাড়ীর লোকজন আমার দুই ভাইকে হত্যা করেছে। কাজেই তাদের সাথে কোন আপোষ আমরা করতে পারিনা। ঈদের আগের দিনের ঘটনায় নাদিমকে আমাদের লোকজন আহত করেনি। তাদের লোকজনের আঘাতে সে আহত হয়েছে। এখন তারা আবার আমাদের নামে খুনের মামলা করবে শুনতেছি।

কর্তা বাড়ীর নেতা সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, স্বাধীনতার আগে আমাদের বংশের রইছ উদ্দিনকে খুন করে সরকার বাড়ীর লোকজন। ১৯৭৩ সালে খুন করে আমার বাড়ীর কফিল উদ্দিনকে। এখন খুন করল তার ছেলে নাদিমকে। একের পর এক খুন করছে তারা। সরকার বাড়ীর আবুবকর সিদ্দিকের দুই ছেলেকে আমাদের বংশের লোকজন খুন করেনি। দুইজনই সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা গেছে। তাদের বংশের সাথে কিভাবে আপোষ হবে।

ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাংগীর আলম সেন্টু বলেন, মৌটুপি গ্রামের সব মানুষ জংলী, তারা কারো কথা শুনেনা। অনেক চেষ্টা করেছি দুই বংশের বিবাদ মীমাংসা করতে কিন্ত পারি নাই। তারা ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয়না।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, নাদিমের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। সে মারা গেছে ময়মনসিংহের হাসপাতালে। আমরা জানতাম নাদিম আহত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ভৈরব থানায় যোগদান করেছি মাত্র ৮ মাস আগে। যোগদান করেই জানতে পারি মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশ পরায়নভাবে শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদেরকে দমন করতে পারেনা। আইন শৃংখলার অবনতি ঘটালে পুলিশ কাউকে ছাড় দিবেনা বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১০ম গ্রেডের দাবিতে ভৈরবে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে কর্তা আর সরকার বাড়ীর আধিপত্য বিস্তার ও শত্রুতায় পিতার মত খুন হলো নাদিম।। দুই গোস্টির সংঘর্ষে ৫৪ বছরে একাধিক খুন ও মামলা।।

Update Time : ০৬:২৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

২০ জুন, নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভৈরবের মৌটুপি গ্রামে কর্তা আর সরকার বাড়ীর আধিপত্য বিস্তার ও শত্রুতায় পিতা কফিল উদ্দিনের মত খুন হয়েছে নাদিম মিয়া  (৫৫)। বাপছেলে দুজনই কর্তা বাড়ীর বংশধর।  ঈদের আগের দিন কর্তা বাড়ী ও সরকার বাড়ীর লোকজনের মধ্য সংঘর্ষ বাঁধলে নাদিম গুরুতর আহত হয়। গতকাল বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার নামাজে জানাজা শেষে নিজ বাড়ীর আঙ্গীনায় তাকে দাফন করা হয়। বহু  বছর আগে সরকার বাড়ীর লোকজন নাদিমের পিতা কফিল উদ্দিনকে খুন করে। এর ৬০ বছর আগে  কর্তা বাড়ীর রইছ উদ্দিন সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে মারা যায়।

এদিকে সরকার বাড়ীর নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিকের দুই ছেলে খুন হয়েছে। ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল তার ছোট ছেলে ওবাইদুল্লাহ (৩০) কর্তা বাড়ীর সাথে সংঘর্ষের সময় খুন হয়। ১৯৮৫ সালে আরেক ছেলে হেদায়েত উল্লাহ (১৪) একই ঘটনায় কর্তা বাড়ীর লোকজনের হাতে খুন হয় অনুসন্ধানে জানা গেছে ।

বংশীয় শত্রুতা ও গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পর থেকে ৫৪ বছর যাবত দুই বংশের ঝগড়া, শত্রুতা চলছে। বর্তমানে সরকার বাড়ীর নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সাদেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ। তবে তার বাবা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম  আবুবকর সিদ্দিক জীবিত থাকাকালে তিনি এই বংশের নেতৃত্ব দিতেন। তিনি তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তার ছেলে সাফায়েত দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান। তারা বাপছেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আবুবকর জীবিত থাকতে দীর্ঘদিন ইউনিয়ন আ,লীগের সভাপতি ছিলেন। তার ছেলে সাফায়েত নৌকা মার্কা পেয়ে দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছেন।

