১২ জুন, নিজস্ব  প্রতিনিধি:

ভৈরবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান মোঃ আবুল মনসুর এর পক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে  শিমুলকান্দি এলাকায় একটি আনন্দ মিষ্টিমুখ সম্প্রীতি  সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ূন কবিরের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এনিয়ে ভৈরবে চলছে তোলপাড়। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওসি, ইউএনও, ডিসি থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা ভালনা। তারা একটি সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করে। তার বক্তব্যে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

গত ৫ জুন ভৈরব উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগের নেতা আবুল মনসুর বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তার বিজয় আনন্দে শিমুল কান্দি ইউনিয়নের হাইস্কুলে গতকাল মঙ্গলবার এক মিষ্টিমুখ ও সম্প্রীতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসভায় বিজয়ী চেয়ারম্যান আবুল মনসুরসহ উপস্থিত ছিলেন তার সমর্থক ভৈরব পৌরসভার  মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু, আ,লীগ নেতা মির্জা সুলাইমান, রফিকুল ইসলাম, আল- আমিনসহ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সভায় স্থানীয় হাজার খানেক জনতা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আগানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ূনকে বক্তব্য দিতে বলা হলে তিনি বলেন বাংলাদেশের ওসি, ইউএনও, ডিসি থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত কেউ ভালনা। তারা একটি সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করে। তিনি বলেন আমি কাজ করতে গিয়ে এসব দেখতে পায়। এসময় তিনি বিজয়ী চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন, আপনি চেয়ারে বসার পর এসব দেখবেন।  তার বক্তব্যটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেউ ভিডিও করে ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়। এনিয়ে ভৈরবে চলছে আলোচনা সমালোচনা। বিষয়টিতে তোলপাড় ভৈরব। অনেকেই বলছেন প্রমান ছাড়া এধরনের বক্তব্য দেয়া সঠিক হয়নি। বিশেষ করে একটি সভায় হাজারও মানুষের সামনে এই বক্তব্য দিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের মানসন্মান ক্ষুন্ন করেছেন তিনি। প্রশাসনের সবাই খারাপ হতে পারেনা এমন মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

এখানে উল্লেখ্য চেয়ারম্যান হুমায়ূনের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার পরিষদের মেম্বারগন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে দুদকে এবং কিশোরগন্জ আদালতে চাল আত্মসাৎ ঘটনায় মামলা করেছে মেম্বারগন। এছাড়া টিআর, কাবিখার চাল গম বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে এই চেয়ারম্যান এমন অভিযোগের নিউজ যুগান্তরে একাধিকবার প্রকাশ হয়েছে। তার ইউনিয়নের মেম্বার আবদুল হামিদ ও জাহাংগীর আলম বলেন হুমায়ূন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজেই দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে। সে আবার প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে ভালনা বলে কিভাবে।

এবিষয়ে চেয়ারম্যান হুমায়ূনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বক্তব্যের সময় আমার মুখ ফসকে কথাটি বলে ফেলি  কিন্ত আমি ঢালাওভাবে সবাইকে খারাপ বলার ইচ্ছা ছিলনা। আমি বলতে চেয়েছি বিজয়ী চেয়ারম্যান আবুল মনসুর যেন বিষয়গুলি দেখেন। বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। 

এবিষয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান আবুল মনসুর বলেন, সভায় এধরনের বক্তব্য দেয়া তার ঠিক হয়নি। সভার শেষে আমি তাকে বকাবকি করেছি। ভবিষ্যতে কোন সভায় তাকে আর বক্তব্য দিতে দিবনা। পৌর মেয়র ইফতার হোসেন বেনু বলেন, হঠাৎ করে হুমায়ূন এধরনের বক্তব্য দেয়ায় আমরা বিব্রতবোধ করি। সে একটা পাগল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কিশোরগন্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদকে ফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি অবগত নয়। ভিডিওটি দেখার পর আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। ওই চেয়ারম্যান আমাকে সরাসরি একথা না বললেও বাংলাদেশের সকল ওসি, ইউএনও, ডিসিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরকে ঢালাওভাবে কথাগুলি বলেছে। বিষয়টি আমি ডিসি সাহেবকে জানাব। এর বাইরে আমার কিছুই করার নেই।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, ভিডিওটি আমি এখনও দেখেনি তবে শুনেছি তিনি অশালীন বাজে বক্তব্য দিয়েছেন । তিনি নাকি নিজেই দুর্নীতিবাজ, তার বিরুদ্ধে দুর্নীনিতির বিষয়ে আদালতে মামলা আছে, দুদকে অভিযোগ করেছে তার পরিষদের মেম্বারগন। যিনি নিজে দুর্নীতির সাথে জড়িত তিনি আবার অন্যের বিরুদ্ধে বলেন তারা ভালনা, এটা কেমন বক্তব্য।