অপরদিকে বর্তমানে  কর্তা বাড়ীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ভৈরব উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ- সভাপতি ছিলেন। এর আগে কর্তা বাড়ীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কফিল উদ্দিন ও রইছ উদ্দিন। তারা মারা গেলে এখন তোফাজ্জল হক নেতা হয়েছেন এই বংশের। এছাড়া নিহত নাদিমের ভাই বাকি কর্তা এবংশের নেতা। 

বংশ পরায়ন শত্রুতায় ৫৪ বছরে মৌটুপি গ্রামে দুই বংশেরসহ মোট ১২ জন খুন হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। ঝগড়া সংঘর্ষে আহত হয়েছে শত শত, মামলা হয়েছে শতাধিক, পুলিশের হাতে  গ্রেফতার হয়েছে কয়েকশ। বর্তমানে দুই বংশের একাধিক ব্যক্তি খুনের মামলায় কর্তা বাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান  তোফাজ্জল হক ও সরকার বাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ আসামী হয়ে উভয় পক্ষ মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। যুগ যুগ ধরে মামলা চলছে আর আদালতে হাজিরা দিচ্ছে তারা। সূত্র মতে এখনও দুই পক্ষের বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে আছে প্রায় ৫০০ শত লোক। তারা সংঘর্ষ বাঁধলে উভয় পক্ষ একে অপরের বাড়ঘর লুটপাট, ভাংচুর করে নিয়ে যায়। নাদিম মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে সরকার বাড়ীর লোকজন মামলার ভয়ে পালিয়ে গেছে অনেকে। যে পক্ষ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সেই পক্ষ গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতারা একাধিকবার বসেও দুই পক্ষের লোকজনের বিরোধ মীমাংসা করতে পারছেনা।

এবিষয়ে সরকার বাড়ীর নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ছোটখাট ঘটনায় ঝগড়া হলে পর ঝগড়াটি সংঘর্ষে রুপ নেয়। কর্তা বাড়ীর লোকজন আমার দুই ভাইকে হত্যা করেছে। কাজেই তাদের সাথে কোন আপোষ আমরা করতে পারিনা। ঈদের আগের দিনের ঘটনায় নাদিমকে আমাদের লোকজন আহত করেনি। তাদের লোকজনের আঘাতে সে আহত হয়েছে। এখন তারা আবার আমাদের নামে খুনের মামলা করবে শুনতেছি।

কর্তা বাড়ীর নেতা সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, স্বাধীনতার আগে আমাদের বংশের রইছ উদ্দিনকে খুন করে সরকার বাড়ীর লোকজন। ১৯৭৩ সালে খুন করে আমার বাড়ীর কফিল উদ্দিনকে। এখন খুন করল তার ছেলে নাদিমকে। একের পর এক খুন করছে তারা। সরকার বাড়ীর আবুবকর সিদ্দিকের দুই ছেলেকে আমাদের বংশের লোকজন খুন করেনি। দুইজনই সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা গেছে। তাদের বংশের সাথে কিভাবে আপোষ হবে।

ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাংগীর আলম সেন্টু বলেন, মৌটুপি গ্রামের সব মানুষ জংলী, তারা কারো কথা শুনেনা। অনেক চেষ্টা করেছি দুই বংশের বিবাদ মীমাংসা করতে কিন্ত পারি নাই। তারা ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয়না।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, নাদিমের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। সে মারা গেছে ময়মনসিংহের হাসপাতালে। আমরা জানতাম নাদিম আহত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ভৈরব থানায় যোগদান করেছি মাত্র ৮ মাস আগে। যোগদান করেই জানতে পারি মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশ পরায়নভাবে শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদেরকে দমন করতে পারেনা। আইন শৃংখলার অবনতি ঘটালে পুলিশ কাউকে ছাড় দিবেনা বলে তিনি জানান।